সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon

দেশের মধ্যে বিদেশ : ডুয়ার্সের রঙ্গ/পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়

দেশের মধ্যে বিদেশ : ডুয়ার্সের রঙ্গ
পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় 

রঙ্গ ভ্যালি কে  ডুয়ার্সের হিডন হ্যামলেট বলা হয়। পাহাড়ের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া জলঢাকা নদীকে এখানে বেশ অচেনা মনে হয়।  পাশ দিয়ে ঘন অরণ্যে ঘেরা এই অঞ্চলটা কালিম্পং জেলায় পড়ে।  এটি আসলে ডুয়ার্সের ওয়েষ্টার্ন রিজিয়নের মধ্যে পড়ে। বহু ছোট বড়ো  হোম স্টে এই গ্রামে তাদের ব্যাবসা জমিয়ে বসেছে। হোম স্টের জানলা দিয়ে দেখা যায় সবুজ বনাঞ্চল। জলঢাকা নদীর ফটোজেনিক দৃশ্য দেখে  বোঝাই দায়, এই গ্রাম এই দেশে,  নাকি বিদেশে। কোথাও যেন দূর দেশে এক অজানা দ্বীপের মাঝে একলা অবসরে পড়ে থাকার আনন্দ নিতে চাইলে এই জায়গার জুড়ি মেলা ভার।  নিজেকে বন্ধু করে নিতে শেখা খুব কঠিন কাজ। ঘন্টার পর ঘন্টা নিজের সাথে কথা বলার মজাই আলাদা। নিরবতা কত প্রশ্নের উত্তর,  সেই ভাবনা ভাবা অর্থাৎ কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার উপযুক্ত জায়গা এই নিরিবিলি গ্রাম। এখানে এসে মনে হয় শব্দই যত নষ্টের গোড়া।  প্রতিটি মুহুর্তই তাই পলে পলে উপভোগ করতে থাকলাম।  কিন্তু বাধ সাধলো হোম স্টের কর্মীর গলার শব্দে। 

স্যার খানা মে কেয়া রহেগা? 

বেশ এই উঁচু লম্বা ছিপছিপে চেহারার ছেলেটা মুম্বাইতে থাকলে নির্ঘাৎ সিনেমায় চান্স পেত। হ্যাঁ কার্তিকের কথাই বলছি।  হৃত্তিক রোশন অর্থ কষ্টে  থাকলে বোধকরি এমনটাই দেখতে হতো। বেশ ভালো গল্প বলে। গল্পের মধ্যে কিছু কিছু ঘটনা ওর বানানো বলে মনে হয়। সৌহার্দ্য বলে, " বাবা গুল মারা লোকেরা এমনটাই হয়।"

গতকাল রাতে খাবার দিতে এসে এমন গল্প জুড়ে দিল আমরা মোহিত হয়ে গেলাম। কথা বলার ফাঁকে জামার বুক পকেট থেকে একটা পোস্টকার্ড সাইজের ছবি বের করে কপালে ঠেকালো। সেটা কার ছবি জানতে চাইলে বলল ছবিটা উঞ্জা দেবীর। সেই দেবীর ছবি পকেটে রাখার পরে সে ডিয়ার লটারির নব্বই হাজার টাকা জিতেছে। 

ছবিটা দেখতে চাইলে বলল খাওয়া শেষ হয়ে গেলে হাত পা ধোয়ার পরেই সেটা আমি দেখতে পারব। আমি কাস্টার্ড এর বাটি অর্ধেক ফেলে রেখে হাত পা ধুয়ে কার্তিকের কাছে ছবিটা  দেখতে চাইলাম। 

ছবিটা ছিল একটা নদীর।  তার পাশে কার্তিকের কথা অনুযায়ী উঞ্জা দেবী।  দেবী আসলে একজন উপজাতি মহিলার। যিনি এই হোম স্টে তে এসে রাত কাটিয়ে গেছেন।  এক'শ সাত বছর তার বয়স।  ভাঙা ভাঙা হিন্দি বাংলা মিশিয়ে কার্তিক যা বলল তার সারমর্ম হল এইরকম  :

পাঞ্জাবের হুঞ্জা নদীর উপত্যকা থেকে একজন গেষ্ট এই হোম স্টে তে একরাত ছিল। সেখানে হুঞ্জা উপজাতির বাস। তারা বিনা মশলায় সিদ্ধ খাবার আর কাঁচা শাক সবজি খাবার খাওয়ার পাশাপাশি একজাতীয় হার্বাল চা দিনে দুই বার করে পান করে। এই খাদ্যাভ্যাসই তাদের নিরোগ আর  দীর্ঘজীবনের চাবিকাঠি।  আমি গল্পের মাঝেই ধর্মপত্নীর নাসিকা গর্জনের শব্দ পেলাম। অর্থাৎ সাউন্ড স্লিপ ইজ গোয়িং অন। কার্তিক আমাকে পরদিন সকালে উঞ্জা টি ( হুঞ্জা টি) খাওয়াবে কথা দিয়ে, গুড নাইট বলে বিদায় নিল। 

নাক ডাকবে নাই বা কেন?  রঙ্গ উপত্যকার চড়াই উৎরাই এর রাস্তায় সারাদিন টই টই করে আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম। ইচ্ছে ছিল কয়েকটি ছবি আপলোড করব। দু'চারটে ছবিতে লাইক দেব,  একটা কবিতা লিখব, তা আর হল না।

হুঞ্জা টি আসলে গুড়ের লাল চা। আদা, দারচিনি, লবঙ্গ, গুড় আর পুদিনা পাতার গরম সরবত। রমা মজা করে বলল ঠান্ডা হলে আর গুড়ের বদলে কাঁচা লঙ্কা দিলে এটা মুসুরির ডালের সাথে চাটনি হিসেবে খাওয়া যেতে পারে।


 কথায় বলে শেষ ভালো যার,  সব ভালো তার। একেবারে রক্তারক্তি কান্ডের অভিজ্ঞতা নিয়ে ঘরে ফিরলাম। এখানে বর্ষায় খুব জোঁকের উৎপাৎ। কার্তিক বার বার সতর্ক করে দেওয়ার পরও কিভাবে জোঁক বাবাজী জুতো বেয়ে, পায়ে উঠে , রক্ত খেয়ে  একেবারে কালো আঙ্গুর ফল হয়ে লেপ্টে ছিল।  হঠাৎই সাদা জুতো রক্তে লাল হয়ে উঠলো। 

 এবারের রঙ্গ এসে  জঙ্গল ভ্রমণের শেষটা সুখকর না হলেও এমন মজার সব কাহিনি ঝুলিতে ভরে নিয়ে আসলাম সে সব গল্প অন্য কোনো অবসরে শোনাবো।

ইন্দো ভুটান সীমানার এই সবুজ বনভূমি রঙ্গ  উত্তর বঙ্গের বিভিন্ন অফ বিট জায়গা গুলোর মধ্যে এক অতি উৎকৃষ্ট স্থান। বৃষ্টি ভেজা পরিবেশে মূর্তি নদী কে টা টা জানিয়ে চাপড়ামারি ফরেষ্টের ভিতর দিয়ে চাপরামারি কুমালি রোড ধরে কুমালি মোড় অবধি রাস্তার দুপাশের শোভা থেকে চোখ ফেরানো যায় না। সবুজ বৃষ্টি ভেজা গাছগুলোর কানা কানি শুনতে পাওয়া যায়।  বাতাসে বুনো গন্ধ ভেসে আসে। এই রাস্তায় কোন বন্য জন্তুর দেখা না মিললেও  সব সময়ই মনের মধ্যে একটা এন্টিসিপেশন কাজ করে চলে।  যারা অতিরিক্ত মাত্রায় চিন্তার ভারে ভারাক্রান্ত তাদের জন্য এই রাস্তা অষুধের মতো কাজ করবে।  শিলিগুড়ি শহর থেকে মাত্র ৯৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই দেশের মধ্যে বিদেশ।  তিন ঘন্টার দুরত্বে অবস্থিত   এই উপত্যকার কাছেই আছে লাভা মনেষ্ট্রি তাই প্রহরে প্রহরে তার প্রার্থনা সঙ্গীত শুনতে পাওয়া যায়।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri