দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার../সুমনা দত্ত
দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার...
সুমনা দত্ত
আমার প্রাণের প্রিয় রবি ঠাকুর
"সহজ পাঠের ছোট খোকায় প্রথম তোমায় চিনি
কাড়লো হৃদয় ঠিক গোপনে কাবুলিওয়ালার মিনি।
খুব যতনে সাজাই মনে কুমোর পাড়ার গাড়ি
ছোট্ট মেয়ে রোদ্দুরে দেয় বেগুনি রঙের শাড়ি।"
তারপর...........
ঝরা পাতার মত হঠাৎই যখন মা হারা হই , বুকের ভেতরে পাড় ভাঙ্গা ঢেউ ......! সেদিন তুমিই সকলের অলক্ষে আমার মাথায় হাত রেখেছিলে ! তোমার "মনে পড়া" আমায় দিয়েছিল আমার সদ্য মাতৃহারা হৃদয়ে মায়ের স্পর্শ।
গানের স্কুলের দিদিমণি একদিন তোমার "গীতবিতান" হাতে দিয়ে বলেছিলেন ,"সঙ্গে রেখো,"......প্রেম, বিরহ ,পূজা, সবেতেই নাকি তুমি আছো! গীতবিতানের পাতা উল্টাতে উল্টাতে সেদিন প্রথম বুঝেছিলাম সত্যি সত্যিই "দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার গানের ওপারে "।
এরপর.......
এমনই এক বৈশাখের দিনে পাড়ার ক্লাবে তোমার জন্মদিনে হঠাৎই পরিচয় হলো "শেষের কবিতা"-র লাবণ্য আর অমিতের সাথে। ষোড়শী সেই মনে প্রথম সেদিনই প্রেমের আগুন জ্বলেছিল। মনে মনে কখন যে লাবণ্য হয়ে উঠেছিলাম আর খুঁজে বেরিয়েছি তোমার অমিতকে। বুকের গভীরে বেজে উঠেছিল,
'সখি ভাবনা কাহারে বলে,
সখি যাতনা কাহারে বলে,
তোমরা যে বলো দিবস রজনী
ভালোবাসা ভালোবাসা ....
সখি ভালোবাসা কারে কয়!"
ঠিক সে বছরই জন্মদিনের উপহার হাতে পেলাম তোমার "চোখের বালি"। সকলের চোখের আড়ালে পড়ার বইয়ের ফাঁকে গোগ্রাসে পড়েছিলাম। তারপর শুধু তোমাকেই ছুঁতে চেয়ে পাড়ার লাইব্রেরী থেকে এনেছিলাম 'সোনার তরী' , 'নৌকাডুবি ' । যত পড়ি ততই অবাক হই ! এক জীবনে এত গল্প, এত কবিতা ,এত গান, এত উপন্যাস! তোমাকে ছুঁতে চেয়েও ছুঁয়ে ওঠা হয়নি কখনো । তবে এর মাঝে কখন যেন তুমি হয়ে উঠলে আমার প্রাণের প্রিয় রবি ঠাকুর ।
অবশেষে একদিন এক টুকরো কাগজে তোমারই গানের কলিতে এ জীবনেও প্রেম এল! প্রেম এল সঙ্গোপনে......!
"আহা তোমার সঙ্গে প্রাণের খেলা
প্রিয় আমার, ওগো প্রিয় ...... "।
মুঠোর ভেতরে ধরে থাকা কাগজে অপেক্ষমান ভালবাসারা দরদর করে ঘামতে লাগল। আর কেমন যেন গুনগুনিয়ে উঠল আমার মন ......
" আমার পরান যাহা চায়
তুমি তাই, তুমি তাই গো....."
কিন্তু এই সুখ দীর্ঘস্থায়ী হলো না জীবন জুড়ে নেমে এলো গভীর কালো রাত , বুকের ভেতর উথাল পাতাল ঝড়! সেদিন আবার তোমাকেই ছুঁতে চেয়েছিলাম সঞ্চয়িতার পাতায়! সাধারণ মেয়ে আমি। তবে তোমার "সাধারণ মেয়ে" যে আমার মত অতি সাধারণ ছিল না তা সেদিন বুঝেছিলাম। আমার একলা ঘরে নিভৃত আঁধারে কে যেন ডেকে কানে কানে বলে গেল.....
"আমার প্রাণের পরে চলে গেল কে,
বসন্তের বাতাসটুকুর মতো
সে যে ছুঁয়ে গেল নুয়ে গেল
ফুল ফুটিয়ে গেল শত শত ।
সে চলে গেল বলে গেল না ....."
তোমার প্রতিটি কবিতায়, প্রতিটি গানে, প্রতিটি গল্পে ,প্রতিটি উপন্যাসে, প্রেমে, বিরহে, দুঃখ, বিষাদে নিজের অজান্তে জড়িয়ে ধরলাম তোমাকেই। আমি মনে মনে কখন যে তোমার প্রতিটি গল্পের নায়িকা হয়ে উঠলাম। তোমার কবিতারা আমায় ঘিরে রাখল নিবিড় আলিঙ্গনে ।
"নয়ন তোমারে পায়না দেখিতে
রয়েছো নয়নে নয়নে,
হৃদয় তোমারে পায় না জানিতে
হৃদয়ে রয়েছো গোপনে......"
তাই আজ মেঘ পিয়নের হাতে পাঠাবো বলেই এই চিঠি তোমাকেই লিখছি আমি ....!
"আমার প্রেম, বিরহ , হর্ষ , বিষাদ মাঝে
আমার জীবন জুড়ে অকাজ কিংবা কাজে,
তোমায় আঁকড়ে ধরেই আমার এ পথ চলা
তাই মনের কথা তোমাকেই শুধু বলা।
হৃদ মাঝারে এভাবেই থেকো; ধন্য তবেই হব, জীবনের শেষ দিনটিও যে তোমায় ছুঁয়ে রব..."।
প্রণাম জেনো ........
ইতি
তোমাকে ছুঁতে চাওয়ার স্পর্ধায়
" এক অতি সাধারণ মেয়ে"
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴