পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়-এর আলোচনায় সূর্যোদয় দে-র 'সন্ধ্যার পর সাবধান'
পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়-এর আলোচনায় সূর্যোদয় দে-র 'সন্ধ্যার পর সাবধান'
সন্ধ্যার পর সাবধান
সূর্যোদয় দে
ভালো বাসায় বিচ্ছেদ বলে কিছু হয় না। জীবন বোধের এই গুঢ় বিষয়টিকে প্রত্যয়ের সাথে রহস্য রোমাঞ্চ কাহিনি "সন্ধ্যার পরে সাবধান" গ্রন্থের মধ্যে প্রোথিত করবার চেষ্টা করেছেন লেখক সূর্যোদয় দে। লেখক কল্পনার জগতে বাস করলেও তার চরিত্র গুলো সবাই বাস্তবের। অলৌকিক বিষয়কে সুন্দরভাবে গুছিয়ে উপস্থাপন করা একটা আর্ট। সেই শিল্পকর্মকে অত্যন্ত সুন্দর ভাবে বিশ্লেষণ করেছেন লেখক। সাতটি গল্পের এই সংকলনটির প্রথমেই আছে এক অতি বাস্তব স্বগতোক্তির কথা মালা "ভুত বলে কিছু নেই"। জগাই এবং বিলু যেন আমাদের অতিপরিচিত মুখ। তাদের মুখ দিয়ে খুব সুন্দর কাহিনির জাল বুনেছেন প্রথম গল্পে। আমরা আমাদের সমাজের জগবন্ধুদের মতো সরল মানুষের দেখা পাই। তাঁকে খুব সুন্দর ভাবে আর্টিফিশিয়াল স্যাটেলাইট বোঝানো পাঠকের মনকে আলোড়িত করে। মগজে মগজে যোগাযোগ স্থাপনই যে সম্পর্কের গোড়ার কথা তা উপলব্ধি করা যায় অতি সহজেই।
"লেভাথিয়ান" এক অসাধারণ রহস্যময় রোমাঞ্চ কাহিনি। মাঝ সমুদ্রের নানা চিত্র বিচিত্র কথামালা কিশোর হৃদয়কে আকর্ষিত করবে। বিভিন্ন জলজ প্রাণীর বিষয় নিয়ে আলোচনা রয়েছে এই খন্ডে।
"আমাদের যখন ছেলে হবে তার নাম রাখব মেঘ আর মেয়ে হলে স্রোতস্বিনী।"
একটা কল্পলোকের গল্পগাথার মতো সুন্দর সুন্দর শব্দ ভান্ডার সব গল্পের মতো তৃতীয় গল্প "প্যারাডক্স" এর অন্যতম দিক। তথাগত এই কাহিনির মুল চরিত্র। এখানে নিয়ম মাফিক লাভস্টোরিকে একটা অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন লেখক। এক একটা লাইন, "প্রতিটি কথাতেই গানের জন্ম,অতি অবলিলায় গল্প লেখা হয়"। একটা কাব্য মাধুর্য রচিত হয়। আমরা বলি কবিতার মতো সুন্দর। সেই সৌন্দর্য্য গল্পের আগাপাশতলা জুড়ে মনকে ছুঁয়ে যায়।
একজন লেখকের সৎসাহস পাঠক কে মুগ্ধতায় ভরিয়ে দেয়। অতি কট্টর মার্ক্সবাদীদের খুশি করা কলমের দ্বায়িত্ব নয়। গোটা বিশ্বজুড়ে মার্ক্সিজমের গভীর সংকট চলছে, সেকথা স্পষ্ট ভাবে বলেছেন লেখক।
ভয়, বিস্ময়, রহস্য, রোমাঞ্চকর কাহিনির পরিসমাপ্তি বাস্তবের মুখোমুখি এসে দাঁড়ায় তার শেষ গল্প "আকাশকুসুম " এর পটভূমিতে।
সব কবিতা আবৃত্তির কবিতা হয় না।কিছু কিছু কবিতা আবৃত্তির কবিতা হয়ে ওঠে। তেমনি সূর্যোদয়ের গল্পগুলো মানসচোখে দেখলে কাহিনির চরিত্রগুলো সামনে এসে দাঁড়ায়। অর্থাৎ ভিশুয়ালাইজ করলে একটা স্টেজ একটা ফ্রেম একটা চলচিত্রের রূপ নিয়ে পাঠকের সামনে উপস্থিত হয়। এই দৃষ্টিভঙ্গী তাকে আগামীর চলচিত্র পরিচালক হতে সহায়তা করবে বলে আমার বিশ্বাস।
আসলে যে সত্যিই ভুত বলে কিছু নেই একথা বিজ্ঞানের ছাত্র সূর্যদয় তার গ্রন্থে শেষ অবধি প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। গা ছম ছমে ভুতের আড্ডায় পৌঁছে গিয়েও পাঠকের বিজ্ঞানের প্রতি আস্থা জন্মায়। তার সব গল্পের মধ্যে নিখুঁত বর্ণনা প্রসংশনীয়। লেখকের নিজের করা প্রচ্ছদ এককথায় অসাধারণ।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴