তুমি থেকো সঙ্গে আমার/শ্রাবনী ভট্টাচার্য্য
তুমি থেকো সঙ্গে আমার
শ্রাবনী ভট্টাচার্য্য
----------------------------
প্রিয় রবি ঠাকুর,
আজ তোমাকে যে কথা লিখব, তা আগে কখনো কাউকে লিখিনি। বলতে পারো ভাবিইনি তেমন ভাবে।আজ যখন জীবনের অনেকটা পথ হাঁটতে হাঁটতে চলে এসেছি অনেকটা দূর তখন তোমাকে আবার নতুন করে খুঁজে পাই। তোমার সাথে পরিচয় তো আজকে নয়। সেই কবেকার কথা! বাবার টেলিফোন এক্সচেঞ্জের রিক্রিয়েশন ক্লাবের রবীন্দ্রজয়ন্তীতে চার বছর বয়েসে 'হাট' কবিতা বলা দিয়ে শুরু। সামনের সারিতে দর্শকাসনে বসে আমার চেয়ে বছর চারেকের বড়ো দাদা। কবিতা বলতে বলতে মাঝখানে গেছি ভুলে।ষ্টেজ থেকেই মাইকে বলছি "তারপরে কি রে দাদা"? হাসির ঢেউ উঠলো বাবার সহকর্মীদের মধ্যে।আমার নামই হয়ে গেল তারপরে কি রে দাদা? মা র একটা সঞ্চয়িতা ছিল বিশ্বভারতী প্রকাশনীর। সেটা নিয়ে বিস্তর ঘাটাঘাটি করতাম ছোটবেলা থেকেই। মা শিখিয়ে দিত তোমার কবিতা আবৃত্তি করতে। সেই আবৃত্তির সূত্র ধরেই তোমার সাথে আমার প্রথম পরিচয়। তেমনই একটা কবিতাকে নিয়েই আমার আজকের এই চিঠি। তোমার কবিতা "হঠাৎ দেখা" মুখস্থ করেছিলাম অনেক ছেলেবেলায়। একেক সময়ে এক এক অর্থ বয়ে নিয়ে এসেছে তোমার এই লেখাটা। কতবার যে কত জায়গায় বলেছি তোমার এই লেখাটা তার ইয়ত্তা নেই। এখন এই চল্লিশের ওপারে এই লেখাটা যেন অন্য অর্থই বহন করে নিয়ে আসে। কত কিছুই তো হতে পারত জীবনে! কত কিছুই বা হতে পারত না! ভালোবাসাকে ভালোবেসেছি কৈশোরকাল থেকেই বোধহয়।ভালোবাসার জন্য হাত বাড়াতেই হাত পুড়েছে। প্রেম অপ্রেম হয়েছে কখনো বা।প্রেমের জন্য নরক দর্শনও করেছি বলতে পারো। এখন আমার নিম্নগতি। সেই অসীম অনন্তের প্রেমের জন্যই প্রতীক্ষা এখন। সেই যে রেলগাড়ির কামরা। এরকম তো কতই হয়।রেলগাড়ির কামরা বদলে গিয়ে হয়তো বা ফেসবুক।কেমন আছো কেমন আছিস, সাজানো গল্প। সাজানো হাসি। নিজেকে সুখী প্রমাণ করার অবিরাম চেষ্টা। সমাজবিধির পথ অনেক উন্মুক্ত হলেও মনের বিধির পথ খোলে কৈ?
দুরত্বই ভালো কবি। দূরত্ব যে বেঁচে থাকাটুকু উপহার দেয়, কাছে গেলেই তার মরণ। তুষার আবৃত পাহাড়, সবুজে ঢাকা অরণ্য যেমন দূর থেকে সুন্দর। কেমন আছি, আছোর ছাইভস্ম প্রশ্ন। যেদিন চলে যায় কবি, সত্যিই চলে যায়। কত পলি পরে চলে যাওয়া সময়ের উপর। একটু খুঁড়লেই চোখের কোল ভিজে আসে।আবার সংসারের প্রবল প্রবাহ। আবার পলিময় মৃত্তিকা। তবু কবি, রাতের সব তারাই থাকে দিনের আলোর গভীরে।থাক কবি থাক।কিছু কথা থাক রাতের কালোর গভীরে। নিঃসঙ্গ, একাকী, তমসাবৃত রাত্রি। ছোট্ট ব্যালকনি থেকে রাত্রির নিস্তব্ধতা। শুধু জেগে থাকে অনন্ত তারা।যা পাইনি তা নিয়ে।আচ্ছা সত্যিই কি চেয়েছিলাম কিছু?চাওয়ার মতো করে। নাকি যা পেলাম না এই জীবনে সেটাই একটা ক্যাথারসিসের মতো কাজ করে কবি? কেঁদেও বুঝি বা সুখ আসে? ঐ যে তুমি বলেছ না, "বঞ্চিত করে বাঁচালে মোরে", সেটাই সত্যি কবি। ষ্টেশন আসলে সবাই এক এক করে নেমে যায়। একাই তো চলতে হবে বাকি পথ, অসীম অনন্তে বিলীন হওয়ার আগে পর্যন্ত। তুমি থেকো সঙ্গে আমার। পরান সখা বন্ধু হে আমার।
ইতি
শ্রাবনী
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴