সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon

তিনি সতেরও মা, অসতেরও মা : সারদা দেবী/পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়

তিনি সতেরও মা, অসতেরও মা : সারদা দেবী 
পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় 

মা সারদা দেবী অর্থাৎ সারদামণি মুখোপাধ্যায় ছিলেন সাক্ষাৎ দেবী সরস্বতীর জীবন্ত প্রকাশ। প্রথাগত শিক্ষা না নিয়ে কিভাবে মানব সমাজকে সঠিক ভাবে পথ দেখানো সম্ভব সারদা দেবী তার প্রকৃত উদাহরণ।  যাপন শিক্ষা মানুষের জীবনের এক অতি প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মা সারদা প্রথা গত শিক্ষা ছাড়াই সারাজীবন ধরে  জীবনের কঠিন সমস্যা সমাধানের পথ দেখিয়ে গিয়েছেন। শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের সহধর্মিণী নিজে সাধনায় ব্রতী থেকে  সহজ সরল ভাষায় ভগবত তত্ত্ব প্রচার করেছিলেন। মানুষের  জীবন নানা কণ্টকাকীর্ণ পথ দিয়ে ঘেরা। সেই সমস্যাসংকুল জীবনের কোন পথে কিভাবে চলতে হবে তার সহজ ব্যাখ্যা দিয়ে গিয়েছেন। গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন,  " যিনি যোগী  তিনি তৎপরায়ণ সাধুগন অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ, এমনকি যারা জ্ঞানমার্গ অথবা কর্ম মার্গের সাধক তাঁদের অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠ, অতএব হে অর্জুন,  তুমি যোগী হও।" মা সরদা নিজে গৃহী হয়েও ঈশ্বরের সাধনার বলে হয়ে উঠেছিলেন পরমাপ্রকৃতি,  প্রকৃত একজন যোগী এবং ধর্মগুরু। 

তিনি বলতেন এই জগতসংসারে যেমন আলো আছে তেমন অন্ধকারও  আছে, যেমন সৎ আছে তেমন  অসৎও  আছে। অন্ধকার না থাকলে যেমন আলোকে উপলব্ধি করা সম্ভব হয় না।তেমনভাবে অসৎ আছে বলেই সৎ মানুষের এত কদর। এই জগৎ সংসার থেকে সব অসৎ কখনোই দূর করা সম্ভব নয়। আমি অসৎ এর মা হয়ে তাদেরকে সৎ পথে পরিচালিত করার কাজ করে  যাওয়ার চেষ্টা করছি মাত্র।
তিনি বলতেন, " জীবন একটা "খোঁজ "। সকল মানব জগতের " খোঁজ " হল শান্তি।  গৃহীরা সংসার করছেন শান্তি র আশায়,  সন্ন্যাসীরা পথ হাঁটছেন শান্তির আশায়। কেউবা  ঈশ্বর লাভের আশায় সমস্ত জীবন অক্লেশে কাটিয়ে দিচ্ছেন।"  মা সারদা বলেছেন "ঈশ্বর লাভ হলে কি শিং গজায়?  বিষয়টা  একদমই তা নয়। সদা ঈশ্বরের নাম গান ভালো চিন্তায় আত্মপ্রসাদ লাভ হয়। আত্মপ্রত্যয় জন্মায় আনন্দ লাভ হয়। এই আনন্দ লাভ অর্জন করতে গেলে কারো দোষ দেখা যাবে না। তবেই চিত্ত শুদ্ধ হবে। অর্থাৎ মোক্ষলাভ বা সৎচিদানন্দ ভাবের প্রকাশ ঘটবে। শ্রী শ্রী মা সারদা মেয়েদের শিক্ষা প্রসারে বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন।  ভক্তরা মা'কে কখনোই শিক্ষিকা হিসাবে পান নি। দেখেছেন গৃহী রূপে তিনি তরকারি কাটছেন, হাসি মুখে সংসার সামলাচ্ছেন। বাইরে থেকে মায়ের বাড়িতে গিয়ে ভক্তরা অবাক হতেন। এত ছোট ঘরে তিনি থাকেন কিভাবে?  স্থুলকায় ভক্তদের মায়ের ঘরে ঢুকতে অসুবিধে হত। মা ঠিকই  প্রতিবার মাথা নিচু করে ঘরে ঢুকতেন। হাসি মুখে সংসারের খুঁটিনাটি কাজ করতেন। ঈশ্বরের সেবা করতেন, ভক্তদের নিজের হাতে প্রসাদ বিতরণ করতেন। 

তাঁর লেখা তো কোনো বই ছিল না, তবে তার টুকরো টুকরো কথা যা তাঁর বাণী, আজ আমাদের কাছে কথামৃত হয়ে ঝরে পড়ছে।

মা বলতেন, "মন হল মত্ত কড়ি হাওয়ায় বেগে ছোটে। " অর্থাৎ  মন পাগলা হাতির মতো,  হাওয়ায় বেগে ধাবিত হয়। এখনই মনে মনে ইচ্ছে হল, "দক্ষিণেশ্বরের মা ভবতারিণী কে দর্শন করে এলাম।" মনকে সৎ পথে পরিচালিত করার জন্য শুদ্ধ আহার ভোজন করা আবশ্যক।  সব খাওয়ার জিনিসই ঈশ্বরকে নিবেদন করে সেই খাবারকে প্রসাদ ভেবে  খাওয়া উচিৎ। এইভাবে  জীবন যাপন করলে শরীর মন পবিত্র থাকে। দেহ নীরোগ হয়।
মা বলতেন জীব সেবাই  শিব সেবা সেই ব্রতে সব মানুষের অবিচল থাকা উচিৎ। তাঁর জন্মের পর যখন জ্ঞান হল তখনই  দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল। জয়রাম বাটির মুখোপাধ্যায় পরিবারে তাঁর জন্মের পর থেকে দেখে তিনি  আসছেন তাঁর বাবা রামচন্দ্র মুখোপাধ্যায় এবং মা শ্যামাসুন্দরী দেবী দুর্ভিক্ষ পীড়িত মানুষের মধ্যে অন্নভোগ বিতরণ করছেন। ঘরের শেষ দানাটিও মানুষের সেবায় কাজে লাগাচ্ছেন। 
মনকে শুদ্ধ করবার জন্য তিনি  সংসারে  সব কাজের মধ্যে ঈশ্বরের নাম জপ করার পরামর্শ দিয়ে গিয়েছেন। একজন ভক্তের পক্ষে  দিনে পনেরো হাজার বার ঈশ্বরের নাম  জপ করা সম্ভব বলে তিনি মনে করতেন, কেননা তিনি নিজে  দিনে সংসার সামলে লক্ষাধিক বার ঠাকুরের নাম জপ করতেন। কিন্তু একবারেই তো সেটা সম্ভব নয়।  প্রথমে দ্বাদশ বার,পরে একশ আট বার, ধিরে ধিরে এটা বাড়াতে পারলে মনে কু চিন্তা বা অন্যের দোষ নজরে আসবে না। অন্যের সবটা ভালো, এই বোধ জন্মালে তখনই অসতের মা হয়ে ওঠা সম্ভব হবে।


আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri