তুমি রবে নীরবে (৪)/পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়
তুমি রবে নীরবে (৪)
পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়
অনিন্দ্য সেনগুপ্ত একজন সম্ভাবনাময় প্রাবন্ধিক ছিলেন, একথা ঠিকই কিন্তু তার সাহিত্য জীবনকে দেখলে বোঝা যায় কবিতা তার বড়ো প্রিয় বিষয় ছিল। কবিতাই তার যাপন ছিল।
চিকরাশি সহজ উঠোনে প্রতি মাসের আলাদা আলাদা লেখার বিষয় থাকে। কোনো একটি মাসের বিষয় ছিল কবিতা। সেই মাসে কবিতারও আবার শ্রেণি বিভাগ করা হয়েছিল। কবিতার শিরোনাম ছিল, "সময়ের উচ্চারণ- সমকালের কবিতা "। মনে আছে সেই মাসে পর পর দুটি রবিবার আমার দুটি কবিতা প্রকাশিত হয়েছিল। একটি ছিল "নৈশব্দ্য" অন্যটি ছিল " "মুষলপর্ব"। সহজ উঠোনে যে কয়েকজন পাঠক লেখা পড়ে শুধু মন্তব্যই করেন না, আবার ফোন করেও মতামত জানান তাদের মধ্যে অন্যতমরা হলেন রাজর্ষী দত্ত, অতনু চন্দ, সুদীপা দেব, অমিতাভ গোস্বামী, বিমল দেবনাথ, সুকান্ত নাহা, মিলি ভট্টাচার্য, শুক্লা রায়, গৌতমেন্দু নন্দী, অর্পিতা মুখার্জি প্রমুখ। সময়ের উচ্চারণ সমকালের কবিতা গুলো প্রকাশিত হওয়ার পরই অনিন্দ্য'র ফোন এসেছিল। কবিতা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছিল। তাতাসি পত্রিকার জন্য কবিতা চেয়েছিলেন। তখনও আমার সাথে কবি অমিতাভ গোস্বামীর এতটা ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে নি। অমিতাভ দা'র লেখা পড়তাম সহজ উঠোনে। এমনও হয়েছে অমিতাভ দা বাইক নিয়ে দিনবাজার দিয়ে যাচ্ছেন একটু হেসে, পাশ কাটিয়ে চলে গেলেন। অনিন্দ্য ই আমার সাথে অমিতাভ দা'র একটা মজবুত সেতু বন্ধন করে দিয়েছিলেন।
কবি অমিতাভ গোস্বামী দুই বছর বীরপাড়াতে পোস্টিং ছিলেন । অনিন্দ্য সেনগুপ্তের নাম শুনলেও, অমিতাভদা'র সাথে অনিন্দ্য'র সেভাবে যোগাযোগ ছিল না। কবিতা পড়েই ওনার সাথে অনিন্দ্য'র সম্পর্ক নিবিড় হয়েছিল।
রোববারের সাহিত্য আড্ডার একটি গ্রুপ ছিল। রুমা দেব মজুমদারের সহজ উঠোনে " "অনন্ত অনিন্দ্য " শিরোনামে লেখা "তোমাকে যেমন দেখেছি " লেখায় জানতে পারলাম, অনিন্দ্য না ফেরার দেশে চলে যাবার কয়েকদিন আগে রোববারের সাহিত্য আড্ডার গ্রুপে কবি শরৎ কুমার মুখোপাধ্যায়ের কবিতার একটা লাইন পাঠিয়েছিলেন। সেটা এইরকম,
"চোখ থেকে চশমার দুরত্ব যতখানি, জীবন থেকে মৃত্যুর দুরত্বও ঠিক ততখানি। "
"তাতাসি " পত্রিকা ঘিরে বহু কবি সাহিত্যিকদের সাথে তার যোগাযোগ ছিল। তাতাসি নামের নদীটিতে বছরের সব সময় জলধারা প্রবাহিত হয়। সেই "তাতাসি" নদীর মতো অনিন্দ্য চিরকাল সাহিত্যের আঙিনায় রয়ে যাবেন, একথা বলবার অপেক্ষা রাখে না।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴