পাগলীটা
অমিতাভ দাস
============
বিকেল
থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। জল গন্ধের বাতাসে ভর করে এখন ঘরময় ঘুরছে কদম ফুলের
মিহিন সুবাস। সকাল থেকে আকাশটা কালো হয়ে আছে। ভারী ঝড় বৃষ্টি হতে পারে
আশঙ্কা ছিল তাই বিকেলে রানু কাকিমাকে রাতের রান্না সেরে ফেলতে বলা হলো।
রানু কাকিমা রাতের রান্না সেরে চলে গেলেন।
দুপুরে
বাজার থেকে ফেরার সময় মোড়ের মাথায় পাগলিটাকে দেখেছিলাম। নোংরা
প্লাস্টিকের ভেতর হাত ঢুকিয়ে কি যেন খাচ্ছিল। চারপাশে প্লাস্টিক, নোংরা
বস্তা,কাগজ ও ময়লা জামা কাপড়ের ঢিপ। বাজারের ব্যাগের ভিতর হাত ঢুকিয়ে
দুটো ল্যাংড়া আম দিয়ে বললুম খাস। কি বুঝল জানি না। বিদঘুটে গন্ধে
তাড়াতাড়ি চলে এলুম। খারাপ লাগছিল পাগলীটার জন্যে।
সন্ধ্যায়
লোডশেডিং। ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। আমার অনুমান ঠিক হলো। ঘরে
মোমবাতিগুলো নিবুনিবু জ্বলছে। ভীষন শব্দে কোথায় যেন বাজ পরলো। বারান্দা
থেকে দেখলাম সদর দরজায় তালা লাগানো হয়নি। হাওয়ায় খুলে গেল মনে হয়। অমনি
গাছের ডাল থেকে ডানা ঝাপটিয়ে রাত পাখিরা উড়ে গেল ভয় পেয়ে। কে? কে? কে
ওখানে? কে যেন ছায়ার মতো ভিতরে গেল। আমার ভয় হতে লাগল। সুবীর এখনো ঘরে
ফেরেনি। ওকে ফোন করেছিলাম, বৃষ্টির জন্য এখনও বন্ধুর বাড়িতে আছে। ঝড়
বৃষ্টি কমলে আসবে। সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে এলুম। অন্ধকারে গাছগুলো কেমন
যেন ছায়ার মতন দাঁড়িয়ে। কখন যেন মনে হল পেছনে কেউ দাঁড়িয়ে। খোলা চুলে
কে? নিঃশব্দে কে যেন দাঁড়িয়ে? ও মাগো! পেত্নী নাকি? ভয়ে চিৎকার করে
উঠতেই, খিলখিল হাসি। আমি গো! আমায় বলল, 'সব মিথ্যা! সবাই স্বার্থপর। কেউ
ভালোবাসে না।' অমনি শনশনিয়ে দমকা বাতাস ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি এল। পাগলিটা
বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে দরজা খুলে ছুটল। আমি অস্থির হয়ে সুবীরকে ফোন করলাম।
তাড়াতাড়ি চলে এসো, আমার ভয় করছে।
সকালে ট্যাপ
কলে লাইন দিয়ে দু বালতি জল এনে রানু কাকিমা বলল, "রাতে যা বৃষ্টি আর ঝড়
হল, আমার ঘরের বেড়া ভেঙ্গে গেচে। মালতিদের টিনের চাল উড়ে গেচে। সারারাত
ঘুম হয়নি। তার মধ্যে আবার গাড়ি এক্সিডেন্টে লোক মরেচে। জানো না,
ঐএক্সিডেন্টে রাস্তার পাগলীটা মরেচে। রক্ত কি রক্ত! আমি দেখে আসলুম গো!'