পরান সখা বন্ধু হে আমার.../মিলি ভট্টাচাৰ্য
পরান সখা বন্ধু হে আমার...
মিলি ভট্টাচাৰ্য
----------------------------------
ছিলাম এক ক্ষুদ্র মানবী স্থূল পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের শাসনে! তুমি বন্ধু, শৈশবেই দিলে নাড়া! উশ্রী নদীর ঝর্ণা দেখিয়ে, তালগাছ ঘেরা শান্ত আঁচলে ঢাকা গ্রাম্য দীঘিতে সাঁতরে আমার বদ্ধ মন পাড়ি দিল
সাত সমুদ্র তেরো নদী পারে , মধু মাঝির নৌকায় একশো টা দাঁড় বেয়ে!
সেই যবে থেকে, "কোথাও আমার হারিয়ে যাবার নেই মানা, মনে মনে."..শিখে নিল আমার অন্তরাত্মা, দুটো অদৃশ্য ডানা উঁকি দিল দেহ মনে! আমায় আর পায় কে, হাজারো বাধা নিষেধের বেড়াজাল ভেঙে মন আমার স্বপ্ন পাখি তখন! ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ এই ডাল, ঐ ডাল.... অনন্ত আকাশের হাতছানি! মেঘের পারে গিয়ে আকাশ কে চুমা! পাগলপারা নদীর মতো চঞ্চলা!
বিশ্ব প্রকৃতির রূপকল্পে যে গহন গভীর দর্শন... বন্ধু সে ও তোমার চোখে দেখা, তোমার ই গানে জানা l
"গানের ভিতর দিয়ে যখন দেখি ভুবনখানি
তখন তারে চিনি আমি, তখন তারে জানি l
.......
রূপের রেখা রসের ধারায়, আপন সীমা কোথায় হারায়
তখন দেখি আমার সাথে সবার কানাকানি "l
তাই, আমার জীবনবীণায় আজ
"অরূপ বীণা রূপের আড়ালে লুকিয়ে বাজে " নিত্য l
সখা... তোমায় আকুল হয়ে ডাকি
সকাতরে... তুমি শুনতে পাও সেই ডাক? "শুধু তোমার বাণী নয় গো,
হে বন্ধু, হে প্ৰিয়,
মাঝে মাঝে প্রাণে তোমার পরশ খানি দিও....."
হ্যাঁ, বন্ধু, স্পর্শে পাই, দর্শনে পাই, শ্রবণে পাই, চিন্তনে পাই তোমায় যখন গীতবিতান কি সঞ্চয়িতা বুকে জড়িয়ে রাখি!
' কেউ কথা রাখে নি '... এতো অন্ধ অভিমানী সমাজের কণ্ঠ!
কিন্তু আমার গভীর বিশ্বাস, ডাকার মতো করে ডাকলে সাড়া না দিয়ে যাবে কোথায়...? লুকাবে কোথায়? তুমি তো তোমার বোধি প্রজ্ঞা, তোমার দর্শনের আলো বিছিয়ে দিয়েছো আমার তমসাকীর্ণ পথে! সেই আলো চোখ ধাঁধানো নয়, বড়ো স্নিগ্ধ, বড়ো সুন্দর, বোধির জ্যোৎস্না যেন! সেই আশ্চর্য আলোয় জীবন কে দেখতে শিখিয়েছ, বুঝতে শিখিয়েছ, সমাজ সংসার কে চিনতে শিখিয়েছ.. বিশ্ব প্রেমের অঙ্গীকারে বেঁধেছ l
প্রেম পূজা প্রকৃতি একই অঙ্গে বিলীন! মূর্ততায় বিমূর্ত এসে মেশে
আনন্দধারা হয়ে! বিশ্ব মানবিকতার সুর বেজে ওঠে ভুবন জুড়ে l
"মহা বিশ্বে মহাকাশে মহাকাল মাঝে
আমি মানব একাকী ভ্রমি, বিস্ময়ে ভ্রমি, বিস্ময়ে..."
অনাদি অনন্ত কে ছুঁয়ে দেখার উদগ্র বাসনা জাগে l
সখা.. তুমি এক আকাশ আশ্বাস দিলে তোমার উচ্চারণে...
অস্মিতায় পূর্ণ করলে আমায়, আমি জানলাম, তুচ্ছ নই আমি....
"আমার চেতনার রঙে পান্না হল সবুজ
চুনি উঠল রাঙা হয়ে l
আমি চোখ মেললুম আকাশে
জ্বলে উঠল আলো
পূবে পশ্চিমে...
ওদিকে অসীম যিনি তিনি স্বয়ং করেছেন সাধনা
মানুষের সীমানায়,
তাকেই বলি 'আমি 'l
আবার, বন্ধু তুমিই এসে স্রষ্টা আর সৃষ্টির মাঝে যে অদৃশ্য সেতু বন্ধন তাকে দর্শন করালে, উপলব্ধি র দরজায় চেতনার আঘাতে l
"অনন্ত এ দেশকালে, অগণ্য এ দীপ্তলোকে,
তুমি আছ মোরে চাহি.. আমি চাহি
তোমা পানে l"
শোকস্তব্ধ হৃদয় কে সান্ত্বনা দিতে তোমার জুড়ি মেলা ভার, চিরসখা l শোকসমুদ্রের ঝঞ্ঝাক্ষুব্ধ তরঙ্গ
তোমার সুরের বাণীর পরশে শান্ত হয়ে যায়! বারবার যেন এই কথা ই বলে.. পাগলমন, প্রাণের নিত্যধারা সারা জগৎ জুড়ে, হৃদয় নয়ন মেলে চেয়ে দেখ, শোক ভোলো..
"নাহি ক্ষয়, নাহি শেষ
নাহি নাহি দৈন্যলেশ
সেই পূর্ণতার পায়ে মন স্থান মাগে ll"
তোমার সুরের বাণীর মালা কণ্ঠে নিয়ে বেঁচে আছি বন্ধু l আমার ক্ষুদ্র আমি র গন্ডি ছিঁড়ে এক বৃহৎ জগতের আলো মেখেছি, ভালোবাসতে শিখেছি, অন্ধকার কে আর ডরাই না প্রিয় l
আর, তোমার মুক্ত প্রাণ আজ ও তৃণে, পল্লবে, পুষ্পে, নদী হিল্লোলে, মেঘের মিনারে অনন্ত সুখের আলিম্পন আঁকে...
দূরে থেকেও হৃদয়ভূমিতে তোমার বাস, বড্ড কাছের তুমি!
ভালো থেকো, ভালো রেখো... আমার 'অজর অমর সত্ত্বার সম্ভার 'l
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴