সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon

পাহাড়ের ডাক/সুব্রত ভট্টাচার্য

পাহাড়ের ডাক
সুব্রত ভট্টাচার্য 

প্রিয় প্রণবেশ,
                     তুই লিখেছিস, কেমন আছি আমরা? কোথাও ঘুরতে গিয়েছিলাম নাকি? বেশ কিছু ছবি দেখেছিস আমাদের। হ্যাঁ ঠিকই দেখেছিস। দুদিনের জন্য একটু পাহাড় ছুঁয়ে এলাম আমরা। আসলে পাহাড় বেশ ভালো লাগে আমার। আর গরমের দিনে শীতের কাপড় জামা নিয়ে পাহাড় ছুঁয়ে আসতে কার না ভালো লাগে। এবার এপ্রিলে গরম পড়তেই একটু ঠাণ্ডার দেশের খোঁজ খবর করছিলাম। হঠাৎই ঠিক হয়ে গেল সবকিছু। আমাদের গন্তব্য লাভা। কালিম্পং জেলার লাভা, লোলেগাঁও, রিশভ এর কথা বেশ শুনেছি। কিন্তু যাওয়া হয়নি। পরিবারের কয়েকজন মিলে যাওয়া ঠিক হল। তাতে ছোট বড় মাঝারি সদস্যরা আছে। ঠিক করা হল বাহন আর হোম স্টে। 

      আগের দিন জিনিসপত্র গুছিয়ে পরদিন রওনা।  সকাল নটায় আমাদের যাত্রা শুরু। অনেকদিন বাইরে যাওয়া হয় না তাই সবাই বেশ চনমনে। বাড়ি থেকে হালকা টিফিন করে বের হয়েছি। রাস্তায় সারা হবে প্রাতঃরাশ। শিলিগুড়ি শহর ছেড়ে সেভক পার হয়ে মাল বাজারে গাড়ি দাঁড়াল। সারা হল প্রাতঃরাশ। 
    মালবাজার থেকে ডামডিম, গরুবাথান  হয়ে আমাদের গাড়ি ছুটছে পাহাড়ের দিকে। কোথাও দুপাশে ফাঁকা জমি, কোথাও চা বাগান, কোথাও বা লোকালয়। 
    গরুবাথানের পরই বেশ কটা চা বাগান। পাহাড়ের গায়ে চা গাছের সারি। চমৎকার দৃশ্য। বাহন থামিয়ে কয়েকটা ছবি তোলা হল। সমতল ছেড়ে গাড়ি এখন পাহাড়ের দিকে ছুটছে। গরমটা কমেনি তেমন। আরও খানিকটা চলার পর উঁচু পাহাড়ি রাস্তা শুরু হল। গাড়িতে গান চলছে, আমরা গলা মেলাচ্ছি মাঝে মাঝে। ছোট এবং বড়দের মাঝে গানের পছন্দে বিস্তর ফারাক তবুও বোঝাবুঝির মাঝেই চলছে ব্যপারটা। রাস্তা বেশ ভালো। আমাদের পাশাপাশি ছুটে যাচ্ছে আরও কিছু ছোট গাড়ি, বাস, ছোট ট্রাক। উল্টো দিক থেকেও নেমে আসছে ছোট বড় গাড়ি। এ রাস্তায় এখন অনেক গাড়ি চলে কালিম্পং বা গ্যাংটক পর্যন্ত। পাহাড়ি রাস্তায় চালকদের দক্ষতা এবং অন্যদের প্রতি সহযোগিতা বেশ চোখে পড়ার মতো। 
    রাস্তার বাঁদিকে বা ডান দিকে তাকালে দেখা যায় নীচের রাস্তা যা আমরা ফেলে এসেছি কিছুক্ষণ আগে। আঁকাবাঁকা পথে চড়াই উৎরাই এ শরীরের অসুবিধাও টের পাওয়া গেল। সহযাত্রী দুজনের মুখ বেশ গম্ভীর, শারীরিক অসুবিধার আভাস। গাড়ি দাঁড়াল, একটু বিশ্রাম নেওয়া হল, তারপর আবার চলা। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা লাভায় এসে পৌঁছালাম। 
   আমাদের দলের জন্য তিনখানা ঘর বরাদ্দ। দোতালায় একখানা ঘর আমাদের। ঘরগুলো পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। কাচের জানালা দিয়ে দেখা যায় সামনের দিকের রাস্তা। পেছনের জানালা দিয়ে দেখা যায় নেমে যাওয়া রাস্তা, পাইন গাছের সারি আর সবুজ পাহাড়। 
হাত মুখ ধুয়ে বিশ্রাম নিলাম সকলে। পাহাড়ি রাস্তার ক্লান্তি কমছে ধীরে ধীরে। দুপুরের খাবারের ডাক আসছে বার বার। একটু সময় নিয়ে আমরা দুপুরের খাবার সারলাম। বেশ যত্ন করে খাওয়ালেন মালিক দম্পতি। তারপর আবার খানিকটা বিশ্রাম। শেষ বিকেলে শীতের কাপড় জামা পরে নেমে পড়লাম ঘর থেকে। লোকালয়ের আশেপাশে ঘুরে নিলাম। ঠাণ্ডাটা বাড়ছে আস্তে আস্তে। সাথে হাওয়া। গাছপালা থেকে একটা শব্দ আসছে। বেশ মজার পরিবেশ। খানিকক্ষণ ঘুরে তারপর হোম স্টেতে ফিরে চায়ের আড্ডা হল। রাতের খাবার পরিবেশন হল সাড়ে নটায়। বাইরে বেশ হাওয়া চলছে। আমাদের এবং আশেপাশের হোটেলগুলিতে কয়েকটা বড় পতাকা উড়ছে। বারান্দায় বের হলেই তার শব্দ শোনা যায়। রাতের খাওয়া দাওয়া সেরে আমরা শুয়ে পড়লাম।
পরদিন সকালে বেশ তাড়াতাড়ি উঠে পড়েছি। চা খেয়ে শীতের কাপড় জামা পরে তৈরী সকালবেলায় পাহাড় দেখে নেবার জন্য। হোম স্টের খুব কাছেই “নেওড়া ভ্যালী ন্যাশনাল পার্ক” এর গেট। এখান থেকে রাস্তা জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে চলে গেছে কোলাখাম। কিছু কিছু পর্যটক গাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন বনের ভেতরে। রক্ষীদের অনুমতি নিয়ে আমরা সামান্য ভেতরে প্রবেশ করলাম।
চারদিক সবুজ। পাহাড়ের গায়ে বিভিন্ন গাছ গাছালি, বুনোফুল। অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য। বেশ কিছু ছবি তোলা হল। বিভিন্ন রকম পাখির ডাক শোনা যাচ্ছে। দু একজন পর্যটক বাইনোকুলার দিয়ে বিভিন্ন পাখি দেখছেন। এখান থেকে সুন্দর দেখা যায় নীচে সমতলে ফিরে যাবার রাস্তা আর উল্টোদিকে পাহাড়ের ওপর লাভার  ব্যাস্ত এলাকা। বেশ কিছু ছবি তুলে হাঁটা পথে আমরা গেলাম বুদ্ধ মন্দির দেখে আসতে। পাহাড়ের উপরে বেশ বড় শান্ত মন্দির। ছোট ছোট ছেলেদের শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে ধর্মীয় প্রার্থনা করতে দেখা গেল। মন্দিরের রাস্তার আশে পাশে বিভিন্ন ফুলের গাছ। 
     আমরা হোমস্টেতে ফিরে এলাম। জিনিষপত্র গুছিয়ে তৈরি হয়ে আমাদের আবার ফিরতে হবে। তৈরি হতেই আমাদের প্রাতঃরাশের ডাক পড়ল। প্রাতঃরাশ শেষ করে বেড়িয়ে পড়লাম। এবারে আমাদের দেখবার ইচ্ছে লাভা সেলফি পয়েন্ট। প্রায় এক কিলোমিটার ওপরে উঠেই সেলফি পয়েন্ট।
সেখানে পৌঁছে  অনেক পর্যটককে দেখা গেল। অনেকেই ছবি তুলতে ব্যস্ত। পাহাড়ের ওপরেই পাইন গাছের সারি। আশেপাশের অঞ্চলটা সুন্দর দেখতে পাওয়া যায় এখান থেকে। বেশ কিছু ছবি তোলা হল।
এবার ফিরে আসার পালা। আবার সেই পাহাড়ি রাস্তায় আমাদের ফেরা শুরু হল। মাঝরাস্তায় একবার বিশ্রাম নিয়ে শেষ বিকেলে আমরা শিলিগুড়ি ফিরলাম। ফেরার সময় ক্লান্তি কিছুটা কম মনে হল। 
   প্রণবেশ  সময় করে একবার চলে আসিস সপরিবারে। কোনও এক পাহাড়ের ঠিকানায় ঘুরে আসব কদিন।  
                              ইতি..............

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri