পৃথিবীর অসুখ/মাল্যবান মিত্র
পৃথিবীর অসুখ
মাল্যবান মিত্র
(১)
অসুখ
(ক)
রাতে কুয়াশা নামে,
ছাদের কিনারায় বসে থাকে একটা পাখি—
ওর ডানায় শহরের সমস্ত ক্লান্তি।
(খ)
পৃথিবীর জ্বর হয়েছে আজকাল,
বুক ঠেলে উঠে আসে একটা খুসখুসে কাশি,
রাস্তাগুলো নিঃশব্দে ঘোরে
চেম্বার থেকে চেম্বারে।
(গ)
আমার জানালার ধারে রাখা কফির কাপ ঠান্ডা,
একটা অ্যাম্বুলেন্স শব্দ করে থেমে যায়
আর কিছুই ঘটে না।
(ঘ)
তিন দিন হলো সূর্য ডাকে না আমাকে,
চাঁদের গায়ে লেগে আছে
পুরোনো গজপট্টির গন্ধ,
রাতগুলোতে শুধু শোনা যায়—
জলের মতো হাঁটার শব্দ,
মনে হয় কে যেন খুব চেনা,
আবার অচেনাও।
(ঙ)
রোগের নাম কেউ জানে না,
ডাক্তার বলে—
“ভেতরের কথা বলো,
ফুসফুসে জমে গেছে সমস্ত নীরবতা।”
আমি কিছু বলি না।
একটা গাছের দিকে তাকিয়ে থাকি
যেটা প্রতিদিন মরার ভান করে বেঁচে থাকে।
(২)
প্রেসক্রিপশন
আজকাল আয়নায় মুখ দেখা যায় না,
শুধু কুয়াশার মত একটা অবয়ব ভাসে,
যেন স্মৃতি নিজেই এখন অসুস্থ।
পোস্টম্যান চিঠি দেয় না অনেকদিন,
তবুও প্রতিদিন খামের গন্ধ পাই,
যেন কেউ নিঃশব্দে লিখে যাচ্ছে—
“পৃথিবী, তুই বিশ্রাম নে।”
ডাক্তারের টেবিলে রাখা এক পুরনো স্টেথোস্কোপ
পৃথিবীর নাভিতে চেপে শোনে ধুকধুকানি,
নোট করে—
“রাত তিনটেয় দুঃস্বপ্ন বেড়ে যায়।"
ফার্মেসির ছেলেটা বলে,
"চোখে ঘুম নয়, জমে আছে বিষণ্নতা,"
আমি দুটো নীল ক্যাপসুল কিনি
আর হাঁটতে হাঁটতে হারিয়ে যাই এক ধ্বংসপ্রায় পার্কে।
সেখানে একটা দোলনায় বসে
এক শিশু মাটি খায়—
তার চোখে নেই ভয়,
শুধু এক অদ্ভুত নিশ্চিততা,
যেন সে জানে পৃথিবীর কোনো চিকিৎসা নেই—
শুধু গল্প বলা যায়।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴