পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়-এর আলোচনায় মনোমিতা চক্রবর্তী-র গল্পের বই 'আনন্দধারা'
পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়-এর আলোচনায় মনোমিতা চক্রবর্তী-র গল্পের বই 'আনন্দধারা'
নিঁখুত নিটোল গল্প যা আনন্দ দান করে, সেটাই মনে হয় শরীর ও মনকে নীরোগ করে তোলে। আমরা যাকে স্টোরি টেলার বলি সেই রকম একজন গল্প বলিয়ে গল্প লেখক হলেন মনোনীতা চক্রবর্তী। কোভিড কালে তার "শ্রাবণ মুখর সন্ধ্যা" বইটি সম্পর্কে তিনি বলেছেন, "মোবাইলে টাইপ করে একটা আস্ত বই লেখা সম্ভব হবে, সেটা কখনোই ভাবিনি।"
এবছর কোলকাতায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক বইমেলায় প্রকাশিত হল মনোমিতা চক্রবর্তীর চতুর্থ গ্রন্থ "আনন্দধারা"। ইতিপূর্বে তাঁর তিনটি গল্পের বই বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সব বইয়ের মধ্যে একটা ইতিবাচক বার্তা আমরা তাঁর লেখায় দেখতে পাই। সেটা হল আনন্দ এবং খুশি, তার প্রাপ্তি লাভও সম্ভব একমাত্র হাসি খুশির গল্প পাঠ করে। জীবনকে খুশিতে ভরিয়ে তুলতে পারলে বোধ করি অনেকটাই রোগমুক্ত থাকা যায় এবং দীর্ঘজীবন লাভ করা সম্ভবপর হয়।
ডিটেইলিং মনোমিতার গল্পের আকর্ষণ। তা সেটা একটানা নিরবচ্ছিন্ন প্রকৃতির শোভা বর্ণনাই হোক বা কোনো কাহিনির জাল রচনা, বহু চোখে না পড়া অথচ মনে রাখবার মতো বিষয় তাঁর লেখাকে বিষয়বৈচিত্র্যে ভরিয়ে তোলে যেটা পাঠক মন্ত্রমুগ্ধের মতো এগিয়ে যায় এক গল্প থেকে অন্য গল্পের দিকে।
চেনাশোনা ভুত গল্পে লেখিকা মনোমিতা লিখেছেন, "দিদাও শুরু করে দিলেন মনের আনন্দে ভুতের গল্প - সরকার বাড়ির পেছনে শান বাধানো পুকুর পাড় ঘেঁষে গোটা বিশেক ফজলি আমের গাছে ঘেরা বাড়িটা, ওটা বোসেদের। কেউ থাকে না আর ওই বাড়িতে এখন। বাড়িটা পোড়ো বাড়িতেই পরিণত হয়েছে। ওই বাড়িতে অমাবস্যার নিশুতি রাতে চলে সব অদ্ভুতুড়ে কান্ড কারখানা। "
একটা মুখে গল্প বলার মতো করে লেখা তাঁর পুরো বই পাঠকের মনে রেখাপাত করে। কখনো কখনো আপন মনে কথা বলার মতো তিনি লিখেছেন, তখন মনে হয় লেখক নিজেই নিজের বন্ধু। এই বিষয়টি পাঠককে আকর্ষিত করবে।
"গভীর রাত, ঝিরঝিরে বৃষ্টির সাথে চলছে বিদ্যুতের ঝলকানি। শহরের এক কোণায় অবস্থিত গীর্জাটায় ঢংঢং করে দুটো বাজল। লাইটের আবছা আলোয় রণজয় এবার স্পষ্ট দেখতে পেল একজন বেশ লম্বা গোছের মানুষ রেইনকোট, মাথায় হ্যাট পরে বেশ জোরে হাঁটছেন। "এই সব বর্ণনায় একটা জলজ্যান্ত ছবি পাঠককে উপহার দিয়েছেন লেখক। আমরা একটা নাটকের নাট্যরূপ এক্ষেত্রে ভিসুয়ালাইজ করতে সক্ষম হই। এই গল্পগুচ্ছের মধ্যে রহস্য রোমাঞ্চ গল্প "খুনি কে"? গল্পের এই ডিটেইলিং একজন পাঠককে মুগ্ধ করে। শিশু কিশোরেরা আকর্ষিত হয় এক কাহিনির থেকে অন্য কাহিনির দিকে। আনন্দধারা, চেনাশোনা ভুত, তাড়না, খুদে গোয়েন্দা, বিবেক দংশন, উপলব্ধি, শ্রীমান দেবু দত্তের কাহিনি, না বলা কথা, যত কান্ড বিলাসপুরে, নিশুতি রাতের ঘটনা, প্রদীপের আলো, পরিচয়, যত কান্ড রোজির জন্য, মাকাল ফল, খুনি কে, আত্মসম্মান এই ষোলোটি কাহিনির জাল রচনা করেছেন গল্পকার মনোনীতা চক্রবর্তী তার "আনন্দধারা" বইটিতে।
আনন্দধারা হচ্ছে মানুষের জীবনের খুশির বহিঃপ্রকাশ। প্রতিটি কাহিনিতে আনন্দ এবং খুশিতে পরিপূর্ণ করেছেন। একটাই বার্তা দিতে চেয়েছেন তিনি। সংসারের হাজার টানাপোড়েনের মাঝে ছোটো ছোটো খুশি যা মানুষের জীবনকে উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত করে তাকে প্রজ্জ্বলিত করাই হচ্ছে একজন লেখকের আর্ট। আর সেই শিল্পীর শিল্পননৈপুণ্য বিষয়টি তিনি অত্যন্ত সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন।
সর্বোপরি "আনন্দধারা" একটা কিশোর সাহিত্যের জগতে নবতম সংযোজন, একথা বলা যেতেই পারে। প্রচ্ছদের ছবিতে আনন্দদেবী এবং ধারা দেবীর ছবি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। বার্তা প্রকাশন খুবই সযত্নে বইটা বাঁধাই করেছেন। ঝকঝকে ছাপার অক্ষর পাঠককে আকর্ষিত করবে, এবং বইটি পাঠক সমাদৃত হবে, এবিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴