তমোসো মা জ্যোতির্গময়/কবিতা বণিক
তমোসো মা জ্যোতির্গময়
কবিতা বণিক
দামোদর মাস বা কার্তিক মাস জুড়ে মর্ত্য লোকে চলে দীপদান উৎসব। এ যেন অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরা। আমরা শ্লোকে পড়ি “ অসতো মা সদগময় / তমসো মা জ্যোতির্গময় “ অর্থাৎ অসত্য থেকে সত্যে নিয়ে চল। সমস্ত অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে চল। আমরা সাংসারিক জীব। জন্ম- মৃত্যুর চক্রে আবর্তিত হতে থাকি। তাই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা জানাই , এই অনিত্য মৃত্যুময় জগত থেকে আমাকে শাশ্বত জগতে নিয়ে চল। জন্ম- মৃত্যুর চক্র থেকে উদ্ধার কর, মৃত্যু থেকে অমৃতের পথে নিয়ে চল।
আমাদের পূর্বপুরুষ অর্থাৎ যারা ভুলোক ছেড়ে দ্যুলোকে চলে গেছেন, সেই আলোকময় আকাশ থেকে আমাদের আশীর্বাদ করুন। তাদের পথ চিনে নিতে সাহায্য করবে এই দীপালোক। হেমন্তের শিশিরের মতো হয়ত তারা নেমে আসেন আমাদের আশীর্বাদ করতে। অনেক বাড়িতেই ছাদে বা অনেক উুঁচু করে বাঁশের মাথায় তোলা হয় তারার মতোই নরম, স্নিগ্ধ প্রদীপশিখা। যে আলো আমাদের অন্তর ছুঁয়ে পূর্বপুরুষদের প্রণাম জানায়। শুধু কি তাই? সমস্ত বিষ্ণু মন্দিরে প্রতিদিন সবাই আলো হাতে শ্রী কৃষ্ণ বা বিষ্ণু ভগবানের আরতি করেন। সমস্ত মন্দিরের ভেতরে কৃত্রিম আলো নিভিয়ে ওপর থেকে নীচে স্নিগ্ধ দীপালোকে সাজানো সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ মানুষ অপ্রাকৃত স্বর্গীয় সৌন্দর্যের নেশায় মেতে ওঠে। এখানেও বিষ্ণু ভগবানের কাছে সমস্ত কার্তিক মাস জুড়ে একই প্রার্থনা, আমাদের পূর্ব পুরুষদের আলোর পথ দেখাও, আমাদেরও সত্যের আলোয় উদ্ভাসিত করো। বৃন্দাবনে - যমুনা নদীর পাড়ে, রাধাকুণ্ডে, শ্যামকুণ্ডে, ললিতা কুণ্ডে, উদ্ধব কুণ্ডে, গোবিন্দকুণ্ডে আরও অন্যান্য সব কুণ্ডে, গোবর্ধন পাহাড়ের তলায় প্রদীপের স্নিগ্ধ আলোয় সুসজ্জিত হয় বৃন্দাবন। তখন মর্ত্যের এই বৃন্দাবনকে গোলক ধাম মনে হয়। অপ্রাকৃত সৌন্দর্য্যে ভরপুর হয় বৃন্দাবন। দীপাবলীর আগের দিন আসে ভুত চতুর্দশী। সেদিন বাড়ি- ঘরে চৌদ্দটি প্রদীপ জ্বলানো হয় আমাদের পূর্বতন চৌদ্দপুরুষদের উদ্দেশ্যে। দীপাবলীর দিন অমাবস্যার ঘোর অন্ধকার আকাশে লক্ষ তারাদের মতো মর্ত্যলোকেও বাড়ির ছাদে, সিঁডিতে, বারান্দায় , উঠোনে, সব কোণে কোণে,সর্বত্র,স্কুল, কলেজ, অফিসে, রাস্তায়, মন্দিরে, মন্দিরে জ্বলে সব স্নিগ্ধ প্রদীপ শিখা। আকাশে যে তারাদের আলোর স্নিগ্ধতা মনকে আনন্দ দেয় ঠিক সেই রকমই মর্ত্যলোকেও লক্ষ লক্ষ প্রদীপের নরম আলোক শিখা স্বর্গীয় সৌন্দর্য্যে ভরিয়ে তোলে। মনে হয় মাটিতে বুঝি স্বর্গ এসেছে নেমে। দুর হবে মর্ত্যের নিকষ কালো অন্ধকার, মানুষের অজ্ঞানতার অন্ধকার। তামসীকে জয় করে, হিমেল হাওয়ার ছোঁয়ায় মানুষের মন প্রশান্তিতে ভরে ওঠে হেমন্তের নরম স্নিগ্ধ আলোয়। তাই তো আমরা সাজাই আলোয় ধরিত্রীরে।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴