দুঃখ-বিলাসী/মনীষা কুন্ডু
দুঃখ-বিলাসী
মনীষা কুন্ডু
কুয়াশার গন্ধ, ঠান্ডা হাত, চায়ের কাপ, 'হেমন্ত'র পর্ব মিটিয়ে শীতের হাতছানি। দুঃখগুলোকে ঝেড়ে মুছে মনের আলমারিতে আবার গুছিয়ে রাখা- এভাবেই একটা নতুন 'শীত', পুরনো সবকিছু নিয়ে কুয়াশার চাদরে মুড়িয়ে নিয়েছে আমাকে। এই ঠান্ডা হওয়া, শক্তির কবিতায় কাটা দুপুর, হুমায়ূন আহমেদের বিকেল আমার বেড়ে ওঠার গল্প জানে। 'হেমন্ত' জীবনে অনেক বদল দিয়েছে। 'হেমন্ত' দিয়েছে অনেক, এই ঋণ শোধ করার নয়। কত কি ভেঙেছে, কত কি গড়েছে, 'হেমন্ত' সব জানে। এখন শীতের পালা, অনেক কবিতা এই শীতে ছুঁয়ে দেখছি, জানা শব্দ নতুন করে জানছি। কখনো আমার আমি ভুল হচ্ছে ভীষণ। ভুল ভাঙ্গার শব্দ হয় না, ভুল ভাঙলে নিঃশব্দ এসে জড়িয়ে ধরে, একটা হালকা চিন চিনে ব্যথা হয়। গলার কাছে অনেক কিছু দলা বেঁধে আসে কিন্তু,বলা যায় না, লেখা যায় না, ভাবাও যায় না মাঝে মাঝে। শীত পর্বে সেইসব রাখা আছে। আমার ভালো থাকার রসদ আছে শীতে, মন খারাপের লেখায় ভরে গিয়েছে ডায়েরী। মন খারাপের কোন কারণ নেই, কোন উদ্দেশ্য নেই। মন খারাপ আসে শীতের বিকেলে নিয়ে, নিঃশব্দে পাশে এসে বসে, না চাইতেও হাত ধরে। মন খারাপে কিন্তু কোন খারাপ নেই। মন খারাপ ফেলে আসা মুহূর্তদের গল্প শোনায়, ভালো স্মৃতি, ভালোলাগা, ভালো থাকা,ভালোবাসা, প্রিয় গন্ধ, প্রিয় বন্ধু, প্রিয় কবিতা, কাছের মানুষ গুলোর স্মৃতি নিয়ে আসর জমায়। শীতের বিকেলে মিঠে রোদের আড়ালে দুঃখ-বিলাসী গল্প লেখে। সব সময় নতুন কিছু চাইতে নেই, তাই শীতে,পুরনো যা কিছু ভালো খারাপ সেই সব কিছু গুছিয়ে রাখা শিখছি। ভালো থাকার রসদ খুঁজছি। টের পাচ্ছি, অনেক কিছু এড়িয়ে গিয়েছি নতুনের খোঁজে। আমার অনেক কিছু ছুঁয়ে দেখা হয়নি, ভেবে দেখা হয়নি। শীতের মন খারাপেরা সেই সব পুরনো কবিতা ফিরিয়ে দিক, সেইসব শব্দ মনে করাক যেগুলো আমি শুনেও শুনিনি। এই শীতটা না হয় স্মৃতির ওপর পরে থাকার সময় এর ধুলো মুছে দেওয়ার হোক। তাতে না হয় একটা শীত ভীষণ রকম দুঃখ-বিলাসী হোক।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴