সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon

ঢাকা-চট্টোগ্রাম-কক্সবাজার-টেকনাফ এবং বাড়ি ফেরা/প্রশান্ত নাথ চৌধুরী

ঢাকা-চট্টোগ্রাম-কক্সবাজার-টেকনাফ 
এবং বাড়ি ফেরা
প্রশান্ত নাথ চৌধুরী

আপনি যদি এক দঙ্গল বঙ্গজ নিয়ে ভ্রমন পরিকল্পনা করেন তবে দু-একটা হোঁচটতো খেতেই হবে।‌সবার ঘর মনঃপুত হওয়া অসম্ভব,‌ গাড়ির সিট নিয়ে কোন অসুবিধে ছিল না। খাওয়া নিয়ে খুবই  টুকটাক, সেতো হবেই। আর সবাই ভয়ে থাকে, ব্যাগ যদি খোয়া যায়। মোটামুটি ভ্রমন কোম্পানীর লোকজন আপনার লাগেজ ওঠানো নামানো করবে। তবে আপনি একটুও হাত লাগাবেন না তা কি হয়? মোটের ওপর আমাদের ভ্রমন সংস্থা ভালই  ছিল। 
ঢাকায়  ২০ এবং ২১ শে ফেব্রুয়ারী,  এই দুটি রাত খুবই আনন্দে আর ঘোরা-ফেরায়  কেটেছে। ঢাকার একটাই অসুবিধে তা হলো স্থবির ট্রাফিক সমস্যা। ভোরে ব্যাগ গোছাতে গিয়ে মনে‌‌ হলো আবার তো আসছি ফিরে ঢাকায়। তখন অটোয় চেপে  ঘুরব।
২২.০২.২৩  সকালে ঢাকা থেকে রওনা  হয়ে প্রায় দেড় ঘন্টার পথ পেরিয়ে বারদি এসেছিলাম। এ ছিল শ্রীশ্রী লোকনাথ বাবার কর্মভূমি। হাজার হাজার ভক্তের সমাবেশ। দিনটি ছিল অন্নপ্রাশন অনুষ্ঠানের। শুনেছিলাম অনেকেই সন্তান কামনায় ঠাকুরের কাছে মানত করেছিলেন। প্রচুর ঢাকঢোল বাজছিল। আমি ৮১ টি অন্নপ্রাশনের শিশুকে টোপর পরা ঝকঝকে পোষাকে দেখেছি। পরে আর গুনে উঠতে পারিনি। অনেককে আদর করেছি, ছবি তুলেছি। কেউ ওখানেই মধ্যাহ্ন ভোজনের আমন্ত্রন জানিয়েছেন। কেউ হাতে প্রসাদ তুলে দিয়েছেন। এখানে বাবা লোকনাথ সমাধিস্থ আছেন।
জোতি বসুর আদি বাড়িও এই বারদি-তে, সোনার গাঁ। অনেকবার উনার সাক্ষাৎ পেয়েছি, কথা হয়নি। নমস্কার বিনিময় হয়েছিল।  তাঁর বাড়ি দেখতে আমি আর যাইনি। 
বেশ রাত করে কুমিল্লা  পেরিয়ে এলাম কর্ণফুলী নদীর কোলে চট্টগ্রাম । উঠেছি ভারি সুন্দর সরকারি মোটেল সৈকত-এ।  এটি আসলে বানিজ্য নগরী  পাহাড় সমুদ্রে ঘেরা। রাত বারটায় ডিনার সেরে, কক্ষে প্রবেশ।  পরদিন দুপুরে যাব কক্সবাজার ।  ওখানে দুদিন. সমুদ্র সৈকতে কাটাব। পরদিন সকালে আমরা চট্টগ্রাম পরিদর্শনে বের হলাম। এই শহরের. একসময় বাস করেছেন, বিপ্লবীদের সংগঠিত করেছেন এবং বন্দুক তাক করে ব্রিটিশদের‌ বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন মাস্টারদা। যে নাম প্রতিটি বাঙ্গালীর  চিরকালের হিরো। দেশের জন্য এমন জীবন বলিদান স্মরনীয় তো বটেই। গেলাম চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের অকুস্থল দর্শনের জন্য। দেখতে পাইনি সেই স্মৃতি,  কালের নিয়মে ক্ষীন  হয়েছে। এখনও ইউরোপিয়ান ক্লাবের পুরনো বাড়িটি কোনক্রোমে টিকে আছে। রেলের এক বড়কর্তা ওখানে বসেন। তিনি যথেষ্ট সম্মান দিয়ে বাইরে এসে একটা টিলা দেখিয়ে বললেন ' ওই  খানটায় মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে ১৯৩০ সনের ১৮ই এপ্রিল ইংরাজদের সঙ্গে লড়াই হয়েছিল। সামনে ২০০ মিটার দূরে একটা রাস্তার  তে মাথায় প্রীতিলতা  ওয়াদ্দেদার পজিশন নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। পরে তিনিও সরাসরি লড়াইয়ে অংশগ্রহন  করেন।'  প্রশ্ন করলাম  'আমি এই শহরে মাস্টাদার কোন মূর্তি,  তাঁর নামে রাস্তা বা পার্ক দেখিনি।' ভদ্রলোক একটা সরল উত্তরে বললেন ' এ দেশের বর্তমান প্রজন্ম ১৯৭১ সনের স্বাধীনতাকেই প্রকৃত স্বাধীনতা মনে করে। ইংরেজ বিতারনের বছর ১৯৪৭ সনের গুরুত্ব  অনেকটাই লঘু হয়েছে।' কথা না বাড়িয়ে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের আবক্ষমূর্তির কাছে এসে শ্রদ্ধা জানালাম। 

গতকাল রাতে কক্সবাজারে এসেছি।  বাংলাদেশ সরকারের উপল মোটেলে উঠেছি। সুবিশাল পুরনো হোটেল। তাই টুকটাক অসুবিধে ছিল। সকাল বেলা প্রথমে মোটেলের নারী বাহিনীর সঙ্গে শৈবাল কাফের পাশ দিয়ে যেতেই সামনে এলো আপাত শান্ত ঢেউয়ের অবিরাম যাওয়া আসা। হাওয়াই জাহাজ মাথার উপর দিয়ে ট্যুরিস্ট নিয়ে নামছিল। প্রচুর ফটো স্যুট হয়েছিল।  ভ্রাতা সুশান্ত বলল একটা বড় অ্যাকোযরিয়াম  আছে বেড়িয়ে আসি, মাছ এমন বৈচিত্রময়  হতে পারে না এলে মিস করতাম।  পরে সুগন্ধা বীচে এলাম। নানা কিসিমের রাইডিঙে ব্যস্ত বীচ। চা খেয়ে হোটেলে ফিরলাম। স্নান করে ইলিশ দিয়ে ভাত খেয়েই গাড়ি  চেপে টেকনাফ। কিন্তু  ততক্ষনে সেইন্ট মার্টিন দ্বীপে যাবার শেষ জাহাজ ছেড়ে গেছে । ভাগ্যে নেই। প্রচুর শিশু উঠোনে খেলছে । রোহিঙ্গা উদ্বাস্তের আবাস দেখলাম।  প্রচুর শিশু খেলছিল। ইরাবতী নদী ও কাছেই মাঠে ছড়িয়ে ছিটিয়ে লবন তৈরী হচ্ছিল । গা ম্যাজ ম্যাজ করছিল। তখন আমি মোটেই  ঠিক নেই।  এত ছবি পাগল মানুষ জনের সঙ্গে অতীতে বেড়াই নি। প্রথম দিন থেকেই নিজেদের ছবি আর ছবি। বীচে কনকনে ঠান্ডা হাওয়া। উঁচু  গলুইয়ের অনেক নৌকা বীচের বালিতে বিশ্রামে। শরীর যখন আর সহ্য  করতে পারছে না, ঠান্ডায়  যখন কুঁকড়ে গেছে, তখন একা ফিরে এলাম গাড়িতে । ড্রাইভারের সহকারীকে একটা জ্যাকেট পরতে দেখেছি। ওর কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে সেই জ্যাকেট গায়ে চাপালাম।  একটু আরাম হলো।
কাল আবার ঢাকায় ফেরা। রাতে জ্বর এলো। সকালে শুধু বিস্কুট আর প্যারাসিটিমল খেয়ে দুগ্গা দুগ্গা বলে রওনা ‌দিলাম ঢাকার পথে। গিন্নী তার দিদিকে বলেছে আমার জ্বরের কথা। রাত সাড়ে  দশটায় বাপীর সঙ্গে আমি ও ভাই গেলাম ডাক্তার দেখাতে। যুবক ডাক্তার। দেখলেন ভাল করে, ওষুধ দিলেন প্রচুর। সেদিন ছিল ২৫ শে ফেব্রুয়ারী । ২৬ তারিখ সবাইকে ঢাকা শহর ঘুরতে পাঠিয়ে একা সারাদিন শুয়ে কাটালাম। বিকেল থেকে কিছুটা ভাল লাগছিল। পরদিন সকালে বেরিয়ে প্রথমে বাংলা একাডেমী। তাদের কাজকর্মের. পরিধী জেনে অভিভূত । কি বিপুল পুস্তক ভান্ডার। এক কর্তার সঙ্গে শুরুতেই দেখা। তার চায়ের আমন্ত্রন রক্ষা করতে পারিনি। একাডেমীর কর্মী সামস্ নুর তাদের প্রকাশিত' ধান শালিকের দেশ ' পত্রিকার একটি সংখ্যা উপহার দিলেন। কিশোরদের এমন সুন্দর পত্রিকা খুব কম চোখে পড়েছে। কিছু বই  কিনেছিলাম প্রচুর ডিসকাউন্টে। এরপর এলাম বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধি ক্ষেত্রে। মাথা ছুঁইয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছিলাম। আজ মনে হচ্ছে  --  সে তুমি অস্কার জয়ী হতে পার কিন্তু  বিদ্রোহী কবির সুরারোপিত সংগ্রামের গান " কারার ঐ লৌহ কপাট, ভেঙ্গে ফেল কররে লোপাট" গানটির সুর বিকৃতি পৃথিবীর ৩৫ কোটি বাঙ্গালী ক্ষমা করবে না। হোটেলে শরীর খারাপ নিয়ে ফিরেছিলাম। 
সেদিন বিকেলে আমরা ঢাকা ক্যানটনমেন্ট স্টেশন থেকে মিতালী এক্সপ্রেস ধরেছিলাম নিউ জলপাইগুড়ি ফিরতে। ভয়ানক একটা যানজট পেরিয়ে। ওখানে ইমিগ্রেশনে অহেতুক সময়ের নষ্ট হচ্ছিল, বিরক্ত হয়েছিলাম। মিতালী এক্সপ্রেসের ভাড়া বন্দে ভারতের মত, কিন্তু কোচের মান ভাল নয়। খাবারের কোন ব্যবস্থা নেই। তবে আমাদের ভ্রমন সংস্থা কোন ত্রুটি রাখেনি। জ্বরের ঘোর নিয়ে পরদিন জলপাইগুড়ির উপর দিয়ে এন জে পি জংশনে ফিরে এলাম সঙ্গে অনাবিল কিছু স্মৃতি ও ভালবাসা নিয়ে। একাই কখনো বলি ' আবার আসিব ফিরে..........'।

(এটা বাংলা দেশ ভ্রমনের শেষ কিস্তি)

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri