সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon

তুমি রবে নীরবে (৫)/পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়

তুমি রবে নীরবে (৫)
পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় 

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন,  " মৃত্যু মানে আলো  নেভানো নয়, এটি কেবল প্রদীপ জ্বালিয়ে দেওয়া,  কারণ ভোর হয়েছে। " 

অনিন্দ্য তার জীবনের সব ভালোটা দিয়ে সলতে পাকিয়ে রেখে গিয়েছেন। তারাদের দেশে যাওয়ার পর সেই সলতে সকল অনুরাগীদের মনে প্রদীপ হয়ে জ্বলে উঠেছে। ভালো মানুষেরা ক্ষণজন্মা হয়ে থাকেন। অনিন্দ্য মানুষের হৃদয়ে রয়ে গিয়েছেন। সে অগণিত গুণমুগ্ধ দের অন্তরের প্রদীপ জ্বালিয়ে দিয়ে গিয়েছেন।

 সেদিন সান্ধ্য ঘরোয়া  আড্ডায় পেয়েছিলাম অতন্দ্রিলা পত্রিকার কবি বন্ধু সুমন চক্রবর্তীকে। তার নানা কথায় উঠে আসল  তার প্রিয় শিক্ষক, পার্থের পিতৃদেব শ্রদ্ধেয় শিক্ষক শ্রী অচিন্ত্য কুমার সেনগুপ্তের প্রসঙ্গ। জানলাম স্যার নিজে খুব ভালো ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন খেলতেন।  বীরপাড়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় স্যারের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য।  ছোট বেলায় ছাত্রাবস্থায় কবি জীতেন্দ্র নারায়ণ চক্রবর্তী,  কবি তুষার বন্দ্যোপাধ্যায়ের সান্নিধ্যে পেয়েছিল পার্থ। তাঁদের কাছেই পেয়েছিলেন কবিতা লেখার রসদ। 

পুত্রের মধ্যে পিতার গুণাবলি ফল্গুধারার মতো সঞ্চারিত হয়েছিল। স্যারের সব গুণগুলোই পার্থ পেয়েছিলেন। পার্থ খুব সুন্দর ফুটবল খেলতেন, যার অনুপ্রেরণা অচিন্ত্য স্যার এই বিষয় নিয়ে কারো কোনো দ্বীমত নেই।

ডুয়ার্সের এক  সবুজ উপত্যকার নাম বীরপাড়া।  আবারও বীরপাড়ার পথে রওনা হলাম। রাস্তার দুই ধারে  স্বর্গছেঁড়া চায়ের বাগান। এই বাগানগুলোতে একমনে তাকিয়ে থাকলে লেখক সমরেশ মজুমদারের মুখটা স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে। পার্থের বিশেষ বন্ধু শ্যামল পাল তার স্মৃতিচারণায় বলেছেন বনভূমিতে পার্থের  অগাধ বিচরণ ছিল।লেখক সমরেশ মজুমদার,  প্রয়াত কবি তুষার বন্দ্যোপাধ্যায়,  কবি জীতেন্দ্র নারায়ণ চক্রবর্তী,  শ্রী বেনু সরকার, শ্রী অমিত কুমার দে,  শ্রী সুকান্ত নাহা, বাগবাগিচা 'র সম্পাদিকা শ্যামশ্রী দাস, নাট্যব্যক্তিত্ব শ্রী কানাই চ্যাটার্জি, কবি কাঞ্চন রায়, কবি রুণা লায়লা, তোতা কবি ফজলুল হক, কবি শিশির রায়নাথদের সান্নিধ্য এবং সৃষ্টি থেকে  অনিন্দ্য সাহিত্যের রসদ পেয়েছিলেন।

তার মুখেই শোনা তাতাসি এই অঞ্চলের একটা নদী,  সারা বছর যে নদীর জল শুকায় না। সেই তাতাসির বহমানতা কে যে আগলে  ধরে রাখতে চেয়েছিলেন  অনিন্দ্য। 

 শ্যামল লিখেছেন, "তার হৃদয়টা ছিল সমুদ্রের মতো।" কবি বলেছেন, " বিংশ শতাব্দীতে শোকের আয়ু বড়ো জোর একবছর। " 

কিন্তু ক্ষণজন্মা  অনিন্দ্য তার জীবনে দুই হাত দিয়ে বহু  মানুষের সেবা করে গিয়েছেন। তারা অনন্তকাল ধরে পার্থকে মনে রাখবে। 

 তার চলে যাওয়ার  পর কবি অমিত কুমার দে বীরপাড়া গিয়ে দেখেছেন অন্য এক অনিন্দ্যকে। যে অতিমারির সময়ে মানুষের পাশে থেকেছেন। বিপদে আপদে বহু মানুষকে আর্থিক সহযোগিতা করেছেন। 

 বিভিন্ন লেখকের লেখায় উঠে এসেছে করোনা কালীন সময়ে তার নিরলসভাবে  মানুষের পাশে থাকবার কথা।

প্রিয় লেখক সুকান্ত নাহা তার অনন্ত্য অনিন্দ্য শিরোনামে লিখেছেন "পাঁজরে ঢেকে রাখি নীরব শূন্যতায় " অনিন্দ্য 'র লেখা গদ্যের উদ্ধৃতি দিয়েছেন যা আমাদেরকে হৃদয়কে স্পর্শ করে। 

কবিগুরু লিখে গিয়েছেন, "প্রায়ই আমার মনে হয় এই তারাময় আকাশের নীচে আবার কি কখনো জন্মগ্রহণ করিব ?  হয়তো আর কোনো জন্মে এমন একটি সন্ধ্যা আর কখনো ফিরিয়া পাইব না।  কোথায় তখন দৃশ্য পরিবর্তন হইবে --- কি রকম মন লইয়াই বা জন্মগ্রহণ করিব? "

 আবারও কখনো তিনি বলেছেন, "  --- পাওয়া যখন আমার শেষ হইয়া যাইবে তখনকার কথা ভাবিয়া আজ তুচ্ছতম বস্তুও ধন্য। আমার মৃত্যুর পরেও প্রভাত আসিবে। গাত্রোত্থান করিয়া কেহ বা দাঁত মাজিবে,  গোহালের কাজ শেষ করিয়া কেহ বা দেওয়ালে ঘুঁটে দিতে থাকিবে।  তাহাও আমার পক্ষে কি দূর্লভ !  পৃথিবীর প্রত্যেকটি বস্তু অমূল্য।  ইটারনিটির মধ্যে পাছে তাহা উপলব্ধি না হয় তাই খন্ডকালের দ্বারা খন্ডিত।' 

তাতাসি'র প্রকাশ অনুষ্ঠানের ছোটো ছোটো স্মৃতি তাই আজও মনকে কাঁদায়। শুধু আমন্ত্রণ জানিয়েই বসে ছিলেন না। " অমিতাভ দা ড্রাইভ করবে,  আপনি পাশের সিটে বসে আসবেন।" বীরপাড়া পৌঁছানোর পর জুবিলী ক্লাবে সেকি উল্লাস,  রাজর্ষী দত্ত, সাগরিকা কর্মকার,  গীর্বাণী চক্রবর্ত্তী সদাই আন্তরিকতার ছোঁয়ায় মুড়ে রেখেছিলেন। সর্বপরি অনিন্দ্য,  মধ্যাহ্ন ভোজের সময় উপস্থিত হয়ে বলল,  "ঢেঁকি শাকের সাথে অবশ্যই কাসুন্দি খাবেন।"

আজও প্রভাত হয় এই প্রভাতে তাঁর চোখে দেখে যাওয়া সব ছোট ছোট ঘটনা আমাদের জীবনে ছবি হয়ে ধরা দেয়। আমাদের নি:স্ব করে  মরণেরে সব সঞ্চিত  ধন  উজাড় করে চলে গেলেন পার্থ।  পার্থ প্রকৃত অর্থে মৃত্যুকে জয় করেছেন। 
আজও আমরা তার প্রিয় প্রকৃতির দিকে  চেয়ে চেয়ে সেই মৃত্যুঞ্জয়ী মহাজীবনকে স্মরণ করি।

লেখক সুকান্ত নাহা তার স্মৃতিচারণায় অনিন্দ্যর গদ্যের উদ্ধৃতি দিয়েছেন।
অনিন্দ্য "বিশ বাইশ ফুট" গদ্যে অতীতের স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটি সম্পর্কে লিখছেন "... আজ ভগ্নপ্রায় সেই বাড়িতে জানি না কোন বাস্তুসাপ পাহারা দেয় কি না। আমার এসব রত্নভান্ডার।  শুধু জানি বাড়ির পেছনে ওই জারুল গাছ তার বেগুনি ফুলের ঝাঁক নিয়ে ফুঁটে রইবে আমার অন্দরমহলে। " 

যতদিন জারুল গাছে  বেগুনি রঙের ফুল ফুটবে ততদিনই অনিন্দ্য আমাদের হৃদয়ের অন্দরমহলে  রয়ে যাবেন নীরবে। 

কবি অমিতাভ দাসের অনিন্দ্য স্মরণে পার্থ কবিতাটি সর্বশেষ আমার স্মৃতি তর্পণে যুক্ত করলাম।
****

পার্থ 
অমিতাভ দাস 

কৃষ্ণের সবচেয়ে প্রিয় 
কৃষ্ণ যাকে স্বয়ং বলে উল্লেখ করেছেন -
নিষ্কলঙ্ক ব্যাক্তিত্বের বৈশিষ্ট্যর জন্য 
শত্রুরাও তাকে শ্রদ্ধা করতেন।
অবশ্য আমাদের পার্থের শত্রু ছিল বলে
                                     আমার মনে হয় না -
সর্বোত্তম গুনাবলীর প্রতিনিধিত্ব যিনি 
যার অর্থ মানুষের মধ্যে সেরা-
মহাকাব্যের নায়ক। 
আমাদের 'সাহিত্য আড্ডার মহানায়ক।'
চিকরাশি সাহিত্য পরিবারের 'প্ৰিয় পুরুষ'
সবকিছু ত্যাগ করেও যিনি বিজয়ী 
সবকিছুর উর্দ্ধে 
এবং কৃষ্ণের কাছে সব কিছু সমর্পন করার ক্ষমতা কার আছে বলুন তো?
কৃষ্ণ তো তোমাকে বলেছেন আত্মা কখনও মরে না 
আত্মার জন্ম বা মৃত্যু হয় না।

********************************

কৃতজ্ঞতা স্বীকার : কবি অমিত কুমার দে,  অমিতাভ দাস, লেখক সুকান্ত নাহা,  শ্যামল পাল, রুমা দেব মজুমদার।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri