পো পো/বেলা দে
পো পো
বেলা দে
স্বকন্যা আমি আমার স্বামী আর শাশুড়ীমা চলেছি চেন্নাই। এন.জি.পি স্টেশনে অপেক্ষায় রয়েছি ট্রেনের। ওয়েটিং রুমে শাশুড়ী মায়ের পাশে বসা এক বিদেশিনী মহিলার কোলে বছর খানেকের বাচ্চাটা খুব কাঁদছিল। শাশুড়ীমা মহিলার দিকে তাকিয়ে বলে "ওর বোধ করি খিদে পেয়েছে!" আমি ফিসফিসিয়ে বলি "আরে মা, ও তো বাংলা জানে না!" এবার মা আর একটু কাছে ঘেসে তাকে বলছে "উসকো খিদা পাতা হায়"! মহিলা না বুঝে অবুঝ হাসি হাসে। আমি ঈষৎ খুঁচিয়ে তাকে আস্তে আস্তে বললাম - "করছ টা কি ওগুলো তো ভারতীয় ভাষা ওরা ইংরেজ কোনটাই বোঝে না, তোমার কি ওর সাথে কথা না বললেই নয়?" সে আর বোঝাই কাকে! বাচ্চার কান্নার রোল আরও বেড়ে গেলে সহ্য করতে না পেরে প্রায় ধমকের সুরে বলেন "বাচ্চা ড্রিংক মিল্ক"! এবার মহিলা খানিক ধাতস্থ হয়ে সেখান থেকে উঠে চলে গেল। আসলে পুরোনো দিনের মানুষ আর কথা বলতেও একটু বেশি ভালবাসেন।
এরপর যথাসময়ে গাড়ি আসে। পরের সকালে চেন্নাই পৌঁছে একটা লজে উঠি। স্নান সেরে ফ্রেশ হয়ে চা বলব, দেখি শাশুড়ীমা নেই, উনি ঠিক খুঁজে নিয়েছেন গল্পের লোক। লজের মালিককে জিজ্ঞেস করছেন "আপকা ফাদার মাদার হায়?" আসলে সেখানেও চিন্তা ভাষাবিভ্রাটের, কিন্তু কথা না বলে দম বন্ধ হয় যে তাঁর, সুতরাং ওটা দিয়েই হল শুরু, পরের দিন আলাপ হয়ে গেল পাশের ঘরে তাঁরই বয়সি এক ভদ্রমহিলার সাথে, কলকাতা থেকে এসেছে বড় ছেলে তার বউ আর ছোট ছেলেকে নিয়ে, বড়ছেলের চিকিৎসায়, মহিলা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপকের স্ত্রী। ভোর হতে না হতেই থলে হাতে দুজনে চলেছে বাজারে, ছেলেরা সবাই তখন হাসপাতালে। লজে রান্নাঘর এবং রান্নার সব ব্যবস্থাই আছে, বাজার করে ফিরে রিকশাওয়ালার সাথে তাদের তুমুল ঝগড়া, একটা কুড়ি টাকার নোট দিয়েছে, চালক বলছে ওর পাঁচ টাকা খুচরো নেই, তারস্বরে চিৎকার করছে দুজনেই "নেহি দেগা নেহি দেগা ইতনাই ভাড়া হায়" রিকশওয়ালাও হাত নেড়ে পাল্টা জবাব ইন্ডারা বিন্ডারা ভাষায়, ছুটে বেরিয়ে এলাম আমি আর লজের মালিক, সব শুনে হেসে ফেলে মালিক বলে "মাম্মি উ লোগ পয়সা নেহি মাংতা, দেনা চাহাতা হ্যায়, উসকে পাস ৫/রুপি য়া নেহি হ্যায় ইসলিয়ে বলতা হ্যাঁয়।" চালকও হাসতে হাসতে গাড়ি নিয়ে চলে গেল। আমার স্বামী সব শুনে বলে "তোমাদের নিয়ে আর পারা যায় না, তবে তামিল ভাষায় দুটো শব্দ ওরা ভালো আয়ত্ব করেছে "ইঙ্গেবা" অর্থাৎ এখানে এসো, "পো পো" অর্থাৎ যাও যাও, সেটা কাজে লাগিয়েছে দুদিন বাদে।
ভরদুপুরে সবাই যখন মধ্যাহ্ন ঘুমে, এলো এক মাদ্রাজি মহিলা আম নিয়ে মাসিমা বসেছে আম কিনতে বিভিন্ন প্রজাতির আম একটা করে কাটছে আর টক বলে রেখে দিচ্ছে ডালিতে, এমন সময় ঘুম ভেঙে আমার শাশুড়ীমা তার পাশে বসে বলে "দিদি আমগুলি কেমন, আমিও কিনতাম", ওমনি মাসিমা রে রে করে ওঠে "না না দিদি কিনবেন না খুব টক" মাসিমার কথাও শেষ হল না ওমনি চটাস করে এক চড় কষে দিল আমার শাশুড়ীর ফর্সা গালে "ও মা আমি কি করলাম দিদি?" মাসিমা শাশুড়ীর নরম গাল হাতিয়ে দিতে দিতে বলে "না দিদি আপনি কিছু করেননি, আমার দোষে কষ্ট পেলেন" এর পরেও সে মহিলা ইন্ডারা বিন্ডারা বলে গালিগালাজ করে ডালি মাথায় তুলতেই মাসিমা গোল্লা গোল্লা চোখ পাকিয়ে বলে "পো পো"।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴