পথের ডাক
পথের ডাক
চিত্রা পাল
__________
জীবন বড় বিচিত্র আর তার চলনও তেমন ধরণের। নদী যেমন তার স্বভাবগতিতে ছুটে চলে, জীবনও তেমন তার নিজের মতো চলতে চায়। আমার মনে হয় চলেও বা। না হলে তার চলার পথরেখা এমন নতুন নতুন বাঁক নেয় কিভাবে। শিমূল তুলোর বীজ শুনেছি হাওয়ায় ভেসে বেড়ায়। হাওয়া তাকে যেভাবে বয়ে নিয়ে যায় , সেভাবেই সে ভেসে চলে যায় এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায়। হয়তো আমাদের জীবনও তাই। একজন মানুষ একখানে জন্ম নেয়,বেড়ে ওঠে তারপরে কোথায় গিয়ে শিকড় গাড়ে,তারপরে কান্ড হয়ে ডালপালা ছড়িয়ে অভ্যস্ত হয়ে যায়, তার হিসেব পাওয়া সহজ নয়।
তবে অভ্যস্ত জীবনের বেড়া জাল সরিয়ে দিয়ে মাঝে মাঝে পথে বেরিয়ে পড়তে চায় মন। অজানাকে জানতে, অচেনাকে চিনতে চায়। দূরে দূরের জায়গায় অনেক দেখবার আছে, যেখানে পথের ব্যবধান বিস্তর। আবার মিউজিয়ামে গেলে একজায়গায় অনেক দেখবার জিনিস মেলে। সমুদ্রের ধারে রঙ বেরঙের ঝিনুক কুড়িয়ে জড়ো করা, সেগুলো দর্শন বেশ কিছুদিন আমাদের আনন্দ দেয়। তখন সেগুলোই দুর্মূল্য। পরে কালের চলার বেগে ওরা কোথায় হারিয়ে যায়।কখনও দুএকটা দেখতে পেলে স্মৃতি রোমন্থনের আনন্দ দেয়। পাহাড়ের পথে বাঁকে বাঁকে ঔৎসুক্য থাকে এখন কি দেখবো সেই চঞ্চলতায়। অরণ্যের গভীরতায় যেমন পাওয়া যায় প্রছন্ন আদিমতা, নদী মোহনায় মিলিয়ে থাকে নিঃশেষে সমর্পণের অনুভব।
আসলে পরিচিত পরিবেশ থেকে বেরিয়ে পড়তে ভালোই লাগে। এই ভালোলাগাটুকু প্রাণের ধর্ম। এই যে পরিযায়ী পাখির দল কত দূর থেকে কত গিরি নদী পার হয়ে উড়তে উড়তে আসে, ওদের মধ্যে কাজ করে প্রাণের আবেগ। সে আবেগের বশে ওরা পেরিয়ে আসে সুদূর পথের শেষে। পথের ডাক আমাদের মাঝে তেমন হয়তো যাবার আবেগ তৈরি করে। সে আবেগের বশে আমি বার বার বেরিয়ে পড়েছি নানা স্থানে। এই পৃথিবীর বৈচিত্র অসীম,আকাশ অসীম।পথের ডাক সেই বৈচিত্রেরই ক্ষণিক আভাস দেয় যে।সে বৈচিত্রের ডাকে বার বার বেরিয়ে পড়েছি এ দেশ থেকে ও দেশে, এই মহাদেশ থেকে আর এক মহাদেশে।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴