নস্টালজিয়া/ভাস্বতী রায়
নস্টালজিয়া
ভাস্বতী রায়
দেখতে দেখতে পূজো শেষ হয়ে গেল। পুজো আসবে আসবে বলে যে খুশির আমেজটা থাকে সেটা ঢাকে কাঠি পড়লে চারদিন যেন এক লহমায় ফুরিয়ে যায়। এবারের পূজো আরো অন্যরকম কাশফুলের রং বড্ড ফ্যাকাশে, শিউলির গন্ধেও যেন কোন মাদকতা নেই। পুজোর দিনগুলো তাই শুয়ে বসে কাটিয়ে দেওয়া।
সেদিন একাকী অনেকটা সময় - স্মৃতির ভীড়ে কত কথাই না মনে পড়ছিল।
বয়স যত বাড়ছে তত যেন নষ্টালজিয়ায় বাঁচছি।পুরোনো সব কিছু ভালো মনে হয়, নতুন সবকিছু অন্তঃসারশূন্য একাকীত্ব।
দুপুরের চড়া রোদেও যেন সাদা নরম মেঘের গন্ধ। আর মন জুড়ে ছুটি ছুটি ভাব। হালকা হিমেল হাওয়ায় বইয়ের পাতা বন্ধ হয়ে আসছে। আমি চোখ
বন্ধ করে খুঁজে যাচ্ছি সেই মেঠো পথ আর বাজারের মাঝে সামিয়ানা দিয়ে ঘেরা ছোট্ট পুজো মন্ডপের ভীড়।
ঠাকুর আসছে সব বাড়িতে সাজো সাজো রব। ঘরবাড়ি পরিষ্কার করা। বিভিন্ন ধরনের নাড়ু বানানো। আর আমাদের সেই সারাবছর ধরে পূজো সংখ্যার অপেক্ষা করা। পুজোতে এত জামাকাপড়ের বাহার
তখন ছিল না। একটা বা দুটো, কোন কোন বছর তাও হত না। কিন্তু অনেক আনন্দ হত।ওই একটা জামার ভাঁজের গন্ধ মাতিয়ে রাখত গোটা পুজো।
পুজোর সময় গরীব চাষীর পাট বেচে বাড়ির সবার জন্য সস্তার জামাকাপড় দিতে পেরে নিয়ন বাতির মতোই জ্বলজ্বল করত দুচোখ।
গ্রামের হাটগুলো তখন ম্রিয়মাণ হয়ে যায়নি। বাই ওয়ান গেট ওয়ান ট্যাগ লাইন-এর ফাঁদে তখন আমরা পা দিইনি। বিশ্বকর্মা পুজোর পর থেকে হত দোকানে ভীড়, চলত ষষ্ঠী সপ্তমী পর্যন্ত। মোবাইলের স্ক্রীনে তখন ভেসে উঠতো না জামা জুতোর ছবি। কাপড় সুতি না পলিয়েস্টার সেটা নিয়ে বাকবিতন্ডা করে জামাকাপড় কিনতেন আমাদের বাবা-ঠাকুরদারা।
ম্যনিকুইন দামের ট্যাগ-এর ফাঁস ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকত না তখন। নতুন জামা বালিশের পাশে রেখে ঘুম, স্বপ্নে লেপ্টে থাকত নতুন জামার গন্ধ। এড টু কার্ট, বাই নাউ এই শব্দগুলো খেঁকিয়ে হাসে এখন ছোট দোকানদারদের দেখে। আর বড় দৈত্যাকার মলগুলো বন্ধ হতে বসা কাপড় হাটিগুলোর অন্ধকার দূর করে আলোর রোশনাই-এ।
বিকেল হলেই গ্রামের সকলে মিলে হাঁটতে হাঁটতে ঠাকুর দেখতে যাওয়া আর ফেরার সময় প্যান্ডেলের টিউব লাইটের আলোকে পেছনে ফেলে আবার পরের বছরের অপেক্ষা করা।
তারপর সব পরিচিত দৃশ্যগুলো বদলে যেতে থাকল। ঠিক ম্যাজিশিয়ান-এর ভ্যানিস-এর মতো নয়। ধূর্ত আর্টিষ্ট-এর সুচারু ডাষ্টার দিয়ে মুছে ফেলার মতো।
টিউবলাইটগুলোর আলো খসে গিয়ে তৈরি হল বড় বড় লাইটিং-এর গেট। অনেক দূর থেকে দেখা যায় সেই আলোর ঝলকানি। সেই আলো কি দূর করতে পেরেছে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর অন্ধকারকে? প্রতিটি বাড়িতে হয়েছে উচু প্রাচীর, লোহার গেট। আমাদের ছেলে মেয়েদের কাছে আমাদের ছেলেবেলার কথাগুলো গল্পকথা মনে হয়।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴