সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
10-November,2024 - Sunday ✍️ By- শিখা সরকার 160

নক্ষত্র/শিখা সরকার

নক্ষত্র 
শিখা সরকার 
-------------------

অশান্ত পরিবেশ, নিরাপত্তাহীনতা, প্রবঞ্চনা, প্রতারণা আর পদে পদে লাঞ্ছনার শিকার হওয়ার ভয়ে গুটিয়ে থাকা, এর মধ্য দিয়েই চলছে আমাদের জীবনযাপন। থেমে তো নেই? যেমন করেই হোক এগিয়ে যেতেই হবে। মন খারাপের বিষাক্ত বাতাসের পর্দা ভেদ করে যখন একটুখানি মধুর মুহূর্তের আলো এসে পড়ে, তা তোলা থাকে স্মৃতির রঙিন পাতায়।

মধ্য ডিসেম্বরের এক রাতের কথা,রাত আটটার সময় আমি গিয়েছিলাম ডাক্তারবাবুর চেম্বারে আমার মায়ের সাপ্তাহিক ব্লাড রিপোর্ট দেখাতে। বেশ কয়েক মাস হল মা শয্যাশায়ী, বিভিন্ন টেস্টের রিপোর্ট দেখে এবং আমার মুখে মায়ের শারীরিক উপসর্গ শুনে ডাক্তারবাবু প্রেসক্রিপশন্ লেখেন। এভাবেই চলছিল মায়ের চিকিৎসা। সাধারণত রাত নয়টার মধ্যেই আমার রিপোর্ট দেখানো হয়ে যায়।
সেদিন ডাক্তারবাবু দেরিতে এসেছেন, তাই আমি যখন চেম্বার থেকে বেরিয়ে এলাম ঘড়ির কাঁটা তখন রাত এগারোটার ঘর পেরিয়ে গেছে। শীতের রাত কুয়াশায় চারদিক আবছা, কি করব ভাবছি। দু-একটা টোটোর দেখা পেলাম তারা যেতে রাজি হল না, এখান থেকে বাড়ি প্রায় দু'কিলোমিটার। মোবাইল ফোন সঙ্গে আছে কাউকে ডেকে নিতেই পারতাম কিন্তু আমি চাইনি কাউকে বিরক্ত করতে। তাছাড়া মায়ের চিকিৎসার ব্যাপারে অন্য কাউকে পাঠালে আমি নিজে শান্তি পেতাম না। মায়ের শারীরিক অবস্থার কথা আমার থেকে কেউই বেশি বুঝবে না।আজ আমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে হয়তো এতক্ষণ অপেক্ষা করত না। ফোনে ছেলে-মেয়েকে না ডাকার আরেকটি কারণ, আমি যেমন আমার মায়ের জন্য উদ্বিগ্ন, ওরাও তো তেমনি তাদের মায়ের জন্য চিন্তা করবে হয়তো আমার ওপর রাগ করবে একা এত রাত পর্যন্ত চেম্বারে থাকার জন্য।

ভাবছিলাম ভয় কিসের? এ তো আমার নিজের শহর, আমার জন্মভূমি। যদিও এখন সময় ভালো নয়,একটু সাবধানে চললেই হবে।গরম চাদরটা ভালো করে গায়ে জড়িয়ে হাঁটতে লাগলাম। বাড়িতে হয়তো ভাবছে আজ আমার ফিরতে দেরি হবে। প্রতিদিন বিকেলে আমি মায়ের বাড়ি যাই আর রাত এগারোটা থেকে সাড়ে এগারোটার সময় বাড়ি ফিরি। পনের মিনিটের পথ, এ আমার নিত্য দিনের রুটিন।

কিছু দূর যাওয়ার পর পেছনে টোটোর শব্দ পেলাম, দাঁড়িয়ে হাত দেখালাম ফাঁকা টোটো, আমার গন্তব্যস্থল শুনে চালক যেতে রাজি হল না।সে এগিয়ে গেল,আজ হেঁটেই ফিরতে হবে। পেছনে একটা বাইক আসছে আমি সচেতন হলাম, বাইকআরোহী আমাকে দেখে নিয়ে এগিয়ে গিয়ে টোটোকে থামালো।ওরা কথা বলছিল আমি তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে ওদের পাশ কাটিয়ে যাব ভাবছি, শুনতে পেলাম বাইক আরোহী টোটো চালককে বলছে আমাকে পৌঁছে দিতে। চালক কিছুতেই যাবে না সে এগিয়ে গেল, আমিও হাঁটছি বাইক আরোহী আমাকে ডাকলো, কাকীমা কোথায় যাবেন? দাঁড়িয়ে আমার পাড়ার নাম বললাম। ছেলেটি বলল, বাইকে উঠুন আমি আপনাকে পৌঁছে দেবো।এত রাতে টোটো পাওয়া যাবে না। বললাম, আমি হেঁটে যেতে পারব।সে বললে, আপনার ছেলে যদি এসে বলত আপনি তার কথা শুনতেন না? আমার মায়ের সঙ্গে যদি এমনি ভাবে দেখা হয়ে যেত আমি কি মাকে ফেলে চলে যেতে পারতাম? আপনিই বলুন না? কথাগুলো শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমার বুকের ভেতর যেন হাজার তারার ঝিকিমিকি অনুভব করলাম, চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসছে।এ যুগেও এমন মানুষের দেখা মেলে?একটু ইতস্তত করে বাইকে উঠে পড়লাম। ছেলেটি কথা বলে চলেছে আমি হ্যাঁ, না করে উত্তর দিয়েছি আর পথ নির্দেশ করছি। ভাবছি এই সময়ে দাঁড়িয়ে নব প্রজন্মের কাছ থেকে এমন দুর্লভ মানবিকতা সত্যিই আশা করা যায় কি?এমন যেচে সাহায্য করার হৃদয় থাকে ক'জনার! আমার কাছে বিশ্ব জগৎ তখন আলোয় আলোকিত।একই মুহূর্তে আলো আঁধারের পাশাপাশি অবস্থানে আমি বিহ্বল।

বাড়ির সামনে আমাকে নামিয়ে দিয়ে চলে যাওয়ার সময় বলল,আসি কাকিমা বললাম, সাবধানে যেও। তার যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে আছি,বাইকের টেল লাইটের দূরত্ব বাড়ছে। লাল আলোটি আমার কাছে তখন উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো মনে হল। আকাশের দিকে তাকালাম সেখানেও সহস্র তারার ঝিকিমিকি।

অন্ধকার পথের দিশারী আকাশের নক্ষত্র আর টেল লাইট আমার কাছে একাকার। মনে হল ওই লাল আলো এক ভবিষ্য নক্ষত্র যেন অন্ধকার ভেদ করে ছুটে চলেছে আলো বিকিরণ করতে করতে।

অদ্ভুত এক প্রশান্তি নিয়ে কলিং বেলের সুইচে হাত রাখলাম। কানে বাজছে, আমার মায়ের সঙ্গে যদি এমনি ভাবে দেখা হয়ে যেত ...।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri