সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
11-June,2023 - Sunday ✍️ By- রাজীব দে রায় 699

পাহাড় : একটি নিরুপায় স্বগতোক্তি/রাজীব দে রায়

পাহাড় : একটি নিরুপায় স্বগতোক্তি 
রাজীব দে রায় 
-------------------------------------------

" আমি যেন বলি, আর তুমি যেন শোনো / জীবনে জীবনে তার শেষ নেই কোনো / দিনের কাহিনী কত, রাত চন্দ্রাবলী / মেঘ হয়, আলো হয়, কথা যাই বলি / ...মানুষের প্রাণে তবু অনন্ত ফাল্গুনী / তুমি যেন বলো ;  আর, আমি যেন শুনি। "
( চিরদিন // অমিয় চক্রবর্তী ) 

অযুত-নিযুত বছর ধরে পাহাড় দাঁড়িয়ে আছে  মৌন ঋষির মতো ... সে মৌন, অথচ বাঙ্ময়। মানুষের স্পর্শের জন্য অপেক্ষা করে। আমরা ছুটে যাই। মাথা উঁচু করে ঐ অহংকারী বলিষ্ঠ গ্রীবা'কে দেখতে হয়। গ্রীবাদেশ আকাশ-বাতাস-জলধারার ত্রিবিধ বেষ্টনীতে চিরকালের জন্য বাঁধা পড়েছে। এর-ই পদপ্রান্তে নিরুচ্চার সম্ভ্রমে নত হই। গম্ভীর অনড়ের কাছে জীবনের স্বরূপ হয়তোবা কিঞ্চিৎ পরিমাণে উপলব্ধ হয়, কে জানে!  ভাববাদ, অধ্যাত্মবাদ-ই শুধু নয়, রোমান্টিক চেতনা'র পরিপুষ্টতাও পাহাড় ব্যাতিরেকে অকল্পনীয়! স্বচ্ছ দিঘির মত টলটলে আকাশ, সর্পিল খসখসে পাকদণ্ডী, সবুজ উপত্যকার হাতছানি,পাতালসদৃশ বিপদসঙ্কুল খাড়া ঢাল ; আর, মেঘরোদবৃষ্টিছায়া। আমরা কি উদ্বেল হই না ? 

                                             ...অজস্র পাকদণ্ডী পার হয়ে শৈলমালার নিকটে আসি। ক্ষণেক্ষণে বদলায় পাহাড়ের রঙ ও সৌন্দর্য। চিরসবুজ বৃক্ষ ও পর্ণমোচী বৃক্ষের সমারোহে চারদিকে থৈ-থৈ ভাব। সরলবর্গীয় গাছের মোচাকৃতি অবয়ব নিরুচ্চারে "আয় আয়" ডাক দেয়। কত বিচিত্র খাঁজ, কত বৈচিত্রময় পাথর। কিছু পাথর বিপজ্জনক ভাবে ঝুলে আছে। কিছুকিছু আজন্মকালের বন্ধুতায় একে অপরের গা'য় সেঁটে আছে। পরস্পরের অবয়ব স্পর্শ করে ওম নিতে নিতে নির্ভরতার হাত যেন বাড়িয়ে দিয়েছে। কিছু বেচাল পাথর আবার বড্ড অকুতোভয়। সামান্য শব্দ বা কম্পনে সমগ্র পাহাড় গা-ঝাড়া দিলে এরা গহীনে ঝাঁপ দিতে দু'বার ভাবে না! এদের জন্য কোনো সিসিফাস অবতলে অপেক্ষা করে না। খাড়া পথের সঙ্কীর্ণ পরিসরে ; রাস্তার দু'ধারে জ্বলে ওঠে কতশত অচেনা ফুল। শিশুর হাসির মত পবিত্র ফুলগুলো "জলের মত ঘুরেঘুরে কথা কয়"...সহস্র ঝর্ণার কলতানের সাথে ফুলের কথা হয়। শ্যাওলামাখা পাথরের আড়ালেও অপুষ্ট ফুল মাথা তুলে সূর্যকে দেখতে চায়। বেলা গড়ায়, আলো ক্রমশ ম্লান হতে থাকে আর বিচিত্র আলোকছটা সমারোহে পাহাড় চূড়া অলৌকিক অমরাবতীর মতো সেজে ওঠে। সন্ধ্যায় গেরুয়া আকাশ জুড়ে ক্রীড়ারত শুভ্র ও কৃষ্ণবর্ণের মেঘমালা ফুসমন্তর দিতে দিতে বৃষ্টি হয়ে ঝরে। আপাদমস্তক ভিজতে হয়। হিমেল বাতাসের অভিঘাতে দেবদারু পাতা যেই টুং করে নেচে ওঠে, তক্ষুনি ঝিরঝিরে বৃষ্টি নামে। সাদা ও ধূসর রুমালের মতো অজস্র মেঘ হাতের নাগালে ভেসে বেড়ায়। কান ঘেসে ফিক করে হেসে দূরে উড়ে যায়। মেঘেরা গানগল্প আরম্ভ করে। কনকনে বাতাসের ঝাপটার সাথে বৃষ্টির যুগলবন্দীতে সন্ধ্যা ঘনায়। এমন-ই সময় তারে বলা যায়... 

        ...সহসা রুমালি মেঘ ফুস করে পালিয়ে গেল। অন্ধকার যেন কালো বেড়ালের মতো ঝুপ করে কুলুঙ্গি থেকে নেমে এল। পাহাড় সেজে উঠল আলোকমালায়। অজস্র জোনাকি ঘাপটি মেরে বসে রইলো অগুনতি মুক্তোর গা'য়। ঊর্ধ্বাকাশে নক্ষত্রমন্ডলীর মাঝে গোল চাঁদের মুখে তখন স্মিতহাসি ; ক্রমশ চওড়া হতে থাকে। সবল দুই বাহু বিস্তৃত করে নৈঃশব্দ্যকে আঁকড়ে ধরেছে মৌন ঋষি। সমস্ত কোলাহলকে জীর্ণ বস্ত্রের মত পরিত্যাগ করে তিনি ক্রমশ একলা হতে চাইছেন। এদিকে সুনীল অন্ধকারের ভিতর সংহত হতে হতে একসময় জোনাকবিন্দুগুলোও ধ্যানমগ্ন হল। বিপুল নৈঃশব্দ্যের ভিতর বহমান উতল বাতাস হঠাৎ লয় পালটে ধীরেধীরে বইতে শুরু করলো। অনির্বচনীয় প্রশান্তিতে ডুবে গেল সমগ্র পাহাড়। এই প্রশান্তিই হয়তো বিশুদ্ধ আনন্দ! এই আনন্দ তো বন্ধনের নয় ; এ যে বন্ধনমুক্তির!  শান্তি-বিলয়-স্থিতি ; সমস্তই লীন গেছে ঐ ধ্যানস্থ ঋষির দৃঢ় অপার্থিব মুখমন্ডলে। এমন চন্দ্রাহত রাতে, হে মৌন পাহাড়, " তুমি যেন বলো; আর, আমি যেন শুনি ".. 

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri