সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
11-June,2023 - Sunday ✍️ By- অতনু চন্দ 716

পাহাড় ছুঁয়ে আসার গল্প-কথা/অতনু চন্দ

পাহাড় ছুঁয়ে আসার গল্প-কথা
অতনু চন্দ
-------------------------------------
                 
আমরা যারা উত্তরবঙ্গে বসবাস করি তাদের জন্য একটা কথা বিশেষ ভাবে প্রযোজ্য, "উঠল বাই তো চলো পাহাড়ে যাই"! একটি ছুটির দিনে ঘুম থেকে উঠে কেন যেন বাড়ির সকলের মনে ইচ্ছে হল যে কাছাকাছি কোন পাহাড়ি জায়গা থেকে একদিনের মধ্যে ঘুরে মনটা কিছুটা পরিবর্তন করে আসি। ভাবনার সাথে সাথে আমরা টুকিটাকি গুছিয়ে নিতে নিতে সুভাষকে ফোন করে বললাম,আমরা পাহাড়ে ঘুরতে যাব তাই তৈরী হয়ে এস। পাড়ার জানাশোনা ভদ্র ও সল্পভাষি ছেলেটা অনেকদিন থেকে পাহাড়ে নিজের ছোট্ট সাজানো গাড়িটি নিজেই চালিয়ে রুজি রোজগার করে। কোথাও গেলে আমরা ওকেই বলি কারন বেশ কিছুদিন পাহাড়ে গাড়ি চলানোর অভিজ্ঞতায় ও পাহাড়কে নিজের হাতের তালুর মতন চেনে। গাড়ি চালানোর সব রকম দখল ওর আছে।
আমরা তৈরী হতে হতে সুভাষ গাড়ি নিয়ে বাড়িতে পৌঁছে গেল, গাড়িতে ওঠার সময় সুভাষকে বললাম, আজ আমরা সারাদিন উদ্দেশ্যবিহীন ভাবে পাহাড়ে ঘুরব তাই তুমি যেখানে নিয়ে যাবে সেখানেই যাব ভাই।
 গাড়ি চলতে আরম্ভ করল সেবকের দিকে। কি সুন্দর পিচ বাঁধানো রাস্তা তাই সকাল সকাল গাড়ির চাকার শব্দ ছাড়া আর কিছুই যেন শুনতে পাচ্ছি না! তারপর সেবকের পাহাড়ে ঢোকার আগে ছোট্ট জঙ্গলটায় যখন গিয়ে পরলাম তখন যেন মনটা খুসীতে ভরে গেল। জঙ্গলটায় ইদানিং যদিও গাছপালার ঘনত্ব হারিয়েছে তবুও এখনো খুব সুন্দর একটা গা ছমছমে ভাব আছে! জঙ্গলে ও রাস্তায় বিক্ষিপ্ত ভাবে বানরের দল ঘুরে বেড়াচ্ছে, মাঝে মাঝে নানান বুনো ফল ফুলের উকি-ঝুকি, তারই ফাঁকে যখন জারুল গাছের বেগুনি ফুল দেখে আমরা সবাই আনন্দে সমস্বরে আনন্দে চেচিয়ে উঠি, তখন সুভাষেও বিভ্রান্ত হয়ে যায়, ঠিক কি করবে যেন বুঝতে পারে না! আমি ওকে ইশারায় বুঝিয়ে দি, আরে চল চল - এই চলার নামই তো জীবন।
এঁকেবেঁকে সেবক সেতু পেড়িয়ে গিয়ে কালিঝোরার কাছে একটি বাজারে গাড়ি দাঁড় করিয়ে চা ও জলখাবার খেয়ে নিলাম। এদিকে সূর্যদেব পাহাড়ের উপর মেঘের ডানায় ভেসে,মিষ্টি মাখা মুখ নিয়ে যেন আমাদের অভ্যর্থনা করছেন, অপূর্ব সে আলোর ছটা। তারপর তিস্তার চরে, যেখান থেকে এপার ওপার নৌকা বিহারের খেলা চলে। সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সত্যিই উপভোগ্য। সেখানে কিছুক্ষন ফটো সেশন করে, চরের সারিসারি রাত্রি বাসের তাবু দেখে আমারও কেন যেন একদিনের জন্য তাবুবাসী হয়ে যেতে মন চাইছিল! আমরা এগিয়ে চললাম তিস্তা ও রঙ্গিতের সঙ্গম স্থল দেখতে। একজন স্থানিয় ভদ্রলোক আমাদের বুঝিয়ে বললেন, পাহড়ের ওপর থেকে অনেক নিচের নদীর সঙ্গম যেখান থেকে দেখা এই জায়গাটাকেই নাকি 'Lovers point' আর নিচের নদী সঙ্গম স্থলটিকে 'ত্রিবেনী' বলে। খুব সুন্দর এই স্থানটি,পরিপার্শ্বিক সৌন্দর্য উপভোগ করার মতনই বটে। সুভাষ তখন আমাদের তিস্তা ও রঙ্গিতকে নিয়ে ওখানকার প্রচলিত সামাজিক একটা সুন্দর লোককাহিনী  শোনাতে লাগল…..। তা শুনতেও আমাদের খুব মজা লাগল! নদী নিয়ে এই লোককথা নাকি অনেকদিন থেকে প্রচলিত! নদীকে ভাল না বসলে এবং আর্থ-সামাজিক জীবনে তার প্রভাব না থাকলে বোধ হয় এ রকম লোককথা নিশ্চয়ই প্রচলিত হতো না। এটা অবশ্য আমার চিন্তা ধারা কিন্ত এটাও একটা ভাবার বিষয়! তাই এ সব নিয়ে 'research paper' হতে পারে,হয়তবা ইতিমধ্যে হয়েছে হয়ত! যেতে যেতে আমার মনে হতে লাগল,আমাদেরই যদি এই জায়গাগুলো এত ভাল লাগে তবে পর্যটকদেরও, যারা এখানে এখনো আসেননি, তাদের নিশ্চয় খুব ভাল লাগবে। তবে,শুধু মাত্র সঠিক প্রচারের অভাবে পর্যটকরা এই জায়গা গুলো হয়ত তেমন ভাবে জানে না!চলার পথে দেখলাম রাস্তার দু'পাসেই বড় বড় শাল সেগুন দেবদারু পাইন প্রভৃতি গাছের শৃংখলাবদ্ধ অবস্থান। আর তারই ফাঁকে আপনি ফোঁটা পাহাড়ি ফুল ও পাহাড়ের ঢল বেয়ে কতশত গুল্প লতা, এই সৌন্দর্য যেন আমাদের মন ছুঁয়ে গেল। আরো কিছুটা ওঠার পথে কিছু জনবসতি লক্ষ্য করলাম। ওঁদের ছোট ছোট কাঠ ও সিমেন্টের বসত বাড়ি-ঘরগুলি সুন্দর করে ফুলের গাছ দিয়ে যত্ন করে সাজানো,নিজেদের যা আছে তাই দিয়ে নিজেদেরও কি সুন্দর গুছিয়ে থাকে, তা দেখে ওঁদের রুচিশীল মনের তারিফ না করে পারা যায় না।এ সবের জন্যও যথেষ্ট পরিশ্রমী ও শৌখিন হতে হয়! রাস্তায় কখনো যদি ওদের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলেছি,তখন লক্ষ্য করেছি সুন্দর হেসে ওঁরা জবাব দিয়েছে। কারন ওঁরা জানে,পর্যটকরাই ওদের লক্ষী। অদ্ভুত লাগে এই ভেবে, যে এত সংগ্রাম ও দারিদ্র্যতা নিয়েও ওঁরা মানসিক ভাবে কতটা বড় হৃদয়ের সহজ সরল মানুষ! নিজেরাও এই শিক্ষায় কিছুটা প্রভাবিত হয়েছি বৌকি। তবে এ প্রসঙ্গে আমি আমার "উত্তরাখন্ডে" ভ্রমনের অভিজ্ঞতাকে যদি তুলনা করি তবে বলব যে "উত্তরাখন্ডের" পাহাড়বাসী ও পাহাড়ের চরিত্র কিন্ত অনেকটাই অন্য রকম তাই ওখানে গিয়ে আমার/ আমাদের এতটা ভাল লাগেনি। সব দিক দিয়ে একটু যেন অগোছালো ভাব! উত্তরাখন্ডে আমরা হরিদ্বার,ঋষিকেশ,দেরাদুন,মাসৌরী, ও সব প্রয়াগে ঘুরেছি সে নিরিখেই আমি এ কথা বলছি! তবে কেদারনাথ,গঙ্গোত্রী ও বদ্রীনাথ আমাদের ভাল লেগেছে। উত্তরাখন্ডের পাহাড়ি অঞ্চলে খাওয়ার খুব কষ্ট পেয়েছি। রাজমা চাউল ছাড়া কোন সবজি ওখানে তেমন পাওয়া যায় না,অন্তত আমরা পাইনি। নানার রকম থালি পাওয়া যায়। খাওয়া থাকা ও যাতায়াত এখানে কষ্ট দায়ক এবং expensive বলে আমার মনে হয়েছে। তবে ওখানে পর্যটন ব্যবস্থাকে প্রচারের আলোতে একটা বিশেষ জায়গায় নিয়ে গেছে যার ফলে প্রচুর পর্যটক ওখানে যায়,সঙ্গে একটা ধর্মীয় ব্যপার তো আছেই।
সে যাক, আমরা পাহাড়ের সর্পিল পথ ধরে গাছের ছায়ায় আলো- আঁধারের পাকা রাস্তা ধরে এগিয়ে যেতে যেতে পথের ধারে সারিসারি দেবদারু ও পাইন গাছের রাজত্বে মধ্যে যেন হটাৎ-ই ঢুকে পড়লাম। এক ঝলকে মনে হল যেন পাহাড় রাজ্যের কোন স্বপ্নপুরীতে পৌঁছে গেছি! আহা অপূর্ব, প্রথম দর্শনেই যেন প্রেমে পরে গেলাম!  সুভাষ তখন শুধু ছোট্ট করে বলল, এটাই "লামাহাটা"। আমরা তো অবাক শিলিগুড়ির এত কাছে যে এত সুন্দর জায়গা আছে তা আগে জানতাম না তো! 
 লামাহাটা সরকারি উদ্যানকে কেন্দ্র করেই এখানে একটি ছোট্ট সুন্দর জনপদ গড়ে উঠেছে। পর্যটনকারীদের চাহিদা অনুযায়ীই এখানে বেশ কিছু খাওয়ার দোকান ও কিছু ব্যবসা কেন্দ্র / রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। আর এটাই হয়ত এখানকার অর্থনৈতিক চাহিদা কিছুটা মেটায় সঙ্গে এরা কিছু চাষাবাদ করে,সেখান থেকেও কিছুটা আয়,আর গাড়ির ব্যবসা তো আছেই। আমরা টিকিট কেটে "লামাহাটা সরকারি উদ্যানে" প্রবেশ করে ফুলের বাগানে এবং বড় বড় দেবদারু পাইনের রাজ্যে উঠে তার অলি-গলি ও অন্দরে বেশ কিছু সময় আনন্দ করে কাটিলাম। মেঘ গুলো যেন গাছের ফাঁকে ফাঁকে ঢুকে পড়ে  নিজেদের সৌন্দর্যকে জাহির করতে চাইছে!এ যেন আর এক "অলকাপুরী"! নানান ভঙ্গিতে ছবি তুলে নিজেদের মধ্যে কবিতা গান করে কিছুটা সময় কাটিয়ে,বাইরে এসে মোমো, চাওমিন ও চায়ের অর্ডার দিলাম। আমি বাংলা হিন্দি ইংরেজি মিশিয়ে, সঙ্গে 'চ-ছ-জ' যোগ করে ভাঙ্গা ভাঙ্গা জগাখিচুড়ি ভাষায় ওঁদের সাথে কথা বলতেই–আমাকে অবাক করে দিয়ে দোকানের মালকিন বিশুদ্ধ বাংলায় আমাকে উত্তর দিতে থাকল। আমি কিছুটা বিব্রত হলাম!এদিকে আমার এই 'হ–য-ব-র–ল' অবস্থা দেখে আমার পরিবারের লোকজন তো হেসেই কুটিপাটি। আমি লজ্জায় মরে যাই,আসলে-এ অঞ্চলে এতদিন থেকেও নেপালি ভাষাটা এখনো রপ্ত করতে পারিনি অথচ আমার বন্ধুরা কি সুন্দর নেপালী ভাষায় কথা বলে; তাই ভেবেছিলাম গম্ভীর ভাবে চালিয়ে নেব কিন্ত শেষ রক্ষা হল না, কি করব! চা ইত্যাদি খেয়ে ফেরার পথে ছয় মাইল, পেশক রোড় ধরে রবীন্দ্র নাথের স্মৃতি বিজরিত বাংলো মংপোতে কিছুটা সময় কাটিয়ে (এর আগেও ক'য়েকবার গেছি। সত্যি দেখারই মতন।),ইচ্ছে করেই স্থানীয় ছোট্ট বাজার থেকে রাইশাক, স্কোয়াস সংগ্রহ করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে পাকদন্ডির পথ ধরে অল্প কিছুক্ষনের মধ্যে সমতলে নেমে এলাম। এই ফিরে আসার পথটাও ভীষন রোমাঞ্চকর !  বাড়িতে পৌঁছে গাড়ি থেকে নেমে সুভাষকে বাহবা দিতে ভুলিনি সেদিন। অসাধরন ছিল আমাদের এই একদিনের "পাহাড় ছুঁয়ে আসার গল্প-গাথা"। পাঠক বন্ধুদের বলব, আপনারা ওদিকটায় না ঘুরে থাকলে একবার ঘুরে দেখুন যে উত্তরবঙ্গে কি সৌন্দর্য্যের সম্পদ আনাচে কানাচেতে লুকিয়ে আছে! আপনাদের খুব ভাল লাগবে বলে আমি খুব আশাবাদী। আমাদের আনন্দ ও উচ্ছ্বাসের সব কথা এখানে বলিনি কারন আপনাদের দেখার সাথে হয়ত আমাদের দেখার কিছু মিল থাকবে নিশ্চয়, তবুও প্রত্যেকেরই দেখার চোখ ও দৃষ্টিকোণ আলাদা আলাদা তাই নিজেকেই সেটা প্রত্যক্ষ ও আবিস্কার করতে হবে,তবেই তো ভাল লাগবে। সেটা তাই আপনাদের জন্য আপাতত তোলা থাক।  কি বলেন বন্ধুরা ?

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri