তোমাকে আমার খোলা চিঠি/চিত্রা পাল
তোমাকে আমার খোলা চিঠি
চিত্রাপাল
শীত এসে গেছে বেশ জাঁকিয়ে, ঘরে ঘরে আমরা সবাই ব্যস্ত বছরকালীন তুলে রাখা শীতের জামা চাদর ,লেপ কম্বল বের করে আবার গায়ে চাপিয়ে নিতে। চায়ের দোকানে ভীড়, পিকনিকের আয়োজন সব শুরু হচ্ছে আবার। তার মাঝেই চার্চের ঘন্টাটা বেজে উঠল ঢং ঢং করে। এসে গেল বড়দিন, যীশু খ্রীষ্টের জন্মদিন।
যীশু খ্রীষ্ট, তুমি মানুষকে বলেছ পুরম পিতার সন্তান।চেয়েছ ভাই-এর সাথে ভাই-এর মিলন। চিরকালীন এই মিলনের আহ্বান রেখে গেলে বিশ্বমাঝে।তোমার এই বাণী ছড়িয়ে গেল ভুবনভরে। দেশে দেশে গীর্জায় গীর্জায় তোমার সেই বাণী স্মরণ করে তোমার জন্মদিন পালিত হচ্ছে। তোমার জন্মদিন স্মরণ করে গীর্জায় গীর্জায় ঘন্টা বাজছে ঢং ঢং। এই ধ্বনি যেন বলতে চাইছে জগত্ প্রেমে পূর্ণ হোক, মানব প্রকৃতি হোক ক্ষমাসুন্দর। নিজের জীবন উৎসর্গ করে সে বার্তা রেখে গেছ তুমি বিশ্ববাসীর কাছে।
কিন্তু অদ্ভূতভাবে আজ দেখা যাচ্ছে সব অন্যরকম।আজ স্বার্থপরতা, লুব্ধতার নখরাঘাতে সমস্ত সমাজ কলুষিত। আজ জনমানস আন্দোলিত,আমাদের মনও বিদীর্ণ।হে পরম পিতা, তোমার ক্ষমাসুন্দর পরশে আবার সব অসত্য চিহ্ন মুছে দিয়ে, বর্তমান সময়ের সব বাধা সরিয়ে আবার কি আমরা চলতে পারি না?
আমরা একবার হুগলিতে,ব্যান্ডেল চার্চে গিয়েছিলাম। সেখানে এই চার্চ স্থাপনের কাহিনী শুনেছিলাম। আজ আবার সেকথাই বলি। খুব সম্ভব পনেরশো শতকের শেষের দিকে ওখানে বসবাসকারী পর্তুগীজরা বর্বর হয়ে ওঠে। তারা নারী ও শিশুদের ধরে বেঁধে এনে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রী করে দেয়, পথেঘাটে ছিনতাই, রাহাজানি করে। মুঘল সম্রাট এই বিষয় জানতে পেরে কাসিম খান জুভাইনি নবাবের নেতৃত্বে সেনা পাঠিয়ে হুগলি বন্দর আক্রমণ করে। সেখানে পাঁচজন পুরোহিত ছিল, যার মধ্যে চার জনকে হত্যা করা হয়েছিল। আর একজনকে বন্দী করে দিল্লী নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। যাতে হাতি তাঁকে পায়ে পিষে মেরে ফ্যালে, সেভাবে হাতি ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। তিনি একান্তভাবে ছিলেন যীশু অনুগামী। কি অবাক কান্ড! হাতি তাকে পায়ের তলায় না পিষ্ট করে শুঁড়ে করে তুলে তার পিঠে বসিয়ে নেয়। দন্ড কার্যকর করার সময়ে সম্রাট শাজাহান সেখানে উপস্থিত ছিলেন। নিজের চোখে এই ঘটনা দেখে তিনি অবাক হয়ে যান। তখন তিনি এই পুরোহিতকে তো মুক্তি দিলেনই, তার সঙ্গে আরও যারা বন্দী ছিল তাদেরও মুক্ত করে দিলেন। তাদের হুগলিতে ফেরত পাঠাবারও ব্যবস্থা করে দিলেন। এর সঙ্গে গির্জাটি পুনর্নির্মাণের জন্য দিলেন ৩১১ একর জমি।আজ যেখানে চার্চটি দাঁড়িয়ে আছে।
আমি অবাক হয়ে এই কাহিনী শুনেছিলাম। হে পরিত্রাতা ক্ষমাসুন্দর যীশু, তোমার এত ক্ষমতা, তুমি আরও একবার পারো না, সেই চিকিত্সক মেয়েটিকে বাঁচিয়ে দিতে, নারকীয়ভাবে পৈশাচিকভাবে যাকে এই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যে বেঁচে থাকলে তার সেবা দিয়ে কত প্রাণ বাঁচিয়ে দিতে পারত, তাকে, আর যারা এ অন্যায় করেছিল তাদের শাস্তি দিতে? দ্যাখো না একবার পারো কি না। চিঠিতেই জানালাম আমার এই একান্ত অনুরোধ।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴