সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
20-August,2023 - Sunday ✍️ By- চন্দন খাঁ 377

পুনর্জন্ম/চন্দন খাঁ

পুনর্জন্ম
চন্দন খাঁ
___________

এক।।

গতকাল খবরের কাগজের পাঁচ নম্বর পৃষ্ঠায় প্রকাশিত ছোট্ট একটি খবর মহেন্দ্রবাবুকে খুবই বিচলিত করে তুলেছে --  যে স্কুলে তিনি টানা  পঁচিশ বছর প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব সামলেছেন সেই স্কুলটি থেকে ছাত্রছাত্রীরা অন্য স্কুলে চলে যাচ্ছে। কেননা এই স্কুলে পড়াশোনার মান নেমে গেছে, ভালো শিক্ষক নেই, বহু শিক্ষকের পদ শূন্য। এছাড়া বর্তমান প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে গ্রামবাসীদের হাজার অভিযোগ। গ্রামবাসীরা এতটাই তাঁর উপর খুব্ধ যে, কলার ধরে গালাগাল ও শারীরিক হেনস্থা পর্যন্ত হয়ে গেছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে গ্রামবাসীরা বলেছে -- মহেন্দ্রবাবু স্কুলটিকে নিজের মায়ের মতো ভালবেসে খ্যাতির শীর্ষে নিয়ে গিয়েছিলেন। তখন পড়াশোনা, খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চায় স্কুলটি এতটাই উন্নত ছিল যে, কাছাকাছি শহরের ছাত্র-ছাত্রীরাও এখানে পড়তে আসতো। আর এখন এই হেডমাস্টার পার্টি পলিটিক্স করে, আর নিজের ক্ষমতা দেখাতে গিয়ে সব শেষ করে দিয়েছেন। সহকর্মীদের সঙ্গে,  শিক্ষা কর্মীদের সঙ্গে এবং অভিভাবকদের সঙ্গে তাঁর ব্যবহার অনেকটা প্রজা ও জমিদারের মত। ফলে ভালো শিক্ষকেরাও তাঁর ব্যবহারে অতিষ্ঠ  হয়ে অন্য স্কুলে ট্রান্সফার নিয়ে চলে গেছেন। সাইন্সে ম্যাথ ও ফিজিক্সের টিচার নেই। এছাড়া বাংলা, ইতিহাস ও ভূগোলেরও শিক্ষক নেই। এমনকি গেস্ট টিচাররাও হেড স্যারের ব্যবহারে ক্ষুব্ধ হয়ে অন্য স্কুলে চলে গেছেন। কথায় কথায় তিনি তাঁদের বলেন --  না পোষালে চলে যান, ভাত ছড়ালে কাকের অভাব হয় না!

দুই।।

মহেন্দ্রবাবুর মনে পড়ে 2013 সালের 22 আগস্টের কথা -- সেদিন ছিল তাঁর ফেয়ারওয়েলর দিন। গ্রামের কোনো মানুষ সেদিন ঘরে ছিল না। সবাই কেঁদেছিল তাঁর জন্য। শক্ত মনের মহেন্দ্র বাবুর চোখের বৃষ্টি আর বাইরের বৃষ্টি সেদিন একাকার হয়ে গিয়েছিল।

তিন।।

মহেন্দ্রবাবু এখন দিল্লিতে থাকেন একমাত্র পুত্র সুকল্যাণের কাছে। সুকল‍্যাণ জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের  ইতিহাসের অধ্যাপক হিসেবে সুপরিচিত নাম। সন্ধ্যায় মহেন্দ্রবাবু পুত্রের কাছে সবকিছু জানিয়ে জানতে চাইলেন -- এখন বলতো আমার কি করা উচিত ?
-- তোমার ওখানে যাওয়া উচিত বাবা।
-- আমারও তাই মনে হচ্ছে। কিন্তু ---
-- কোনো কিন্তু নয় বাবা। আমিও তোমার সঙ্গে যাব।
-- তুই কি ছুটি পাবি?
-- ও আমি ম্যানেজ করে নেব। দেখো বাবা সেভেনে পড়ার সময় মা যখন চিরকালের জন্য চলে গেল তখন ওই স্কুলেই টুয়েলভ পর্যন্ত পড়েছি। সেই সময় স্কুলের সব স‍্যার ও দিদিমনিরাই আমাকে পড়িয়েছেন, খাইয়েছেন, মানুষ করেছেন, দাঁড়াও তোমার বৌমাকে একটা ফোন করি!

সুকল‍্যাণের শ্রী মনোরমা এখন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলার  অধ‍্যাপিকা। মনোরমা ক্লাস ওয়ান থেকে টুয়েলভ পর্যন্ত সুকল‍্যাণের সহপাঠিণী। মনোরোমার বাবা সুবিমলবাবু মহেন্দ্রবাবুর স্কুলের বাংলার শিক্ষক ছিলেন। আর মা সোমাশ্রীদেবী ছিলেন ওই স্কুলের সংস্কৃতের শিক্ষিকা। সুকল‍্যাণ মাতৃহারা হবার পর বুক দিয়ে সব ঝড় ঝাপটা থেকে আগলে রেখেছিলেন তাঁরা।
-- হ‍্যালো মনোরমা!
-- বলো। কেমন আছো? বাবা কেমন আছেন?
-- সবাই ভালো আছি। আমাদের স্কুলের ---
-- খবরটা দেখেছি।
-- আমি আর বাবা পরশু ফ্ল‍্যাইটের টিকিট কেটেছি।
-- আমিও তাহলে আসছি।
-- এই না হলে আমার বৌ!
-- দেখো, আজ আমরা যা কিছু হয়েছি আমাদের স্কুলের জন‍্য হয়েছি। এ ঋণ ---

চার।।

স্কুলে তিন জনে আসতেই মুহূর্তের মধ্যে গোটা গ্রাম স্কুল গ্রাউন্ডে হাজির হলো। মরা গাছে হঠাৎ ফুল ধরলে যেমন চারদিকটা চকিতে আলোয় ভরে ওঠে তেমনি আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে গোটা স্কুলটা যেন হেসে উঠলো। সবাই মহেন্দ্রবাবুকে কাছে পেয়ে যেন ঈশ্বরকে কাছে পেয়েছেন। সবার একটাই বক্তব্য -- স্যার আমরা আপনাকে চাই, আপনি যা বলবেন তার জন্য জীবন দিতে রাজি আছি ; আপনাকে আর আমরা যেতে দেব না। বাবার জন্য খুব গর্ব হচ্ছিল সুকল‍্যাণের। মনোরমার চোখ দুটোও আনন্দে চিক চিক করে উঠলো। মহেন্দ্রবাবু কাজের মানুষ। পরের দিনই চারটি মিটিং করলেন ---
প্রথম মিটিং : বর্তমান হেডস‍্যারের সঙ্গে।
দ্বিতীয় মিটিং : অন‍্যান‍্য শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের সঙ্গে।
তৃতীয় মিটিং : গ্রামবাসী ও প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে।
চতুর্থ মিটিং : বর্তমান ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে।

পাঁচ।।

বতর্মান হেডস্যার তাঁর সমস্ত ভুল স্বীকার করে বললেন -- স্যার আপনাকে আমি পাশে চাই, আমি আমার ভুলের প্রায়শ্চিত্ত‍্য করতে চাই। গ্রামবাসীরা জানালো -- স্কুলটাকে আমরা রাজনীতি মুক্ত রাখতে চাই। আমাদের নেতা মন্ত্রী দেখা হয়ে গেছে। আমরা আপনার মত শিক্ষক চাই। প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা বলল -- যেসব বিষয়ে স্কুলে শিক্ষক নেই, সেই সব বিষয়ে বহু যোগ্য প্রাক্তন ছাত্র বসে আছে। দীর্ঘদিন এস এসসি নেই।ফলে তাদেরও কোনো কাজ নেই। আপনি ডাকলে সবাই আনন্দে হাজির হবে। বর্তমান ছাত্ররা বলল -- স্যার আমাদের মাটির বিল্ডিংটা সারিয়ে দিন, গ্রাউন্ডে আর ফুটবল নামে না, আমরা বাবা কাকাদের কাছে শুনেছি --  আপনার সময় স্কুলে গান, কবিতা, নাটক, নৃত্যনাট‍্যে মুখর থাকত। আমরাও এসব শিখতে চাই ---

ছয়।।

তিন মাসের মধ্যে স্কুলটার চেহারা পাল্টে গেল। আগে শিক্ষকেরা তিনটে বাজলেই ঘড়ি দেখতে শুরু করতন। এখন সন্ধ্যা ছটা পর্যন্ত তাঁরা কেউ ক্লাসে ব্যস্ত, কেউ ল্যাবে, কেউবা খেলার মাঠে। কারো যেন বাড়ি যাবার কোন তাড়া  নেই।সুকল্যাণ ও মনোরমা চোদ্দদিন টানা ক্লাস করলো। তারপর তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে গেল। কিন্তু কথা দিয়ে গেল প্রতিমাসে তারা ক্লাস নিতে আসবে। মহেন্দ্রবাবুর যাওয়া হল না। স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকরা সবাই বলল -- জানি স্যারের বয়স হয়েছে। আমরা স্যারকে বুক দিয়ে আগলে রাখবো, ঠিকমতো ওষুধ খাওয়াবো ; ডাক্তার দেখাবো।কিন্তু স্যারকে ছাড়তে পারবো না।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri