সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
27-October,2024 - Sunday ✍️ By- সুনীতা দত্ত 141

পেইং গেস্ট/সুনীতা দত্ত

পেইং গেস্ট
সুনীতা দত্ত 

রিয়ার মনে ছিল না যে জানালাটা খোলাই ছিল  কাল থেকে।  মাথার কাছের জানালাটা দিয়ে মুখে আলো এসে পড়তেই রিয়ার ঘুম ভাঙল। উঠে জানালা দিয়ে সূর্যের দিকে চোখ গেল যদিও জানালা দিয়ে গাছই বেশি দেখা যায়,  কিন্তু সূর্য ওই ঘরবাড়ি আর গাছ ভেদ করে বেশ উঁকি মারে। রিয়া প্রায় আধঘন্টা ধরে সূর্যের উঁকিঝুঁকি দেখতে থাকল। কিছুক্ষণ পর মা এসে পড়ায় ওর হুশ হল। মা চাটা দিয়েই চলে যাচ্ছিল। রিয়া হঠাৎ ডাক দিল -" মা"! সুজাতা দেবী অবাক হলেন।  সাধারণত রিয়া আজকাল ডাক দিয়ে বিশেষ কিছু বলে না। আজ ডাক দিতেই সুজাতা দেবী খুব খুশি হলেন। রিয়া বলে উঠল খুব ধীরে, 'মা, কাল তুমি বলছিলে না আমাদের পাশের ঘরটাতে কে যেন এসেছে?  উনি কে গো? মেয়ের কথায় খুশি হয়ে সুজাতা দেবী বললেন, ওর নাম কিংশুক রায়। এসডিও অফিসে কি যেন একটা চাকরি করে। বেশ কয়েকদিন হল এখানে এসেছে,  পেইংগেস্ট আমাদের। হ্যাঁ রে  রিয়া,  তুই কি আলাপ করবি , ওকে আসতে বলব? হঠাৎ করে রিয়া কেমন যেন সাজিয়ে উঠল- 'না , তোমায় কি আমি বলেছি আমি কথা বলব?' মা আর কিছু বললেন না।  রিয়া হঠাৎ করে  মাঝে মাঝে এমনই করে,  কিন্তু আজ একটু অন্যরকম মনে হল  সুজাতা দেবীর!
সেদিনের মতো রিয়াকে আর বিশেষ কিছু বলেননি সুজাতা দেবী। রিয়া ও কেমন যেন চুপ মেরে গিয়েছিল। একদিন রিয়া ওদের সামনের বাগানে বসেছিল একা। পাশের গেস্টরুম থেকে অনেকক্ষণ ধরে মাউথ অর্গান এর সুর ভেসে আসছিল। হঠাৎ করে রিয়া ওই ঘরে গিয়ে কিংশুকের মুখ থেকে অর্গান টা নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিল।  কিংশুক কিছু বলার আগেই রিয়া বলে উঠল- 'কখন থেকে আপনার ওই অর্গান আমায় ডিস্টার্ব করছে।' কিংশুক বলে উঠল, 'তাই বলে আপনার ওটা ফেলে দেওয়াটা ঠিক হলো না।' রিয়া কিছু না বলে বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছিল,  ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল-'বেশ করেছি আমায় ডিস্টার্ব করলে আবার ফেলে দেব।' 
        
কিছুদিন পর রিয়াকে নিয়ে সুজাতা দেবী বাইরে থেকে বাড়িতে ঢুকছিলেন। কিংশুক তখন বাইরে বেরোচ্ছিল। সামনাসামনি দেখা হতেই সুজাতা দেবী বললেন-'কিংশুক তুমি কি আজ বিকেলে একবার আমার সাথে দেখা করতে পারবে?' এসব কথার মাঝে রিয়া কাউকেই খেয়াল না করে ঘরের দিকে চলে গেল। 'আচ্ছা মাসিমা আপনার মেয়ে আমার সাথে এমন ব্যবহার কেন করে?'-কিংশুক প্রশ্ন করল সুজাতা দেবীকে। সুজাতা দেবী বললেন 'তুমি ঐদিন দেখলে না ওর বাবার সাথে ও প্রায় কথাই বলে না,  আর তুমি বলছ যে তোমার সাথে এমন ব্যবহার কেন করে?' 'হ্যাঁ মাসিমা, এটাই তো জানতে চাইছিলাম ও এমন করে কেন? দেখলে তো অসুস্থ মনে হয় না?' কিংশুক সুজাতা দেবীকে প্রশ্ন করে। 'সেটাই তোমায় জানাতে চাই,  কারণ তুমি হয়তো আমাদের বাড়িতে আরো কিছুদিন থাকবে, কাজেই তোমার জানা দরকার যাতে ওর ব্যবহারে তোমার খারাপ না লাগে।' সুজাতা দেবী বললেন। 
বিকেলে বিশেষ করে মাসিমা ডেকেছেন বলেই  তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরল। চা খেতে খেতে সুজাতা দেবী বললেন-'কিংশুক তুমি যা জানতে চাও প্রথমে তাই বলি। কিছুদিন আগে রিয়ার সাথে একটা ঘটনা ঘটেছে, যা হয়তো শুনলে তুমি অবাক হবে। রিয়া প্রশান্ত নামে একটা ছেলেকে ভালোবাসতো। হয়তো ওদের বিয়েটাও হত কিন্তু.......... ওদের মেলামেশা ছিল সেই কলেজের প্রথম বছর থেকে। প্রশান্ত ইঞ্জিনিয়ারিং পাস । একটা বিয়ে বাড়িতে ওদের আলাপ। প্রায় বছর খানেক আগে রিয়ার বিএ ফাইনাল। সেই সময় হঠাৎ করে ওরা একদিন বাইরে ঘুরতে গেল।  প্রশান্তর বাইকে। আমাকে বলেই গিয়েছিল রিয়া। অনেক রাত হতেও ওরা আসছে না দেখে ওর বাবাকে ব্যাপারটা জানালাম।। জানো কিংশুক রিয়া ফিরলো কিন্তু অনেক রাতে পুলিশের গাড়িতে মাথায় ব্যান্ডেজ। ওরা ফিরছিল একটা অচেনা রাস্তা দিয়ে , হঠাৎ প্রশান্তর মাথায় একটা ঢিল লাগে। বাইক থেকে দুজনে পড়ে যায়।  তারপর কয়েকজন মিলে প্রশান্তকে মারধর করে আর রিয়াকে একটা ঘরে বেঁধে নিয়ে কয়েকজন মিলে.........'
কিংশুক বলল- 'মাসিমা,  তারপর থেকে  এইরকম মনের অবস্থা সেটা বুঝলাম কিন্তু প্রশান্ত সে এখন কোথায়? 'সুজাতা দেবীর চোখের কোন ভরে উঠেছিল কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন - 'প্রশান্ত বেশ ভালো ছেলে কিন্তু ওর ব্যবহার শেষ পর্যন্ত এমন হবে তা বোধ হয় রিয়া আঁচ করতে পারেনি।  পুলিশ সেই সব ছেলেগুলোর খোঁজ করছিল,  কিন্তু প্রশান্ত আর এল না। ওর বাবা গিয়ে খোঁজ করল কিন্তু প্রশান্তর বাবা-মা রিয়ার বাবাকে অপমান করেই ক্ষান্ত হয়নি, প্রশান্ত যে কোনদিন রিয়াকে বিয়ে তো দূরের কথা মেলামেশাও করবে না সেটা ভালো করে বুঝিয়ে দিয়েছিল। এরপর রিয়া ফোন করেছিল প্রশান্তকে কয়েকবার প্রথমে কথা না বললেও পরে বুঝিয়ে দিয়েছিল  সে রিয়াকে বিয়ে করতে পারবে না।' কিংশুক সব শুনছিল। কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকার পর সে বলল - 'মাসিমা রিয়াকে স্বাভাবিক করতে হবে এতে আমি আপনাদের সাহায্য করতে চাই।'
'কিন্তু কিংশুক, রিয়া প্রশান্তকে ভালোবেসেছিল তো তাই ওই ঘটনার পর থেকে কোন ছেলেকে ও সহ্য করতে পারে না, বাবার সাথেও বিশেষ কথা বলে না তাই হয়তো ও তোমার সাথেও ভালো ব্যবহার করবে না। সারাদিন বই নিয়ে বসে থাকে ফাইনাল ইয়ারে ওর অনার্সটা আর ছিল না তাই মনটা একদম ভেঙে গেছে,  ডাক্তার বলেছে আবার পড়াশুনা শুরু করলে কিছুটা স্বাভাবিক হবে ও, তাই আমরা ওকে পড়াশোনা করানোর দিকেই বেশি আগ্রহী।' সেদিন কিংশুক রিয়ার সম্পর্কে আরো অনেক কিছু জানল, রিয়া বেশ ভালো ছাত্রী ওর ফিলোসফিতে অনার্স ছিল, খুব সুন্দর ছবিও আঁকে, মাঝে মাঝে কবিতাও লিখতো। এখন প্রায় কিছুই করেনা। কিংশুক কয়েকদিন অনেক ভেবে মনে মনে ঠিক করে  নিল রিয়াকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতেই হবে। সে নিজে ফিলোসফিতে এমএ পাস করে চাকরি করতে এসেছে,  অফিস ছাড়া ওরা বিশেষ কোনো কাজও নেই। তাই সুজাতা দেবীকে রাজি করিয়ে ও রিয়াকে পড়ানোর  দায়িত্বটা নিল।

পরপর কয়েকদিন রিয়া কিংশুক কে একদম সহ্য করতে পারেনি, প্রায় কথা না বলার মতোই অবস্থা। কিন্তু কিংশুক একটু একটু করে সফল হয়েছে।  রিয়াও পরীক্ষা দিয়েছে নির্দিষ্ট সময়ে। আজ রেজাল্ট।  বিকেলের দিকে  রিয়া কিংশুক এর ঘরে এল। কিংশুক শুনেছে রিয়ার রেজাল্ট অনেক ভালো ফল করেছে সে। কিংশুক রিয়ার উদ্দেশ্যে বলল, " অভিনন্দন"। রিয়ার অভিব্যক্তির কোন পরিবর্তন হল না,  একদৃষ্টে জানালা দিয়ে বাইরে পশ্চিমে হেলে পড়া সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকল।

বেশ কিছুদিন হল রিয়া অনুভব করছে সে মনে মনে আর আগের মতো অস্বস্তি অনুভব করে না। বিশেষ করে কিংশুক এলে ওর বেশ ভালই লাগে যদিও পড়াশোনা ছাড়া একদিনই ভালো করে কথা বলেছে। কিংশুক এর একটা কথা মনে রেখেছে রিয়া ও বলেছিল - 'দেখো রিয়া, নিজেকে একটা কথায় বিশ্বাস করাবে তোমার দ্বারা কোন অন্যায় হয়নি। যারা এর জন্য দায়ী তাদের তুমি চিনতে পারোনি। কিন্তু তাই বলে সবার মধ্যে তারা নেই অন্তত এইটুকু বিশ্বাস কর!' 
রিয়ার এই পরিবর্তন সুজাতা দেবীও লক্ষ্য করেছেন,  আজকাল রিয়া বাবার সাথে কথা বলে। আগের মত হয়ত ততটা উজ্জ্বল নয় সে কিন্তু দুর্ঘটনা ওকে শিখিয়েছে,  পরিস্থিতি মানুষকে বদলায়, গভীর ভাবে বদলায় ! আজকাল এমএ তে ভর্তি হয়েছে রিয়া। পড়াশোনাও করছে। সুজাতা দেবী মনে মনে কিংশুক কে  বেশ পছন্দ করেন। রিয়ার বাবাকে ওর বিষয়ে বলেওছেন কিন্তু রিয়া এসব জানেনা। কিংশুক যে রিয়াকে  মনে মনে বেশ পছন্দ করে তা সুজাতা দেবী বেশ বোঝেন কিন্তু সে কোন কথাই বলেনি কখনো অবশ্য তার হয়ে বলার কেউ নেই । বাবা মা অনেকদিন আগেই মারা গেছেন।  এতদিন দাদার কাছে থেকে পড়া শেষ করেছে এবং তারপরেই চাকরি সূত্রে এখানে আসা। সুজাতা দেবী বলবো বলবো করেও এখনো কিছু বলে উঠতে পারেননি। 

একদিন বাগানে বসে কিংশুক রিয়া ও সুজাতা দেবী বিকেলে চা খাচ্ছিলেন। তিনজন অনেক ধরনের গল্পই করছিল। তার মাঝেই কিংশুক রিয়ার সামনেই সুজাতা দেবীকে বলল - ' মাসিমা, আপনার সামনেই কথাটা প্রথমে রিয়াকে বলি, রিয়া আমি যদি তোমায় বিয়ে করতে চাই তুমি কি অমত করবে?' হঠাৎ করে এই কথার জন্য রিয়া তৈরি ছিল না।  কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে সে ঘরে চলে গেল । সুজাতা দেবী বললেন-'  যাও বাবা আজ ওর মনের কথা জেনে নাও,  না হলে হয়তো ও আবার......' 
কিংশুক ঘরে এসে দেখে রিয়া কাঁদছে। ' কি হলো রিয়া, আমি কি এমন কিছু.......'রিয়া মুখ তুলে বলল আমার বিষয়ে সব কিছু জানার পরও আপনি আমায় বিয়ে করতে চান! কেন?' কিংশুক রিয়ার চোখের জল মুছে দিয়ে বলল - 'আমি প্রশান্ত নই রিয়া, আর বিয়ে কেন করব ? সোজা উত্তর তোমায় ভালোবাসি বলে!' রিয়া বলল - কিন্তু আপনি সমাজের কথা ভাববেন না তারা আমার সাথে সাথে আপনার.......'রিয়াকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে কিংশুক বলল - ' পৃথিবীতে সবাই অন্যের কথায় কান দেয় না যারা দেয় তারা ভুল করে,  সত্যিটাকে না দেখেই।' কিংশুক বাইরে বেরোতে গিয়ে ঘুরে দাড়ালো। ' রিয়া আমি অপেক্ষা করব তোমার জন্য' ........... বলেই বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছিল কিংশুক। ' আমিও অপেক্ষা করে রইলাম তোমার ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য পেইং গেস্ট থেকে অন্য কেউ হয়ে...........
কিংশুক ঘুরে দাঁড়িয়ে রিয়ার দিকে তাকাল রিয়ার চোখে জল, আজ আর জল মুছে দেবে না সে, পড়ুক ওই জল.…..…. সূর্যটা তখন পশ্চিমে, আবছা আলো ওদের দুজনের মাঝে, বোধহয় কাল সকালের সূর্যোদয়ের জন্য ।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri