থেকে যায়/অতনু চন্দ
থেকে যায়
অতনু চন্দ
সুপ্রিয় ছন্দা,
জীবনের প্রায় শেষপ্রান্তে এসে মাঝে মাঝে স্মৃতিকথাগুলি হাতড়ে ফিরি। জীবনকে কেন যেন ফিরে ফিরে দেখতে ইচ্ছে হয়। হয়ত এরমধ্যে মাদকতা আছে, ভালোলাগা আছে তাই। এমনি একটি দিনে নানান স্মৃতির বাক্স হাতড়াতে গিয়ে তোমার ছোট্ট একটি চিঠি খুঁজে পেলাম! বড় সুন্দর করে লিখেছিলে কিন্তু চিঠিটা, সে কারণেই এ চিঠি আমি অনেকবার পড়ে প্রায় মুখস্থ করে ফেলেছিলাম!
এখন তুমি কোথায় কিভাবে আছ জানি না। নিশ্চয় তুমিও ঘরসংসার নিয়ে জীবনের শেয়ের দিকে এসে দাঁড়িয়েছ। তোমার চেহারাতেও অনেক পরিবর্তন এসেছে। আর তাই তুমি তোমার পরিচয় না দিলে আমি হয়ত সেভাবে তোমাকে চিনতে পারব না! যেমন অনেকদিন পরে আমাকে হঠাৎ দেখে লোকে চিনতে পারে না! অনেকেই বলে “তোর চেহারার কি আমূল পরিবর্তন হয়েছে ভাবা যায় না”! তবে আমি তো তা বুঝি না! আমার তো আমাকে আগের মতনই লাগে। হয়ত কিছুটা “ Mature” হয়েছি, এই পরিবর্তনশীল পৃথিবীর মতন।
না, আর ভনিতা না করে তোমার চিঠিটা হুবুহু এখানে তুলে ধরলাম যাতে তোমার স্মৃতিতেও তা ভেসে ওঠে এই আসায়। তুমি এমন লিখেছিলে কিনা দেখত তো..! আমাকে তুমি লিখেছিলে ‘পত্রমিতালীর’চিঠি হিসেবে প্রথমবারের জন্য!
সমাদৃতা,
কোন অন্ধক্ষনে
বিজড়িত তন্দ্র - জাগরনে
রাত্রি যবে সবে হয় ভোর,
‘হে অচেনা’
দিন যায়,সন্ধ্যা হয়, সময় রবে না -
তীব্র আকস্মিক
বাধা বন্ধ ছিন্ন করি দিক;
তোমারে চেনার অগ্নি দীপ্ত শিখা উঠুক উজ্জ্বলি,
শঙ্কা হতে, লজ্জা হতে, দ্বিধা-দন্ধ হতে
নির্দয় আলোতে….
কবির কল্পনাকেই পাথেয় রূপে গ্রহণ করে যাত্রা শুরু করলাম “বন্ধুত্বের”। নাই বা রইল স্বরচিত আত্মপ্রলাপ অথবা পরিচয় গুচ্ছ, ক্ষতি কি!? লাভ হয়তো বা নেই তবে আত্মগাথায় হবে ধীরে ধীরে আত্মপ্রকাশ যদি শুধু ঘটে ‘বন্ধুত্ব’ এই দুনিয়ায় আমরা দু’জনায়। তাই আমার পক্ষ থেকে অথবা বিপক্ষের সাক্ষী অবগত হওয়ার আশায় এই ছোট্ট লেখনিকেই আজ বাহক করলাম। প্রীতি ও শুভেচ্ছা থাক।
কবিতা লেখার বাতিক আমার নেই, আছে শুধু তোমার প্রতি আমার অলিখিত অব্যক্ত ছোট্ট একটি স্বীকৃতি…
ইতি-
বন্ধু
এই চিঠিটা পেয়ে আমি খুব অবাক হয়েছিলাম, কারণ এ ধরণের চিঠি আমি অন্তত আগে কোনওদিন পাইনি! ইউরেকা ইউরেকা… আমি যা চেয়েছি তা হয়ত এতদিনে খুঁজে পেয়েছি ভেবেছি তখন।
তারপর ধীরে ধীরে তোমার আত্মপ্রকাশ আমার কাছে। রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতা আমি তার আগে কোনওদিন পড়িনি। চিঠির মাধ্যমেই, তোমার পরামর্শেই আমার সাহিত্যের পথচলা আরম্ভ হল। তারপর তোমার সাথে সেগুলি নিয়ে চুলচেরা আলোচনা হতে লাগল। আমি ক্রমে ক্রমে কিছুটা সমৃদ্ধ হয়ে উঠলাম। আমি সে ভাবেই বুঝতে ও ভাবতে শিখলাম।
আজ তুমি কোথায় আছ জানি না! কিন্ত আমার যে আজকে তোমার কাছে ঋণ স্বীকারের দিন এসেছে। যে পথ দেখায়, ভালো ভাবতে শেখায় তার ঋণ স্বীকার করতেই হয় এবং স্বীকার করা উচিৎ। না হলে যে এই প্রক্রিয়া যে থেমে যাবে !
আমি তাই আজ তোমার এই ঋণ স্বীকার করতে চাই “সহজ উঠোনের” মাধ্যমে, খুব সহজভাবে। যদি কখনও তা তোমার চোখে পড়ে তাহলেই আমার আজকের এই চিঠি লেখা সার্থক হয়ে উঠবে।
পরিশেষে, ভালো থেক সপরিবারে।
অবশেষে -
‘অতনু’
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴