নিরাপদ ছত্রছায়া/অলক পর্ণা সেনগুপ্ত ব্যানার্জী
নিরাপদ ছত্রছায়া
অলক পর্ণা সেনগুপ্ত ব্যানার্জী
“অনিন্দ্য সেনগুপ্ত” নামটা আর এক ভরসাস্থল সমার্থক আমার কাছে, অন্তত ফেব্রুয়ারির পাঁচ তারিখ রাত প্রায় পৌনে নয়টার আগে অবধি তাই ছিল।
আজ যে “সহজ উঠোনে” অনিন্দ্যদার কথা লিখছি, যা লিখব স্বপ্নেও ভাবিনি কোনোদিন, সেই সহজ উঠোনে ওনার অসাধারণ সব লেখা পড়েই ওনার সাথে পরিচয়, আমিই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিলাম, আর কাকতালীয়ভাবে সেই “সহজ উঠোনের” অনুষ্ঠানেই শেষ দেখা।
খুব বেশি দিনের পরিচয় নয়, খুব বেশি কিছু স্মৃতিও তো নেই, কিন্তু যেটুকু আছে তা বড়ই আন্তরিক, স্নেহসিক্ত ও শ্রদ্ধার।
আমার কিশোরী অন্তর্মুখী মেয়ের বড় কাছের জন, ওর মামা। যার কাছে সমস্যাগুলো বলে পরামর্শ চাওয়া যায় অকপটে।চিরকালের ফিজিক্স কেমিস্ট্রিতে ভয় পাওয়া মেয়েটাকে গল্পের ছলে ফোনেই পড়া বুঝিয়ে দিতেন, কত রকম বই পাঠানো, কত গল্প দুজনের। ওর স্বপ্নের ইউনিভার্সিটিতে সুযোগ পাওয়াতে পরোক্ষভাবে অনিন্দ্যদার অবদান অনেকটা।
এত সুন্দর লিখতেন কিন্তু তা বললেই হেসে উড়িয়ে দিতেন উল্টে আমাকেই সবসময় লেখার উৎসাহ জোগাতেন। ছোটবেলায় পড়েছিলাম, “বিদ্যা বিনয়ং দদাতি” - এর বড় উদাহরণ অবশ্যই অনিন্দ্যদা। সহজ উঠোনে নিকটজনদের লেখা থেকে ওনার সম্বন্ধে কত অজানা কথা কোলাজ চিত্রের মতোই ফুটে উঠছে মনে অথচ আমাদের নিজের কথা নিজেরা ঢাক পিটিয়ে বলার যুগে অনিন্দ্যদা যেন এক আশ্চর্য ব্যাতিক্রম, নীরবে বীজতলা তৈরির কাজ করা এক নম্র মানুষ! খুব ইচ্ছে ছিল ওনার রোববারের সাহিত্য আড্ডায় একদিন যাব, আমার নানা ঝড়ে আর যাওয়া হয়নি, আমাকে বলেছিলেন এবার গুনগুন আসলে অবশ্যই নিয়ে যেতেই হবে। বাকি থেকে গেল তা।
বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান হওয়াতে একজন দাদা বা দিদির নিরাপদ ছত্রছায়া প্রার্থিত আমি সেই দাদাকে যেন খুঁজে পেয়েছিলাম অনিন্দ্যদার মধ্যে, আমার জন্মদিন উপলক্ষ্যে গল্পের বই আর চকলেট ভুলতেন না… বড় মধুর স্মৃতি সব। কিন্তু খাতার অনেক পাতা বাকি থেকে গেল, কলমের কালি ফুরিয়ে গেল হঠাৎ!! আর সেই সাদা কাগজে স্মৃতির জলছাপ হয়ে অনিন্দ্যদা বেঁচে থাকবেন আমাদের মনে…আমৃত্যু।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴