সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
06-October,2024 - Sunday ✍️ By- কবিতা বণিক 181

দাস বাড়ির নারকেল গাছের আত্মকথা/কবিতা বণিক

দাস বাড়ির নারকেল গাছের আত্মকথা
কবিতা বণিক


“ কই গো ? টুলুর মা!  এই দ্যাখো একটা  এমন জিনিস এনেছি যে সারা জীবন তোমাকে দেখবে। জানো তো! এর কাছে তোমার মনের কথাও বলতে পারবে। নারকেল গাছ এনেছি গো!  মনে করো এও তোমার এক ছেলে।  এই খানে একে পোঁতার জায়গা করলাম।  আমাদের যত্নে দেখ গাছটা  সুন্দর একটা জীবন পাবে। আমাদের ভালোবাসায় ভরিয়ে রাখব ওকে।”  সে আজ প্রায় আশি বছর আগের কথা। সেদিন থেকেই  আমি হয়ে গেলাম গোটা দাস বাড়ির সদস্য। সেদিন বিকেলে ছোট ছোট ছেলেমেয়েগুলো হাত ধরাধরি করে আমাকে ঘিরে নাচতে নাচতে গাইতে লাগল “ এলাটিং বেলাটিং সইলো! কিসের খবর আইলো? বাবামশাই একটা গাছবন্ধু আনলো!” ওদের কথোপকথন শুনে আমারও  মনে হলো আমি সত্যিই ওদের বন্ধু। চলতে পারিনা বলে ওরাই তো বলল রোজ ওরা আমার কাছে এসে খেলবে। প্রথম দুদিন মাটিতে একটু কষ্ট হচ্ছিল । গা কেমন ম্যাজ ম্যাজ করছিল। মা যখন এসে আদর করছিল  শরীর একদম ঠিক হয়ে গেল।  জায়গা বদল হওয়ার জন্য মন খারাপ করার সময়ই পেলাম না। দেখতে দেখতে আজ সাতদিন হয়ে গেল। আজ বাড়ির বাচ্চারা ঐ যে— টুলু, রেন্টু, ছিনু , ছবি,মন্টু,গোপাল,শিপ্রা  ওরা সবাই আমার কাছে বসে রান্নাবাটি খেলছে। ওরা যেদিন সত্যি চড়ুইভাতি করলো  সেদিন কলাপাতায়  রান্নার সব পদ সাজিয়ে  আমাকে পরিবেশন করলো। ওদের জন্মদিন হলেও আমাকে পায়েস পরিবেশন করতে ভোলে না। পরীক্ষার দিন ওরা সবাই আমার কাছে এসে বলে - আজ এই পরীক্ষা দিতে যাচ্ছি। আমি পরীক্ষা কি জিনিস জানিনা তবে এটুকু জানি  এখন ওরা যেমন কাগজ কলম ব্যাবহার করে অনেক বছর আগে গাছের পাতাতেই  লেখা হতো। তবে যেদিন পরীক্ষার ফল বের হতো সেদিন ওদের আনন্দ আজও আমার  শরীরের পরতে পরতে লেখা হয়ে আছে।  কেউ বাইরে কোথাও বেড়াতে গেলে আমাকে বলে যেত  আমি কলকাতা যাচ্ছি বা কুচবিহার যাচ্ছি এতদিন পরে ফিরব। 
           আমিও ওদের সাথেই বড় হয়ে উঠছি।  এবার প্রথম ফল ধারণ করেছি। এ বাড়িতে বহু পুরুষের চণ্ডীপূজো হয়।  মা চণ্ডীর উদ্দেশ্যে আমার  প্রথম ফল নিবেদিত হল। নাড়ু ,তক্তির  গন্ধে সারা বাড়ি ম ম  করছে। আমার এই বৃক্ষ জীবন যেন ধন্য হলো।  আমি যত বড় হচ্ছি আমার ফলের সংখ্যাও বাড়তে লাগল। সবাই আমার ফলের আকার, গুণ ও মানের প্রসংশায় পঞ্চমুখ। আমি তো লজ্জায় মরি। সত্যি কথা বলতে ,আমি তো এদের সবার ভালোবাসায় পুষ্ট। এবাড়ির ঐ যে কর্তা ডাকেন “ টুলুর মা” ! উনি আমাকে যত্নে ভরিয়ে রাখেন। উনি যেন ভালোবাসার মূর্ত বিগ্রহ। ওনার ভালোবাসায় সবাই মুগ্ধ।  ওনাকে “বড় বৌদি “  বলতে সবাই অস্থির। আত্মীয়, স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী সবাইকে আমার ফল বিতরণ করেন। 
             এ বাড়িতে অনেক রকম মানুষ আছে।  মজাদার গল্প বলিয়ে মানুষ ছিলেন সুরথ চন্দ্র দাস। থাকতেন চাকরী সূত্রে আন্দামান। স্বাভাবিক ভাবেই তার গল্পে থাকত জল, জঙ্গল, জাহাজ , জংলী মানুষ, সেলুলার জেলের হাড় হিম করা বন্দীদের কথা ইত্যাদি  ভয় মেশানো ও মজাদার রসালো গল্প। তবে সেখানকার অত ভাল নারকেল গাছ বা  নারকেলের সাথে কোনদিনই আমার তুলনা তিনি করেননি।  এ বাড়িতে রাগী মানুষও আছেন  তার সামনে পড়লেই বাঘের সামনে পড়ার মতো অবস্হা হয় ছোটদের। আবার লাঠি ধরা মানুষ ও আছেন। কথা বোঝার আগেই পড়ত লাঠির বাড়ি। ভালো -মন্দ সব নিয়েই তো সংসার। খুব গল্পের আসর জমে এ বাড়িতে যখন তখন। উৎসবে -পার্বনে লোকজন আসলে তো কথাই নেই। 
             আজ এবাড়ির বড় মেয়ে টুলুর বিয়ে। সাজগোজ ধুমধাম সবই হচ্ছে। কিন্তু আমার বন্ধু টুলু সুযোগ পেলেই এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কেবলই কাঁদছে।  আমারও কান্না পাচ্ছে কিন্তু ওরা কেউ  আমার কান্না বুঝবে না। আগামীকাল  ও শ্বশুরবাড়ি চলে যাবে। ভাবতেই মনটা খারাপ হয়ে যায়। অষ্টমঙ্গলায় যখন টুলু এল ! নুতন জামাই , ঘর ভর্তি লোক হাসি ,ঠাট্টা ,আনন্দের হাট বসেছিল বাড়িতে। টুলু আমাকে কত কথাই না বলল, তার কিছুই বুঝতে পারলাম না। তবে এটুকু বুঝেছিলাম  ওখানে আনন্দে থাকলেও আমার কথা ওর সবসময় মনে পড়ে।  এর পর একে একে মেয়েদের  বিয়ে হল। আর আমি বন্ধু হারাতে থাকলাম। ওরা যখন আসত আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক গল্প করত। কিন্তু ওরাও মা হল,  ওদের সংসার বড় হতে লাগল। ধীরে ধীরে আমার কাছে সেই ছোটবেলার মতো আর আসে না। এরপর ছেলেদের বিয়ে হল। নতুন বউ এল। কিন্তু বউদের সাথে আমার তো খেলা হয় না। কিন্তু ওই ছোট্ট ফর্সা ফুটফুটে ছেলেটা শুনে এসেছে দিদিরা  শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার সময় নারকেল গাছটাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদত। অবাক হয়ে ভাবত নারকেল গাছকে জড়িয়ে কেন কাঁদবে?  তাই বুঝি সেও আমাকে মাঝে মাঝেই এসে জড়িয়ে ধরে।  আমার তো খুব ভালো লাগে ওই কচি কচি হাতের স্পর্শে মনটা আনন্দে ভরে ওঠে।  দিন যায় , বছর যায়। আজকাল কেউ আর আগের মতো জড়িয়ে  ধরে না,  আমার সাথে খেলেও না।  আমি ওদের সব রকম সুখ- দুখের নীরব সাথী এখন।  বাড়ির কর্তা, গিন্নি সহ কত বিয়োগ ব্যাথার সাক্ষী হলাম। কর্তাবাবুর কথা মতো গিন্নি মায়ের সারাজীবন পাশে থাকতে পেরেছিলাম এটা আমার সান্ত্বনা। বয়স আমাকেও ছুঁয়েছে। আগের মতো একশো- দেড়শো ফল দিতে পারি না। ক্রমশঃ কমে আসছে ফলের সংখ্যা, আকার। অথচ লম্বায় যেন পাড়ার মাথা। তাই ভয় সর্বক্ষণের সঙ্গী “ অতি বাড় বেড় না!” অনেক দিন ধরে অনেক ভাবনা চিন্তার পরে আমার সম্মান অটুট রাখতে, ভেঙে পড়ে কারো জীবন নাশের আগে আমারই বৃক্ষ  জীবনের ইতি টানা হল।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri