নির্জনেসজনে সঙ্গে রহো/শ্রাবণী সেন
নির্জনেসজনে সঙ্গে রহো
শ্রাবণী সেন
চিরসখা হে
কতদিন ভেবেছি এই সম্বোধনে তোমায় চিঠি লিখব, কিন্তু দ্বিধার বাধা শতপাকে জড়িয়ে ধরেছে বার বার। আজ কেমন করে যে ছিন্ন হল সেই বাধা, ইচ্ছে হল জয়ী, তা আমি জানিনা!
তোমার সাথে আমার পরিচয় আমার জন্ম লগ্ন থেকেই তো! শ্রাবণের অবিরল ধারাপাত সিক্ত কোমল সন্ধ্যায় আমার জন্ম, সবাই বলল - "এ তো শ্রাবণী!" আমার মা বললেন - "এ আমার শুকতারা! তোমার কবিতার পংক্তি উচ্চারণ করে বললেন - " সুন্দরী তুমি শুকতারা, শৈলশিখরান্তে শর্বরী যবে হল সারা দেখা দিও দিকভ্রান্তে!" মায়ের মন তো!
আমার মনে পড়ে, আমার ছোট বেলায় তোমার গান শেখার একটি অনুষ্ঠান হত প্রতি রবিবার। মা শুনতেন নিয়মিতভাবেই, তাই আমিও শুনতাম। সুরেলা গলায় একটি গান, তোমার গান, আমার মনে গেঁথে গেল- "তুমি কোন ভাঙনের পথে এলে সুপ্ত রাতে, আমার লাগল যা তাই ধন্য হল চরণ পাতে.... তুমি কোলে নিয়েছিলে সেতার মিড় দিলে নিষ্ঠুর করে,ছিন্ন যবে হল তার ফেলে গেলে ধূলি পরে....।"
কিচ্ছু তো বুঝতাম না তো অবোধ আমি, তবু কী যে একটা কষ্ট, কী যে ছিল গানটায়.... "ফিরে সে ফাল্গুন হাওয়ায় হাওয়ায় সুরহারা মুর্ছনাতে....।"
তারপর সহজ পাঠের পাতায় পাতায়, কথা ও কাহিনীর পংক্তিতে পংক্তিতে, রবীন্দ্র রচনাবলীর খন্ডে খন্ডে, গীতবিতানের গানে গানে তোমার সাথে ঘনিষ্ঠ পরিচয়।
তোমার গান আমার হৃদয়ে আনন্দ বেদনার অতুলনীয় অনুভব জাগায়!
তোমার লেখা গোরা পড়ে উপলব্ধি করেছি মাতৃত্বের কাছে জাতি, ধর্ম সব তুচ্ছ, মানবতাই পরমধর্ম।
নটীর পূজার শ্রীমতি শিখিয়েছে সত্যের অবিচলতা, স্ত্রীর পত্রের মৃণাল শিখিয়েছে বিশ্বাসের অটলতা। আর কত বলব বল.... চিঠি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে!
শুধু একটি কথাই বলব - তুমিই আমার একমাত্র আরাধ্য ঠাকুর এবং পরম প্রিয়জন! তাই তোমার কথাতেই বলি
- "দেবতারে প্রিয় করি, প্রিয়রে দেবতা। "
তোমার গানের বাণী আমার জীবনে পরম সত্য -
"চির সখা হে ছেড়ো না মোরে ছেড়ো না
সংসারগহনে, নির্ভয়নির্ভর, নির্জনেসজনে সঙ্গে রহো।"
হৃদে রহ হৃদয়েশ--
তোমার চির অনুরাগিণী.....
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴