সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
05-November,2023 - Sunday ✍️ By- সৌগত ভট্টাচার্য 274

না-মানুষের জমি-জাগা/সৌগত ভট্টাচার্য

না-মানুষের জমি-জাগা
সৌগত ভট্টাচার্য

বাবলুদের গ্রামে কাঁটাতার পড়বে…

গ্রামের সবার সাথে বাবলুও সরকারি নোটিশটা পায়। বাবলুদের গ্রামের লোকজন আগেও কয়েকবার এই নোটিশ পেয়েছে। বাবলুর বাবা সিরাজ যখন এই একই নোটিশ পেয়েছিল বাবলুর বয়স ওর ছেলে রকেটের মত, নয় দশ হবে। তারপর থেকে কুড়ি বছরে অনেকবার সরকারের লোক এসে নোটিশ ধরায়। নোটিশ হাতে পেলেই গ্রামের লোকজন ব্যস্ত হয়ে মিটিং ডাকে। আজও আজিমুদ্দিনের বাড়িতে মিটিং বসেছে। ছোটবেলা থেকে মিটিংয়ে যাওয়াই যেন বাবলুর কাজ। ইদানীং আর মিটিংয়ে তেমন কোনো কথা বলে না বাবলু, চুপচাপ এক কোণে বসে থাকে। 

আজিমুদ্দিনের বাড়ি মিটিংয়ে এসে সাইকেলটা কাঁঠাল গাছের সাথে হেলান দিয়ে রাখে। বাবলুর বাবা হারিয়ে যাওয়ার পর সাইকেলের স্ট্যান্ডটা খুলে গেছিল, আর মেরামত করা হয়নি। বাবলুর আব্বা সিরাজ বিয়ের সময় এই সাইকেলটা পেয়েছিল। এখন বাবলু চালায়। সাইকেলের পিছনে বসে বাবলুর সঙ্গে ওর ছেলে রকেটও এসেছে মিটিংয়ে।

আজিমুদ্দিনের বাড়ির উঠোনে কাঁঠাল গাছের ছায়ায় ত্রিপল পেতে মিটিংয়ের ব্যবস্থা হয়। পঞ্চায়েত প্রধান প্রাসাদ দাস বলে, "আজকের থেকে তো না, কুড়ি বছর ধরে অনেকবার এই একই নোটিশ ধরাইছে সরকার। কামের কাম কিছু করতে পারে নাই সরকার। কাঁটাতার তো এখনো পাতে নাই। শুনতেছি, এইবার নাকি কাঁটাতার পড়বেই। এখন আমাদের যেইটা করার নোটিসের সঙ্গে যেই ম্যাপটা লাগায় দিসে সেইটা মিলায় দেখতে হবে ঠিকাছে, না নাই! বুঝলেন না!" ম্যাপ হাতে প্রধান প্রাসাদ দাস আজিমুদ্দীনের বাড়ির পেছনে সীমানা দেখতে গেলে গ্রামের লোকও প্রধানের পিছে পিছে যায়, বাবলু আর ওর ছেলে রকেটও ওদের পিছনে হাঁটতে থাকে। আজিমুদ্দিনের বাড়ির পেছন দিকে যতদূর চোখ যায় শুধুই ধানক্ষেত। পুব দিকে বাবলুদের বাড়ির বাঁশ ঝাড়ের কাছে এসে হঠাৎই কাঁটাতার শেষ হয়ে গেছে। বাকি কাঁটাতার পাতার কাজটা নাকি পূজার মধ্যেই শেষ করতে চাইছে সরকার। কুড়ি বছর ধরে কাঁটাতার নিয়ে অনেক টালবাহানা হয়েছে। সদ্য বোনা ধান ক্ষেতের মধ্য দিয়ে একটা আড়াই ফুটের সাদা সিমেন্টের খুঁটির সমানে এসে দাঁড়ায় পঞ্চায়েত প্রধান প্রাসাদ দাস। এই আড়াই ফুটি পিলারগুলোই ইন্ডিয়া বাংলাদেশের সীমা। ওইদিকে বাংলাদেশের পিলার এই দিকে ইন্ডিয়ার কাটাতারের মাঝে বাবলুদের গ্রাম। আজিমুদ্দিন বলে, "তারকাটার ভেতরে চলে যাওয়া মানে তো খাঁচায় বন্দি হওয়া। বাজার হাট ইস্কুল হাসপাতাল অঞ্চল অফিস কাঁটাবেড়ার বাইরে থাকবে…" পঞ্চায়েত বলে, "ব্যাপারটা তো আজকের সমস্যা না, সবই তো বোঝ আজিমুদ্দিন! যদিও কাঁটাতারের ওইপারের গ্রাম হলেও সেটা তো ইন্ডিয়াতেই থাকবে, তোমরা ইন্ডিয়ান, ভোটও ইন্ডিয়ার রেশন ইন্ডিয়ার, সবই না ইন্ডিয়ার।" বিপিন বলে, " আছেই তো এই কয়েক বিঘা জমিন, সেইটা কাটাতারের ওই পারে চলে গেলে বাঁচবো কি করে। এইটার কি বিহিত?" পঞ্চায়েত প্রাসাদ বলে "দুই দেশের বর্ডারের মাঝখানে জমিনকে তো নোম্যানসল্যান্ড বলে এইটা তো সরকারি হিসাবের কথা। তোমরা তো সবাই জন্মের থেকেই জানো, নতুন কথা তো না। এতদিন কাঁটাতার ছিল না এইবার এই কাঁটাতার ফেলা হবে, সেইটা উচ্চ পর্যায়ের সরকারি সিদ্ধান্ত! দেশের সিকিউরিটির ব্যাপার।" বাংলা মিঞা বলে, "কাঁটাতার পড়ুক, কিন্তু আমাদের গ্রামটাকে বাঁচায় যেন পড়ে!" প্রাসাদ দাস বলে, " এই কথাটা আমাদের সরকারকে বুঝাতে হবে মাঝে থাকা মানুষগুলার সুবিধা অসুবিধার কথা! তোমরা আমাদের সাথে থাকেন, সব হবে!" বাংলা মিঞা বলে, "দেশ ভাগের আগের থেকে আমাদের বাপ দাদা এইখানটাই বাস্তুভিটা করে আছে। দেশ ভাগাভাগির ডবল বয়স আগের থেকে আছি। স্বাধীনতার পর বর্ডার টানাটানি হল আর আমরাই কিনা নোম্যানসল্যান্ডের মানুষই হয়ে গেলাম? এইটা কেমন বিচার!" 

মিটিং শেষে বাবলু সবার পেছনে হাঁটে, রকেট সাইকেল নিয়ে হাফ প্যাডেল করে সামনে সামনে যাচ্ছে। বাবলুর মনে পড়ে সেই দিনটার কথা যখন সে প্রাইমারি স্কুলে ক্লাস ফোরের ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছে তখন ওর বয়স ওর ছেলের মতোই। ঈদের পরদিন সকালবেলায় কয়েকজন লোক বাড়ি এসে একটা কাগজ ধরায় ওর আব্বাকে। সেই কাগজ দেখে ওর আব্বা সিরাজ কিছুই বুঝতে পারেনা। কুড়ি বছর আগে সেই কাগজেও আজকের নোটিশটার মত লেখা ছিল গ্রামে কাঁটাতার বসানোর কথা। সেইসময় কাঁটাতার বসানো নিয়ে গ্রামের মিটিংগুলোতে যেত সিরাজ, বাবলুও যেত আব্বার সাথে। 

মিটিং থেকে ফিরে রাতে খাওয়া দাওয়ার পর অনেকক্ষন বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়ে নিজের জোত জমিন গোয়ালের দিকে তাকিয়ে থাকতো আব্বা, বাবলু দেখত। চারিদিকে ঝিঝির শব্দ আর জোনাকির আলো। বাঁশ ঝাড়ের পর থেকে এই জায়গায় কাঁটাতার পড়বে বর্ডার রোড তৈরি হবে, ইন্ডিয়ার মেনল্যান্ড থেকে আলাদা হয়ে যাবে সিরাজের জোতজায়গা। অস্থির লাগতো সিরাজরে, কাউকে কিছু বলেতে পারত না। একদিন রাতে ঘরে এসে অনেকক্ষণ বাবলুর দিকে তাকিয়ে থাকে সিরাজ। বাবলুর চোখ ঘুমে ঢুলে পড়ছে। আব্বাকে চুপ করে থাকতে দেখে মা বলে, "কি হইছে?" "সরকার নাকি অনেক আগেই কইছিল আমার বাড়ির উঠানে কাঁটাতার বসবে!" তারপর আর কী কথা হয়েছিল বাবলু শোনেনি। সারাদিন সাইকেল চালিয়ে দশ বছরের বাবলুর খুব ঘুম পেয়েছিল।

সেদিন ভোর রাতে একটা গোঙানির শব্দ পেয়ে ঘুম ভেঙে যায় বাবলুর মায়ের। দেখে সিরাজ গোঙাচ্ছে আর মুখ দিয়ে গ্যাজলা বেরোচ্ছে। অনেক ধাক্কাধাক্কি জলের ছিটা দেওয়ার পরও যখন গোঙানি থামেনি তখন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় সিরাজকে। কয়েকদিন  চিকিৎসার পর হাসপাতাল থেকে কিছুটা ভালো হয়ে বাড়ি ফেরে সিরাজ। ডাক্তার বলেছিল, " চিন্তায় চিন্তায় মাথায় একটা অ্যাটাক হয়েছে…"। হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে কিছুদিন কিছুটা সুস্থ ছিল সিরাজ। শুধু ঝিমিয়ে পড়েছিল। সে রাত্রি হলে বাড়ির উঠোনে এসে দাঁড়াত আর ফাঁকা অন্ধকার মাঠের দিকে শুন্য চোখে তাকিয়ে থাকতো। অন্ধকারে চোখ ভিজে গেলে সে খবর কেউ রাখে না!

মাথা অ্যাটাকের পর থেকে অনেকটা অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল সিরাজ । বাবলুর মা বলেছিল, "এত চিন্তা করো না সবার যা হওয়ার আমাদেরও না তাই হবে।"  হাটে যেতেও তার ইচ্ছা করে না। সারাদিন কোনো কথা বলত না। বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পড়লে উঠোনে দাড়িয়ে জমির দিকে তাকিয়ে থাকে, যে জমিতে রাতে জোনাকি জ্বলে। এই জমির সবটাই কাটাতারের ভেতর চলে যাবে। কী করবে সিরাজ বউ বাচ্চা মা নিয়ে। শুধু জমি বাড়ি না যেন প্রাণটাই চলে যাবে। সরকারের সিদ্ধান্তকে তো আর সিরাজের মত মত তুচ্ছ মানুষ পাল্টাতে পারে না! 

মঙ্গলবার সকাল হাট বসে। সিরাজ বাবলুকে বলেছিল, "মাচাং থেইকে পাটের আটিগুলা সাইকেলে তোল…" বাবলু  তুলেছিল। সেদিন হাটে গিয়ে পাট বেচেছিল সিরাজ। বাবলু  ইস্কুল টাইমে পাগলা মন্টুর সাথে ড্রেস পরে স্কুলে গিয়েছিল। বাবার সাথে বাবলুর যখন দেখা হয় সিরাজের পাট বেচা হয়ে গেছে। একটা ব্যাগে করে সপ্তাহের খরচ দিয়ে বলেছিল, "এইটা সুবলের দোকানে রাখলাম স্কুল থেকে ফেরার পথে বাড়ি নিয়ে যাস… গরুগুলোকে দেখিস… " 

স্কুল থেকে বেরিয়ে সুবলের দোকান থেকে খরচ নিয়ে বাড়ি ফিরেছিল বাবলু। বিকেল পেরিয়ে রাত হয়, রাত পেরিয়ে সকাল, সিরাজ ফেরে না। গ্রামে খোঁজ নেওয়া শুরু হয়, লোকটাকে পাওয়া যায় না। শুধু সিরাজের সাইকেলটা পাওয়া যায় হাট থেকে। বাবলু সেটা হাফ প্যাডেল করে বাড়ি নিয়ে এসেছে। বাড়ি ফিরে বাবলু দেখে সাইকেলের স্ট্যান্ডটা নেই। হলদিবাড়ি জলপাইগুড়ি শিলিগুড়ি সব জায়গায় খোঁজা হয় সিরাজকে। বাবলুর মা পঞ্চায়েতের কাছে যায় বাবলুকে নিয়ে। পঞ্চায়েত বলে, "সব জায়গা খুঁজছি কই কোনো খোঁজ তো পাই না।" মিনাজুল প্রাসাদ দাসের  কথায় একদিন জলপাইগুড়ির পুলিশ মর্গে নিয়ে গেছিল বাবলুকে। বাবলুর সেদিন সব বডির মুখ একই রকম লেগেছিল। পরের দিন থেকে জ্বর চলে আসে ওর।

এর মাঝে কাঁটাতার পাতা নিয়ে আরো কয়েকবার মিটিং হয়। বাবলু আর ওর মা কোণায় দাড়িয়ে থাকে যদি সিরাজের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়।  সদানন্দ বলে, "কাঁটাতার পড়বে বলে সিরাজের ব্রেনটাই শর্ট হয়ে গ্যছে! " পঞ্চায়েত প্রধান বলেছিল, "কি করবে চাষবাস করে বিবি ছাওয়া নিয়ে সংসার, তার জমিনের সবটাই চলে গেল কাঁটাতারের ভিতরে, বাঁচবে কি কইরে… ট্যানশনেই লোকটার মাথা গড়বড় হয়ে গেল।" 
সদানন্দ বলে, " তারকাটার এই পারে বাড়ি ঘর কিছু একটা করে নিলেই তো হত…"! পঞ্চায়েত  বলেছিল, "সেইটা কি মুখের কথা? একবার কাঁটাতারের ভেতরে জমি চলে গেলে সেই জমি তো জলের দামেও বিক্রি করতে পারবে না। বোঝো না। সেই টাকা দিয়ে কি করে এই পারে জমি কেনা যায়!" সব কথা শোনে কিন্তু সিরাজের কোনো খবর পায় না। বাবলু সাইকেল ঠেলে আর মা পাশে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ি ফিরে আসে। 

বাবলুও দশ বছর বয়সে বুঝে গেছে, ওদের গ্রামে সরকার কাঁটাতার পাতবে আর চাষের জমি কাঁটাতারের ভেতরে চলে যাবে সেই চিন্তায় ওর বাবা হারিয়ে যায়। সিরাজ চলে যাওয়ার পর বাড়িতে অনেক কিছু পাল্টেছে বাবলুর জীবনে। মঙ্গল বার করে হাটে এখন আর খরচ আনতে যাওয়ার হয় না ওদের। তাই আব্বাকে খুঁজে বের করা ওর খুবই দরকার, আবার যাতে আগের মত মঙ্গলবারের হাট হয়, খরচ আসে বাড়িতে। আব্বাকে খুঁজে আনার জন্য সকাল বেলায় বাবলুর মা বাবলুকে বের করে দেয়। বাবলু স্ট্যান্ড ভাঙা সাইকেল হাফ প্যাডেল করে রোজ সকালে এদিক সেদিক পঞ্চায়েত অফিস থানার আসেপাশে ঘুরঘুর করে, সরকারি অফিস দেখলেই দাঁড়িয়ে থাকে। কিছুদিন আগে তিস্তার চর বারবার অনেকটা হেঁটে বাবাকে খুঁজতে গেছিল। বাবলুর স্কুলে যাওয়া হয় না আর। 

বাবা ফেরে না। বাবলু এখন মঙ্গলবার করে সাইকেল নিয়ে হাটে যায়। হাট করে কোনো কোনো দিন অঞ্চল অফিসের দিকে যায়। বাবলুর মনে হয় অঞ্চল অফিস থেকে সরকারি কাজকর্ম হয় তাই ওরাই জানে কবে কাঁটাতার পড়বে। অঞ্চল অফিসে গিয়ে সে ওই অফিসের আর্দালি সাধনকে জনকে জিজ্ঞেস করে, "কাঁটাতার কবে পড়বে কোনো খবর আসলো?" সাধন বলে, "কাঁটাতারের খোঁজ রাখা কি আমার কাজ নাকি? সরকারকে বল গিয়ে?" সরকার যে কে বাবলু বুঝে পায় না। 

সিরাজের হারিয়ে যাওয়ার বেশ কয়েক বছর পর বাবলুর বিয়ে হয়, মা মারা যায়, বাবলুর ছেলে রকেট জন্মায়। ছেলের জন্মের পর থেকে বাবলুর বুকের ভিতরে একটা ভয় চাপ ধরে থাকে। বাবলুর নিজেকে সিরাজ মনে হয়। মাঝেমাঝে ঘুম ভেঙে ধরফর করে উঠে পড়ে, ছেলের মুখের দিকে তাকায়, অস্থির হয়ে ঘাম মুছতে শুরু করে। সাবিনা বলে "কি হইছে তোমার?" বাবলু বিড়বিড় করে বলে, "আমাদের বাড়ি জোত জমি যদি কাঁটাতারের ভেতরে চলে যায়! যাবে তো একদিন না একদিন… সরকার নাকি আগেই বলছিল!"  সাবিনা বাবলুকে বুকে জড়িয়ে ধরে। বাবলু তো সরকার বলতে শুধু ওই কাঁটাতার পাতার নোটিসের কাগজটাই বোঝে। নোটিসের কাগজের মধ্যে একটা দমবন্ধ চাপা ভয় আছে, বাড়ি জমি ছেড়ে চলে যাওয়ায় আছে, আব্বার হারিয়ে যাওয়া আছে। যে ভয় বাবলুর একার, সেটা সে কাউকে বলতে পারে না, সাবিনাকেও না। এই ব্যথার মত একটা ভয় নিয়ে বাবলু চাষ করে হাট করে মসজিদে নামাজ পড়ে অঞ্চল অফিসে যায় মিটিংয়ে যায় রাতে সাবিনাকে আদর করে রকেটকে চুমু খায়… বাবলু শুধু আব্বার সাইকেলের স্ট্যান্ড টা মেরামত করতে ভুলে যায় বছরের পর বছর।

নোটিশ পেলেও বাবলুর গ্রামে কাঁটাতার পড়ে না, বাবলুর আব্বা ফিরে আসে না। কুড়ি বছর আগে নোটিশ পাওয়ার পর রাতের বেলায় উঠোনে দাঁড়িয়ে জমির দিকে তাকিয়ে থাকতো সিরাজ। এখন বাবলু উঠোনে দাঁড়িয়ে রাতের বেলা শুধু মাঠের দিকে ক্ষেতের দিকে গোয়াল ঘরের দিকে অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে থাকে। আজও একই ভাবে ধান ক্ষেতে চাঁদ ওঠে, চাঁদের আলো নদীর জলে পড়ে, গোয়াল ঘরে হেলান দেওয়া স্ট্যান্ড ছাড়া সাইকেল দাড়িয়ে থাকে, কুয়াশায় সাদা হয় মাঠ, বৃষ্টি হয় অমাবস্যা পূর্ণিমা হয়, জোনাকি ভরে যায় আকাশ তারায় ভরে ওঠে। তারা আর জোনাকি মিটমিট করে। তারারা জোনাকি হয়ে যায়, জোনাকিরা তারা। পরস্পর ভূমিকা বদল করে। যেন বাবলু আর সিরাজ আজ ভূমিকা বদল করেছে। 

বাবলু ঘরে ফিরে আসে, দেখে সাবিনা ওর জন্য অপেক্ষা করছে আর রকেট সারাদিন স্ট্যান্ড ছাড়া সাইকেল চালিয়ে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। বাবলু ঘুমন্ত রকেটের গালে চুমু খায়। সিরাজ যেমন বাবলুর গালে চুমু খেত। বাবলুও রকেটের পাশে ঘুমিয়ে পড়ে। 

রকেট সাইকেলে হাফ প্যাডেল চালিয়ে যাচ্ছে, জিপি অফিসে যাচ্ছে, থানায় যাচ্ছে, পঞ্চায়েত প্রধানের বাড়ি যাচ্ছে, স্ট্যান্ড ভাঙা সাইকেল নিয়ে। কিছুতেই ওর বাবা বাবলুকে খুঁজে পাচ্ছে না রকেট। এবার আল ধরে হাফ প্যাডেল করে কাঁটা তারের দিকে চলে যাচ্ছে রকেট। 

কার্তিকের রাতে ঘাম দিয়ে ঘুম ভেঙে যায় বাবলুর। ধরফর করে বিছানা থেকে ওঠে। সে দেখে রকেট সাবিনাকে জড়িয়ে অকাতরে ঘুমাচ্ছে। বাবলু প্রায় এই রকম কিছু একটা স্বপ্ন দেখে। ঘেমে উঠে বাবলু উঠোনে এসে দাঁড়ায়। দেখে –

দূরে অন্ধকার নোম্যানসল্যান্ডে বাবলুর বাড়ির উঠোনে সিরাজের স্ট্যান্ড ভাঙা সাইকেলের গায়ে হাজার হাজার জোনাকি মিটমিট করছে।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri