সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
11-June,2023 - Sunday ✍️ By- দেবলীনা দে 339

পাবং-এর চৌকাঠে কাঞ্চনজঙ্ঘা /দেবলীনা দে

পাবং-এর চৌকাঠে কাঞ্চনজঙ্ঘা 
দেবলীনা দে
---------------------------------------

ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে চলতে চলতে ক্লান্তি অনুভব করলে হাতের কাছে পাহাড়ি গ্রামে দুটো দিন কাটিয়ে এলেই মন খুশ হয়ে যায়। প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এক একটি ঋতুতে একেক রকম রূপ এই পাহাড়ি গ্রামগুলির। এবার যে গ্রামটিতে গিয়েছিলাম তার নাম পাবং।শান্ত, নিরিবিলি যেখানে জনবসতি হাতে গোনা, পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে কয়েকটি ঘর,প্রকৃতির কোলে অপার সৌন্দর্য্যে ভরপুর এই পাবং। ছোট্ট গ্রামটিকে অতন্দ্রপ্রহরীর মতো দেখভাল করে বেশ কয়েকটি পাহাড়।আমরা যখন পৌঁছলাম ঘড়ির কাঁটা বেলা ১১ টার ঘর ছুঁয়েছে।যে হোম স্টেতে উঠলাম তার নামটি ভারী মিষ্টি 'চিত্রকূট', এটি একটি ফার্ম হাউস, ছিমছাম,পরিচ্ছন্ন ,সাজানো গোছানো ,কি নেই এই খামার বাড়িতে, বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে তিনটি কটেজ, একটু উঁচু টিলার উপরে ,আর বাকি তিনটি খানিক নিচে মরশুমি ফুল আলো করে আছে।
                    উঁচু টিলার উপরে একটি কটেজ আমাদের থাকার ব্যবস্থা। সামনে কিছুটা জায়গা যেখানে বসার ব্যবস্থা রয়েছে, নির্জনে প্রকৃতির সঙ্গে আলাপচারিতা সেরে নেওয়া যায়। সেখান থেকে কালিম্পঙ শহরকে দেখা যায়। ঘর-বাড়ি গিজগিজ করছে, তার ঠিক নিচে তাকালে মখমলি সবুজ গালিচা চোখ জুড়িয়ে যায়। হঠাৎ আমার এক বন্ধু হাতের ইশারায় রেলিংএর ওপারে তাকাতে বলল, অসাধারণ দেখতে একটি প্রজাপতি যার গায়ে রংরূপ নয়নভিরাম।তারপর উড়ান দিলো,এরপর এলো আরও একটি।ধীরে-ধীরে সূর্যদেব মধ্যগগনে, আমরাও প্রকৃতির সঙ্গে নিজেদের ভিড়িয়ে দিলাম। হাওয়ারা কানের কাছে ফিসফিস করে,পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে চলা ঝর্ণার জল সারাদিন অবিরত গল্প বলে.প্রাকৃতিক রূপশোভার কোলাজে বুঁদ হয়ে থাকার ইচ্ছে থাকলে অবশ্যই আসতে হবে পাবং-এ।
হোমস্টের একটি ক্ষুদে হোস্ট হরি,সর্বক্ষণ আপ্যায়নে তৎপর।খানিক বাদে এসে সে বলে গেল দ্বিপ্রাহরিক আহার তৈরী, আমরা গুটি-গুটি পায়ে ডাইনিং হলে ঢুকলাম।খোলামেলা বসার জায়গা, সামনে বিশালাকার জানালা,যেখান থেকে সামনের পাহাড়টি দেখতে ভালো লাগে, মেঘেরা পাহাড়ের গায়ে হেলান দিয়ে বিশ্রাম নেয়, তারপর আবার চলমান।পেটপুরে খেয়ে খানিক বাদে মনে হলো পায়ে হেঁটে পাবংকে দেখে নিলে মন্দ হয় না।বেরিয়ে পড়লাম পাহাড়ের ঢাল বেয়ে চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে চলেছি এগিয়ে ,কোন ব্যস্ততা নেই, ভিড়ভাড় নেই হই-হুল্লোড়ের বালাই নেই , শুধু অজানা পাখির কিচি-মিচির আর ঝিরিঝিরি বাঁশ পাতায় হাওয়াদের ফিসফিসানি। রঙিন বাক্সবাড়ির দেখা ,নানা রঙের ফুলের মেলা।একটু দূরে তাকালে মেঘেদের দল উড়ান দিচ্ছে এ পাহাড় থেকে ও পাহাড়। ধীরে-ধীরে সূর্য পশ্চিম কোলে ঢলে পড়ছে, আকাশ তখন গোলাপী আভায় ছেয়ে গেছে। ঝুপ করে সন্ধ্যে নেমে এলো , হরি চা-পকোড়া সমেত হাজির। বাইরে তখন ঝিঁঝিপোকা একনাগাড়ে ডেকে চলেছে। চেয়ারে বসে চায়ে চুমুক দিতে দিতে নজরে এলো সামনের পাহাড় জুড়ে আলোকবিন্দু।দুদিন বাদে পূর্ণিমা তাই চাঁদের আলো সারা আকাশ জুড়ে বিচ্ছুরণ, চাঁদনী আলোয় গলায় হীরের নেকলেস জড়ানো শৈলশহর কালিম্পঙকে নতুন ভাবে আবিষ্কার করলাম।
 ধীরে ধীরে পাবং ঘুমের দেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে, তাই বাক্সবাড়ির কৃত্তিম আলো নিভে গেলে জোনাকির দল সে জায়গা জুড়ে আলোর দ্যুতি ছড়াতে লাগলো। চাঁদের আলোয় মেঘেদের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে, হিম পড়ছে ,বাইরে থাকা টেবিলে হাত দিলে বোঝা যাচ্ছে ,রাতের খাবার ঘরে দিয়ে গেল।রাত যত বাড়তে লাগলো ঠান্ডা খানিক অনুভূত হলো। ডিনার সেরে যখন আমরা শুতে গেলাম পাবং এর অবশ্য মধ্য রাত্রি।টুপটাপ হিম পড়ার শব্দ শোনা যাচ্ছে।আলো-আঁধারির খেলায় পাবং এর রাত জাগা পাখি মাঝে মাঝে সাড়া দেয়।ভোর ৪:৩০টায় ঘুম ভাঙলো , জানালার কাঁচ সারারাত জুড়ে হিম পড়ে ঝাপসা হয়ে আছে। বাইরে বেরিয়ে দেখি,পুবের আকাশ রাতের কালিমা মুছে লাজে রাঙা তখনও কালিম্পঙ পাহাড়ের গায়ে আলোর বিন্দূরেখা। ধীরে-ধীরে পুবের আলোয় নজরে এলো কাঞ্চনজঙ্ঘার শিখর। মাঝে মাঝে আবার মেঘের পাগড়ি মাথায় পরে রাজবেশে দেখা দিচ্ছে আবার আড়াল হচ্ছে ,আমিও চোখের পলক না ফেলে মন্ত্র মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রয়েছি।ভোরের আলো ফুটে উঠতেই রজতশুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘা আরও মোহময়ী, চোখ ফেরানো দায়, যেন প্রতিটি খাঁজে আলোর দ্যুতি। শিশির মাখা ফুলের পাপড়িতে রুপোলি কণা ঝিলিক দিচ্ছে, সেইসঙ্গে পাহাড়ি সকাল ধূমায়িত।  
এবার যে ফেরার পালা। হোমস্টে মালিক এবং তার পরিবারকে বিদায় জানিয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম , পাহাড়ের বাঁকে গাছের ফাঁক দিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘাকে দেখে যেন মনে হচ্ছিলো ছোট্ট গ্রামগুলিকে আগলে রেখেছে, ধীরে ধীরে কাঞ্চনজঙ্ঘা আমাদের বিদায় জানাল। 

কিভাবে যাওয়া  : শিলিগুড়ি থেকে কালিম্পঙ হয়ে পাবং যাওয়া যায়। এছাড়া কালিঝোরা ড্যাম এর পাশ দিয়ে সুরুক হয়ে যাওয়া যায়।

কোথায় থাকবেন : চিত্রকূট ফার্ম হাউস , এছাড়া আরও কয়েকটি হোম স্টে রয়েছে। চিত্রকুট ফার্মহাইস, খড়্গ সিংহ গুরুং । ফোন : ০৯৫৪৭৮৫৭৪৫৩।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri