সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon

দুর্গোৎসব ও জলপাইগুড়ি/পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়

দুর্গোৎসব ও জলপাইগুড়ি
পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় 

তিস্তা বঙ্গের বিভাগীয় শহর জলপাইগুড়ি,  গোটা উত্তরবঙ্গের শিল্প সংস্কৃতির পীঠস্থান।  কোলকাতা থেকে ৬০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই শহর, শারদোৎসবের প্রাক্কালে বর্ণময় শোভায় সেজে ওঠে। সুন্দরী  তিস্তা নদী ও শহরের মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া করলা নদীর ঘেরাটোপে এই জনপদে, আনন্দময়ীর আগমনে, আনন্দে দশদিক  ছেয়ে যায়। 

কোলকাতা থেকে দার্জিলিং মেল,  পদাতিক এক্সপ্রেস, উত্তর বঙ্গ এক্সপ্রেস বা তিস্তা তোর্সা এক্সপ্রেসে  রাতের ট্রেনে চেপে বসলেই পরদিন সকালেই  পৌছে যাওয়া যায় বঙ্গ সংস্কৃতির পীঠস্থান এই শহরে।
পশ্চিম বঙ্গে সরকারের টুরিজম ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের অতিথি নিবাস" তিস্তা আবাস " ছাড়াও গোটা কুড়ি হোটেল রয়েছে শহরজুড়ে। আগেভাগে বুকিং করা থাকলে তো ভালোই। না থাকলেও এ শহর অত্যন্ত অতিথিবৎসল। এখানে সবারই জন্য আশ্রয় রয়েছে। ১৫ কিলোমিটার দূরে তিস্তা নদীর পার করলেই গরুমারা, লাটাগুড়ি, বাতাবাড়ি, চালসা, মেটেলি, মালবাজার, ওদলাবাড়িতে শ'য়ে শ'য়ে রিসর্ট ও হোম স্টে রয়েছে। 

পঞ্চমী তিথি বা দেবীর বোধনের আগেই মন্ডপ গুলোতে প্রতিমা এসে যায়। বর্ণময় আলোক সজ্জায় সেজে ওঠে মন্ডপ সহ গোটা শহর।  এই শহরের একটা বিষয় লক্ষণীয় সেটা হল, এই শহরের প্রবেশ পথগুলোতে প্রথম মন্ডপের আলোক সজ্জা শেষ হতে না হতেই আর একটা মন্ডপের আলোক সজ্জা শুরু হয়ে যায়।
শহরের সব পূজোগুলোতে আড়ম্বরপূর্ণ উদবোধনের ঘটা না থাকলেও, 'তরুণদল', 'দিশারি ', 'জাগ্রত সংঘ','অরবিন্দ ব্যায়ামাগার পাঠাগার ও ক্লাব', 'শহরতলী' 'শান্তিপাড়া নেতাজী মর্ডান ক্লাব', ' রায়কত পাড়া বারোয়ারী ',  ' নরেন ভিলা"  পান্ডাপাড়া সার্বজনীন ", 'পান্ডাপাড়া কালীবাড়ি দূর্গাপজা কমিটি ' প্রভৃতি পুজো গুলোতে স্থানীয় মন্ত্রী বিধায়করা ফিতে কেটে উদবোধন করে থাকেন।

আদরপাড়ায় "রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের " দুর্গাপূজার দিকে সব দর্শনার্থীদের আগ্রহ বিশেষ ভাবে লক্ষ করা যায়।অষ্টমী তে কুমারী পুজো এখানকার বিশেষ আকর্ষণ। এছাড়া রোজ সন্ধ্যায় সুবিশাল মাঠ জুড়ে খিচুড়ি ভোগ খাওয়ানোর বিষয়টা ধারাবাহিক ভাবে শহরবাসীকে মুগ্ধ করে। 

বৈচিত্রপূর্ণ আদরপাড়া ক্লাব ও পাঠাগার এবং প্রগতি ব্যামাগারের  বনদূর্গা খুবই দর্শনার্থীদের মনকে টানে।

জলপাইগুড়ির প্রাচীন বাড়ির  পুজোগুলোর মধ্যে, 'নিয়োগী বাড়ির দুর্গাপুজো', ' কল্যাণী হাউসের দুর্গাপুজো  '  এবং 'ভুঁইয়া বাড়ির ' দুর্গাপূজার বিশেষ  নাম আছে।  

"নিয়োগী বাড়ির দুর্গাপুজোয়" সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশিত হয়। 

"ভুঁইয়া বাড়ির দুর্গাপুজো " তে সাত সাগরের জল মা'কে দান করা হয়। একবার এই বাড়ির  পুজো চলাকালীন মায়ের মূর্তির সামনে জীবন্ত সাপ এসে উপস্থিত হয়েছিল। 

জলপাইগুড়ি শহর ছাড়াও ময়নাগুড়ি, ধূপগুড়ি, মালবাজারেও মহা সাড়ম্বরে দেবী দূর্গার আরাধনা হয়। কথিত আছে নিষ্ঠার সাথে দেবী দূর্গার পুজো করলে অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল লাভ হয়।

জলপাইগুড়ির রাজবাড়ীর দুর্গাপূজারও এক ঐতিহাসিক পটভূমি আছে।  রাজবাড়ীর মৃম্ময়ী মূর্তির কিছু বিশেষত্ব আছে।প্রাচীন কাল থেকে ধারাবাহিক ভাবে জলপাইগুড়ি র  রাজবাড়ী সংলগ্ন মন্দিরে মহা সাড়ম্বরে দূর্গা পুজো অনুষ্ঠিত হয়। আরও ২৫ /৩০ টি পুজোর সাথে সাথে এই পুজোর আকর্ষণ একদমই আলাদা। সাধারণত মা দূর্গার ডান পাশে লক্ষী ও গনেশ এর মূর্তি এবং বাম পাশে সরস্বতী ও কার্তিকের মূর্তি থাকে।  কিন্তু জলপাইগুড়ি রাজবাড়ীর ক্ষেত্রে মা দূর্গার ডান পাশে প্রথমে গনেশ পরে লক্ষীর মূর্তি থাকে। লক্ষী এবং বিজয়ার মূর্তির মাঝে একজন পুরুষ দেবতার মূর্তি থাকে।  কেউ কেউ এই মূর্তিকে ব্রহ্মা 'র মূর্তি বলে থাকেন। অনুরূপ ভাবে দেবী দূর্গার বাম পাশে সাধারণত সরস্বতী ও কার্তিক এর মূর্তি দেখা গেলেও রাজবাড়ীর প্রতিমায় বাম পাশে সরস্বতী ও পরে কার্তিকের মূর্তি দেখা যায়।  কার্তিকের পাশে  দেবী জয়া পূজিত হন। প্রতিমার বর্ণ, গঠন ছাড়াও এই মন্দিরে,  লক্ষী,গনেশ,কার্তিক, সরস্বতী ছাড়াও জয়া ও বিজয়ার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।  জয়া কে উৎকর্ষতার প্রতীক অর্থাৎ সরস্বতী হিসাবে পূজিত হন। বিজয়া তিনি যাকে ছাড়া বিজয়  অসম্ভব।  শ্রীহীন বা লক্ষীর উপস্থিতি ছাড়া বিজয় সম্ভব নয়,  তাই বিজয়া লক্ষী হিসেবে পূজিত হন। 
দুর্গোৎসবের সময়ে অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে পূজিত হন দূর্গারূপিনী চামুন্ডা অর্থাৎ মহাকালী।  ইনি কালরাত্রি কৌশিকী। কালরাত্রির ললাট থেকে করালবদনা চামুন্ডার জন্ম। চামুণ্ডা হলেন মহামায়া। মহামায়া দ্বার না ছাড়লে প্রকৃতির দর্শন হয় না।

জলপাইগুড়ি রাজবাড়ীর গৃহদেবতা বৈকুন্ঠনাথ  ও দশভুজা ভগবতী একই আসনে অধিষ্ঠিতা। দশভুজার দশটি হাতে শূল,শর, শক্তি, চক্র  ডান দিকের হাত গুলিতে শোভা পায়।  বাম দিকের হাত গুলিতে শোভিত পাশ, খেটক, ধনু, কুঠার এবং অঙ্কুশ শোভা পায়।  দেবী ডান হাতে শুল ধারণ করে অসুরের বুকে বিধিঁয়েছেন। মহিষের কাটা গলা থেকে অসুরের জন্ম। অসুরের বামবাহু কামড়ে ধরেছে একটি বাঘ। বাঘ এবং সিংহের উপর স্থাপিত দেবীর ডান পা। দেবী নানা অলংকারে সজ্জিত।  দেবীর মুখ ডিম্বাকৃতি। চোখ দুটি কোটরগত এবং ভীষনা। তৃতীয় নেত্র টি ও খুবই স্পষ্ট। 

আজও নবমী পুজোর রাতে গোপনে কি যেন বলি দেওয়া হয়। বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক উমেশ শর্মা মহাশয়ের " উত্তরবঙ্গের মূল নিবাসীদের সংস্কৃতি,  ইতিহাসের আলোকে  বৈকুন্ঠপুরের  পূজা পার্বণ  ও লোকাচারের ধারা  বইটিতে তার উল্লেখ আছে। কেউ কেউ বলেন প্রাচীন কালে এখানে নরবলির প্রচলন ছিল। কিন্তু আসলে এটি একটি কুলোর উপর কুশ ও আতপচালের গুঁড়ো দিয়ে মানুষের রূপ দিয়ে তাকে বলি দিয়ে করলায় বিসর্জন দেওয়া হয়।

এই পূজো দেখতে দেশ বিদেশের বহু দর্শনার্থীরা জলপাইগুড়িতে  আসেন। বিজয়া দশমীতে রাজবাড়ী সংলগ্ন পুকুরে বিসর্জন দেওয়া হয়।  বিসর্জনের ঘাটে প্রচুর দর্শনার্থীদের সমাগম হয়।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri