তোমায় লিখছি ঠাকুর/মনামী সরকার
তোমায় লিখছি ঠাকুর
মনামী সরকার
--------------------------
প্রিয়
ঠাকুর
তুমি কি জানো প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে তুমি আজও স্বমহিমায় বর্তমান। ১০০ কোটি দেব দেবতার সকলের স্থান বাঙালির ঘরে হোক কিংবা না হোক তোমার জন্য একটা নির্দিষ্ট আসন
পাতা থাকে।
তুমি ঠাকুরই বটে, না হলে কিভাবে পারলে প্রতিটা মানুষের মনের কথা জানতে? মানুষের জীবনের এমন কোন ঘটনা, পরিস্থিতি, সুখ, দুঃখ, রাগ, প্রেম, বিরহ, অভিমান, বিচ্ছেদ, মিলন এমন কোন অনুভূতি নেই যা তোমার লেখায় ফুটে ওঠেনি। হোক না সে কবিতা,গল্প,গান,উপন্যাস কিংবা নাটক,ছোট গল্প ।প্রতিটা মানুষই যেন তোমার রচনায় কোথাও না কোথাও নিজের জীবনের মিল খুঁজে পায়। এমনকি বর্তমান পরিস্থিতিতেও যা ঘটছে এতগুলো বছর আগে সেগুলোই কেমন করে কল্পনায় তুমি লিখেছিলে বলো তো?
সত্যি বলতে ঠাকুর বাঙালির ঘরে কোন ধর্মগ্রন্থ থাক কিংবা না থাক তোমার সৃষ্টির একটা টুকরো থাকবেই থাকবে। সঞ্চয়িতা , গীতাঞ্জলি, গল্পগুচ্ছ কিছু না হলেও শিশু বইটা ঠিক জায়গা করে নেয় বাঙালির বইয়ের তাকে ।
সেই ছোট্ট থেকে আজ অব্দি কত প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছি তোমার সৃষ্টি ,"প্রশ্ন" থেকে। নতুন করে ভাবতে শিখেছি। কত অব্যক্ত কথা সহজে প্রকাশ করেছি তোমারই সৃষ্ট গান,কবিতার মধ্য দিয়ে।
জীবনে যখন প্রেম এসেছে গিয়েছিলাম "কতবার ভেবেছিনু আপনা ভুলিয়া তোমারো চরণে দিব হৃদয় খুলিয়া।"
অভিমান বেলায় বলেছি "যদি আরও কারে ভালোবাসো। যদি আর ফিরে নাহি আসো। তবে তুমি যাহা চাও তাই যেন পাও,আমি যত দূঃখ পাই গো।"
আবার সবটুকু পেয়ে মন গেয়ে উঠেছে "প্রেমের জোয়ারে ভাসাবে দোহারে বাঁধন খুলে দাও
দাও,দাও,দাও"।
জীবনে মাতৃত্বের সাধ পেলাম।ছোট্ট ছেলে একদিন জিজ্ঞাসা করল মা আমাকে তুমি কোথা থেকে নিয়ে এসেছো? কি উত্তর দেবো খুজছিলাম তবে এই প্রশ্নটা হয়তো ছোটবেলায় আমরা সবাই মাকে করে থাকি।তুমিও হয়তো করেছিলে? তাই লিখেছিলে "জন্মকথা"।
"খোকা মাকে শুধায় ডেকে
এলেম আমি কোথা থেকে
কোনখানে তুই কুড়িয়ে পেলি আমারে
মা শুনে কয় হেসে কেঁদে
খোকারে তার বুকে বেঁধে
ইচ্ছে হয়ে ছিলি মনের মাঝারে।
ছিলি আমার পুতুল খেলায়
প্রভাতের শিব পূজোর বেলায়
তোরে আমি ভেঙেছি আর গড়েছি......।"
তোমার ভাষাতে ওকে উত্তর দিয়েছিলাম। জীবনের প্রতিটা পদে প্রতিটা মুহূর্ত তোমার সৃষ্টির সাথে জড়িয়ে শুধু একটু খুঁজে নিতে হয়।
আজও প্রিয়জন বিহনে মন বারবার বলে "তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম"।
তুমি আমাদের প্রাণের ঠাকুর আমাদের মনের সব কথা তোমার জানা।
তবে ঠাকুর জান আজ তোমার উপস্থিতি বড়ই প্রয়োজন ছিল। হিন্দু মুসলিম ভাই ভাই তুমি যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলেছিলে।হিন্দু মুসলিম একে অপরের হাতে রাখি পরিয়ে দিয়েছিল মানুষ আজ তা ভুলতে বসেছে। তুমি যে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন করেছিলে সেই দেশের মানুষ আজ ভিন্ন রাজ্যের দাবি তোলে।তুমি বলেছিলে
"অন্তর হতে বিদ্বেষবিষ নাশো
বরনীয় তারা, স্মরণীয় তারা
তবুও বাহির দ্বারে
আজিদুর দিনে
ফিরানু তাদের ব্যর্থ নমস্কারে"।
তুমি হয়তো দূর থেকে সবটাই দেখছো আর মনে মনে কষ্ট পাচ্ছ। তোমার এই ভারত বর্ষ জানি না আবার কবে "জগত সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লাবে"।
তবে বাঙালির হৃদয়ে তুমি আজীবন থেকে যাবে। সারা বছর তুমি স্বমহিমায় থাকো তবু বৈশাখ মাস এলে কেমন উৎসবের মৌসুম শুরু হয়। পঁচিশে বৈশাখ তোমার জন্মদিন বলে কথা। আমাদের কাছে তা উৎসবের থেকে কম কি।
তবে ঠাকুর সত্যি বলছি তুমি আমাদের জীবন জুড়ে আছো ঠিকই তবু কোথাও যেন একটা শূন্যতা থেকেই গেছে, যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। তাই আরো একবার তোমারই সৃষ্ট সমুদ্র থেকে এক বিন্দু জল নিয়ে মনের কথা তোমায় জানাই।
"এ সংসার হাটে
আমার যতই দিবস কাটে
আমার যতই দু হাত ভরে ওঠে ধনে
তবু কিছুই আমি পাইনি যেন
সে কথা রয় মনে।
যেন ভুলে না যাই বেদনা পাই
শয়নে, স্বপনে "
ইতি -তোমার বিরহে রহিব বিরহী
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴