পাহাড়িয়া গাঁও/ভাস্বতী রায়
পাহাড়িয়া গাঁও
ভাস্বতী রায়
ঘুরতে যাওয়ার কথায় আমি বরাবরই এক পায়ে রাজি।কোন প্ল্যানের দরকার হয় না ,শুনলেই হলো। সবসময় আমার আগ্রহই থাকে বেশি।আর সে যদি পাহাড় হয় তবে তো কোন কথাই নেই। কালিপূজোর ছুটি চলছে, আর কালিপূজতে ধূপগুড়ি যাওয়া
চাই চাই। এবারে ভাইও ছুটি পেয়েছে। একদিন হঠাৎ রাতে বললাম - চল কাল ঘুরতে যাই। যেমনি বলা অমনি সবাই এক পায়ে রাজি।
কিন্তু যাবো কোথায় এত তড়িঘড়িতে? খুব বেশি ভাবতে হল না, ভাই বহুবার গেছে ইচ্ছেগাঁও-এ। ওর কাছে এতবার শুনেছি নামটা,-তাই ঠিক করলাম ইচ্ছেগাঁওই যাব। কালিমপং জেলায় পাহাড়ের কোলে
একটি ছোট্ট গ্রাম - ইচ্ছেগাঁও।
ঠিক হলো পরদিন সকালে রওনা দেবো একদিন থেকে ফিরব। এরপর জামাকাপড় গোছাতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়লাম, আমাদের কাছে দার্জিলিং কালিমপং মানেই তো শীতের জায়গা, কিন্তু বাড়ি
থেকে বেরোবার সময় তো ঘুরতে যাওয়ার কোনও প্ল্যান ছিল না, তাই শীতের জামাকাপড়ও নিয়ে যাইনি। আমার মায়ের জামাকাপড় আমার
আর ভাইয়েরগুলো দিয়ে আমার কর্তার যাওবা ম্যানেজ হল, ছেলেরটা কিছুতেই ম্যানেজ দেওয়া গেল না। শেষমেষ পরদিন সকাল আটটায় একটা দোকান খোলা পেয়ে একটা জ্যাকেট, আমার হিলতোলা জুতো নিয়েই রওনা দিলাম কালিমপং-এর পথে।
ইচ্ছেগাঁও-এ পৌঁছাবার এগারো কিলোমিটার আগে ডেলো পার্ক। বেশ ক্ষানিকটা সময় আমরা ওখানে কাটালাম। রংবেরংয়ের ফুল দেরদারু রডোডেনড্রন গাছে সুন্দর করে সাজানো পার্কটা।
গাছের প্রতি আমার একটা অদ্ভুত পাগলামি আছে। লোভ সামলাতে পারলাম না। টুক করে একটা হলুদ লিলি গাছ তুলে ব্যাগে পুরলাম।
ডেলো পার্কের বিশেষ আকর্ষণ ছিল প্যারাগলাইডিং। খুব ইচ্ছে ছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর বুকে সাহস যোগাতে পারিনি।
সন্ধের মুখে আমারা ইচ্ছেগাঁও-এর দিকে রওনা দিলাম। যখন পৌঁছালাম গোটা রাস্তা ঘুটঘুটে অন্ধকার। বেশ গোয়েন্দা গল্পের মতো ছমছমে পরিবেশ। চারদিকে কোনও ঘরবাড়ি, মানুষের দেখা নেই। অন্ধকারে দম বন্ধ হওয়ার জোগাড়। শেষে অনেক দূরে টিমটিমে আলোয় একটা কটেজের দেখা মিলল। ওখানেই আমাদের বুকিং ছিল। রাতে নাচ গান দেখবার সুযোগ মিলল। হতবাক হলাম
পরদিন সকালে ঘুম ভেঙে বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম যখন। মনে হচ্ছে পুরো গ্রামটাকে ছুঁয়ে আছে কাঞ্চনজঙ্ঘা। এমন দৃশ্য দেখবার সুযোগ এর আগে হয়নি। চারদিকে পাহাড় আর পাহাড় মাঝখানে গ্রামটি।সকালে জলখাবারের পর এবার লাভার উদ্দেশ্যে পাড়ি। লাভায় পাহাড় ছাড়া দেখবার তেমন কিছু ছিল না, আর আগে ঘোরা বলে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। অনেকটা পথ আসার পর মনে পড়ল সাংগু নামের ঝরনার কথা। ওমনি গাড়ি ঘুরিয়ে সাংগুর পথ ধরলাম। রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে পাহাড়ের
ধাপ বেয়ে নামতে নামতে কতটা নেমেছি বুঝতে পারিনি, বুঝতে পারলাম ওঠার সময়।
যাই হোক এত সুন্দর আর বড়ো ঝর্ণা আগে দেখিনি। শেষমেষ যখন বাড়ি পৌঁছালাম তখন সন্ধ্যা নেমে গেছে।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴