তুমি রবে নীরবে/পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়
তুমি রবে নীরবে
পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়
"তাতাসি পত্রিকার জন্য একটা কবিতা পাঠাবেন।"
একটা কবিতা চেয়েছিল বীরপাড়া রোববারের সাহিত্য আড্ডার অনিন্দ্য সেনগুপ্ত।
সেই রাতে তখন আমার লেখার খাতায় অর্ধ সমাপ্ত কবিতা "সম্পর্কের মৃতদেহ"।
সেই কবিতাটি শেষ করে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম অনিন্দ্যকে। কি যে খুশি হয়েছিল, লিখে বোঝাতে পারব না। মুঠোফোনের অন্য প্রান্ত থেকে ভেসে আসা একটা কন্ঠস্বরের সাথে আমাদের আলাপ।
প্রয়াত কথা সাহিত্যিক জ্যোৎস্নেন্দু চক্রবর্তীর কন্যা কথাকার গীর্বাণী চক্রবর্ত্তী তার বিয়ের পরে বেশ কয়েকবার তার আক্ষেপের কথা জানিয়েছিল। গীর্বাণীর শ্বশুর বাড়ি বীরপাড়াতে। কবি তুষার বন্দ্যোপাধ্যায়ের বীরপাড়া সবুজে মোড়া এক উপত্যকা। গীর্বাণী জানিয়েছিল সে বীরপাড়াতে সব আছে কিন্তু সে জলপাইগুড়ির সাহিত্য সভাগুলো বীরপাড়াতে খুবই মিস করে। জলপাইগুড়িতে প্রায় প্রতি শনিবার-রবিবার সাহিত্যের অনুষ্ঠানগুলো হয়ে থাকে। যেটা সাহিত্য সংস্কৃতিমনস্ক সকলের বেঁচে থাকার অক্সিজেন।
অনিন্দ্য'র আহ্বানে বীরপাড়া জুবিলি ক্লাবে পৌঁছলাম। এককথায় অবাক হয়েছিলাম, "তাতাসি" পত্রিকার প্রকাশ অনুষ্ঠানের উন্মাদনা দেখে।
পর পর দুটি " চিকরাশি" সাহিত্য অনুষ্ঠানেই রোববারের সাহিত্য আড্ডার কর্মসূচি মনকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। এই বছরও ধূপগুড়ির পূর্ব মল্লিকপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত, "চিকরাশি " সাহিত্য আড্ডার সবার সাথে দেখা হল দেখা হল অনিন্দ্য 'র সাথে। সবাইকে দেখলাম, সবার অনুষ্ঠান শুনলাম। মন ছুঁয়ে গেল সকলের কবিতা, অনুগল্প পাঠে এবং গানে।
কবি অমিত কুমার দে 'র কল্যানে "সহজ উঠোন" একটা মাধ্যম, যেখানে সবার সাথে দেখা হয় তাদের লেখার মাধ্যমে। সব শেষ দেখা হয়েছিল অনিন্দ্যর সাথে তার লেখার মাধ্যমে। সবার সাথে সে ও লিখেছিল, "লিখছি তোমায় যীশু"। কি যে অসাধারণ ছিল সেই লেখা পাঠকমাত্রেই সেকথা জানেন।
"তাতাসি'র জন্য একটা কবিতা দেবেন "। এবারও দ্বিতীয় সংখ্যার জন্য লেখা চেয়েছিল অনিন্দ্য। কবিতার খাতা থেকে সাথে সাথে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম একটি কবিতা। কি যে খুশি হয়েছিল অনিন্দ্য, লিখে প্রকাশ করতে পারব না। তার কাছেই শুনেছিলাম, "তাতাসি একটা নদীর নাম, যে নদীটি চা বাগানের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলছে। এই নদীটির জল নাকি কখনো শোকায় না। বছরের বারো মাস তিন'শ পঁয়ষট্টি দিন এই নদীটি কুলুকুলু ধারায় প্রবাহিত হয়। এই নদীর মতো অনিন্দ্য আমাদের সবার হৃদয়ের মাঝে রয়ে যাবে চিরকাল।
কবি শঙ্খ ঘোষ বলেছেন, "কাছের মানুষ একবার না ফেরার দেশে চলে গেলে, তাঁকে স্মরণ করার কাজটি নিজের হৃদয়কেই খনন করবাই সমার্থক।"
আমরা সবাই তার অকাল প্রয়াণে আমাদের অন্তরাত্মাকে খনন করে চলেছি। অনিন্দ্য তাঁর লেখার মধ্যে দিয়েই আমাদের মধ্যে রয়ে যাবে..... এ আমার দৃঢ বিশ্বাস।
আমরা সকলেই মরণসাগরের পাড়ে বাস করি। আমরা সবাই সেই মহাসমুদ্রে ঝাঁপ দেবার পথের যাত্রী। এই অমোঘ মৃত্যু নিয়ে কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় বলেছেন,
" যেন কোনো তালকানা পাখি
উড়ে এসে পড়বেই ফাঁদে" ।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴