প্রত্যেক বছর কলকাতা বইমেলাতে আসা তোর একটা চিরাচরিত অভ্যাস, গত বছরই বোধ হয় শেষবারের মতো বইমেলাতে তুই এসেছিলি, এবারে দেখ বইমেলা শুরু হয়ে শেষ হতে চলল, তোর কোনো খবর না পেয়ে যখন ভাবছিলাম ফোন করে একটিবার জিজ্ঞেস করি কবে আসছিস, সেই মুহূর্তেই এমন মর্মান্তিক একটা খবর আমার স্নায়ুতন্ত্রকে অবশ করে দিয়ে গেল। জানিস, এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না তুই নেই। মনে হচ্ছে, কিছুক্ষণ বাদেই হঠাৎ করে অন্যান্য সময়ের মতো ফোন করে বলে উঠবি "কি রে, কেমন চমকে দিলাম বল তো!" আর তারপরেই শুরু হবে তোর সেই চির পরিচিত প্রাণখোলা দরাজ গলার হাসি।
এই বছরেই তো আসার কথা ছিল তোর সেই চিরপ্রতিক্ষিত আগাম অবসর নেওয়ার দিনটির, ঠিক যেমনটি তুই কথা দিয়েছিলি। ততটুকু ধৈর্য্য বুঝি আর সইল না তোর! এত কিসের তাড়া ছিল রে!!
কত দায় উপেক্ষা করে চলে গেলি। মহালয়ার ভোরে কে আমাকে ডেকে দেবে প্রতি বছরের মত? আমার তর্ক, ঝগড়া, নালিশ, মন কেমন অমন নির্দ্বিধায় আর কি করে জানাব তোকে? তুই এমন মুসকিল আসান হয়েছিলি আমার জীবনে, জানি না তোর অভাব কখনও পূর্ণ হবে কি না।
কিছুতেই ভুলতে পারি না জানিস, কত দুঃসময়ে পাশে এসে দাঁড়িয়েছিস তুই সহমর্মিতার বার্তা নিয়ে, আমিও নীরবে অবলম্বন খুঁজেছি তোর কাছে। তুই তো সেই বন্ধু ছিলি আমার যাকে সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করা যায়, নির্ভর করা যায় যার উপর নিজের চেয়েও বেশি।
সব থেকে বেশি কষ্ট হচ্ছে এটা ভেবে যে এত বড় পৃথিবীর কোত্থাও তুই নেই, অথচ বাকি সব কিছুই আছে নিজের নিজের জায়গাতে। হাজার বার ইচ্ছে হলেও তোকে আর কক্ষনো দেখতে পাব না।
সুন্দরবনে বেড়াতে যাওয়ার কত ইচ্ছে ছিল তোর, বলেছিলি 'সুন্দরবনটা শেষ হয়ে যাওয়ার আগে একবার ঘুরে আসতে হবে'। এমন করে কথা না রেখে চলে যেতে হয় বুঝি?
অলৌকিকের উপর বিশ্বাস করতে আজ বড় ইচ্ছে হয়। মনে হয় হঠাৎ করে হয়তো মোবাইলের পর্দায় ভেসে উঠবে তোর নামটা কখনো আর ওপার থেকে তোর গলা।
তোর অসম্পূর্ণ লেখাগুলো আর প্রকাশিত হবে না। তোর কথার চাষ সম্পূর্ণ হল না, চারাগাছেরা বড় হতে পারল কই? পাঠকমহলেও তোর অভাব অপূর্ণই থেকে গেল।
ঈশ্বরের কাছে অন্তর থেকে প্রার্থনা করি তিনি যেন তোর বৃদ্ধ পিতা মাতাকে তোর অভাব সহ্য করার মতো শক্তি দেন।
আর তুই, আমাদের সকলকে ছেড়ে যেখানে চলে গেছিস, সেখানে খুব খুব ভালো থাকিস, আনন্দে থাকিস, কলম যেন সেখানেও না থামে।