সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
26-May,2024 - Sunday ✍️ By- সুকান্ত নাহা 415

ডুয়ার্স : রবীন্দ্রনাথ কখনও এখানে আসেননি/সুকান্ত নাহা

ডুয়ার্স : রবীন্দ্রনাথ কখনও এখানে আসেননি
সুকান্ত নাহা
----------------------------------------------------

"তোমারি ঐ অমৃত পরশে  আমার হিয়াখানি
হারালো সীমা বিপুল হরষে, উথলী উঠে বাণী"

সত্যি বলতে কি গুরুদেব, এই মুহুর্তে আমার ঠিক ওই রকমই অবস্থা। ওপরের লাইন দুটি আপনি আপনার "নিভৃত প্রাণের দেবতা"র উদ্দেশ্যে লিখেছিলেন।  আমি আপনার উদ্দেশ্যে লিখছি। আপনি আমার জীবনে কতটুকু ছেয়ে আছেন তা ভাবতে গিয়ে দেখি আপনার অমৃতের ছোঁয়ায় বিপুল হরষে  আমার অন্তরের অন্তরতম প্রদেশ থেকে  দুধের মতো উথলে উঠে আসছে কিছু স্মৃতি কিছু অনিবার্য জিজ্ঞাসা।  

আমি অতি সাধারণ মানের মানুষ। কি মেধায়, কি মননে, কি যাপনে। যারে কয় low profile। শয়নে স্বপনে, জাগরণে কত মানুষ আপনাকে নিয়েই শুধু ভাবেন। তাঁদের জীবনের সিগনেচার টিউন ," তোমারেই করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা, এ সমুদ্রে আর কভু হব না পথহারা " সেভাবে কোনও দিন আপনাকে ভাবতেই পারিনি। 

আমার জীবনে বসন্ত বাতাসের মতো আপনি হুটহাট ঢুকে পড়েছেন। মনটা আউলা-বাউলা  করে দিয়ে চলে গেছেন যখন তখন। পবিত্র একটা অনুভূতি চিত্তাকাশ ছেয়ে দিয়ে মিশে গেছেন বনভূমির ভেতর। তখন মনে হয়েছে," এই তোমারি পরশরাগে চিত্ত হল রঞ্জিত/ এই তোমারি মিলনসুধা রইলো প্রাণে সঞ্চিত/ তোমার মাঝে এমনি ক'রে নবীন করি লও যে মোরে/ এই জনমে ঘটালে মোর জন্ম জন্মান্তর/ সুন্দর, হে সুন্দর।"  আক্ষেপ হয়েছে " মাঝে মাঝে তব দেখা পাই চিরদিন কেন পাই না..." যে খেদ আপনারও যেমন ছিল পরম ব্রহ্মের প্রতি  আমার আপনার প্রতি।  আসলে আপনার  আগে এক চৈতন্য মহাপ্রভু ছাড়া রক্তমাংসের দেবতা তো বাঙালি দেখেনি। তাই আমাদের সকল ভালবাসা " ধায় যেন... তোমার পানে, তোমার পানে, তোমার পানে...। " 

জ্ঞানীগুণী মানুষজন সভা- সমিতিতে, স্কুলে, কলেজে, সেমিনারে, লেখাপত্রে কত জ্ঞানের কথা বলেন আপনাকে নিয়ে। যুগ যুগ ধরে আপনি কীভাবে বাঙালি জাতির মননে, চেতনায়, ভাবনায় ছেয়ে আছেন সেসব নিয়ে কত কাঁটাছেঁড়া করেন। আপনার সাহিত্য, নাটক, গান নিয়ে চর্চা করে, সিনেমা তৈরি করে, এমনকি আপনার মূর্তি গড়ে, আপনাকে নিয়ে থিসিস লিখে কত মানুষ আপনার বিভায় নিজেরা ঔজ্জ্বল্য পেয়ে চলেছেন। আমার অত্ত জ্ঞানগম্যি নেই। চা- শ্রমিক মানুষ। "চা", যে বস্তুতে আপনার তেমন আসক্তি না থাকলেও অতিথি আপ্যায়নে ওটাই কিন্তু আপনি বেছে নিতেন। সচা বিষয়ক কবিতাও লিখেছেন " হায় হায় হায়, দিন চলি যায়। চা-স্পৃহ চঞ্চল চাতক দল... ইত্যাদি।  একটা বয়সের পর ভৃত্য বনমালীর হাতে তৈরি চা রোজ সকালে এক পেয়ালা বরাদ্দ ছিল আপনার।  জাপানে গিয়ে জাপানি মেয়েদের চা পরিবেশন করার শৈলী দেখে আপ্লুত হয়েছিলেন। শান্তিনিকেতনের আশ্রমিকদের মধ্যে চা পানীয়টি জনপ্রিয় করতে গড়ে তুলেছিলেন " সুসিমো চা-চক্র"।

কিন্তু  আমার  প্রশ্ন যে অন্যখানে। আপনি আপনার জীবদ্দশায় ডুয়ার্সের বন বাংলোয় কিংবা চা বাগানে এসে কখনও থেকেছেন কি? মানে কোনও চা বাগানের ম্যানেজার কিংবা ডিরেক্টরের বাংলোয়?  মংপুতে সিংকোনা  গার্ডেনের ম্যানেজার মনমোহন সেনের বাড়িতে এসে মৈত্রেয়ী দেবীর আদর যত্নে থেকে গেছেন। কিন্তু  যদ্দুর জানি চা বাগানের বাংলোয় থাকার অভিজ্ঞতা আপনার হয়নি। না হওয়াই স্বাভাবিক। কেননা সেসময় চা বাগানের ম্যানেজার মাত্রেই ছিলেন ইউরোপীয় সাহেব। যাদের অধিকাংশই ছিল স্কটল্যান্ড,ইংল্যান্ড আয়ারল্যান্ডের যত বাউণ্ডুলে, অশিক্ষিত, সাদা চামড়ার মানুষ। তাঁরা আপনার কদর বুঝতো কীভাবে? অথবা আপনিও তাঁদের আতিথেয়তা গ্রহণ করতে চাইতেন কিনা সন্দেহ। 

চায়ের বাগান আপনি নিশ্চয়ই দেখেছেন পাহাড়ে। কিন্তু ডুয়ার্সে আপনি কখনও চা খেতে আসেননি। না আসাটাই স্বাভাবিক।১৯৩৮ থেকে ১৯৪০ মংপুর গৌরীপুর হাউসে যখন আপনি আসা যাওয়া করতেন পথে তিস্তার পাড় ঘেঁষে তিস্তা ভ্যালি রেলওয়ের গেলখোলা পর্যন্ত রেল চলতো।  ১৯৩৭ এ শুরু হলো করোনেশন ব্রীজ এর কাজ।মোটরযোগে শিলিগুড়ি থেকে মংপু যেতে যেতে হয়তো আপনার চোখেও পড়েছে সেই সেতু তৈরীর কর্মকাণ্ড। তিস্তার পূর্ব পাড়ে তৎকালীন ডুয়ার্সে পৌঁছতে হলে লালমনিরহাট হয়ে লাটাগুড়ি অথবা জলপাইগুড়ি থেকে খেয়া নৌকোয় তিস্তা পেরিয়ে বার্ণেশ ঘাট হয়ে পৌঁছতে হতো। ১৮৭৪ এ ডুয়ার্সে চা বাগান পত্তনের পর ততদিনে ছয় দশক ধরে চলেছে ডুয়ার্সে ব্রিটিশ প্লান্টারদের তুমুল চায়ের চাষ। কিন্তু আপনি একবারও ডুয়ার্সে এলেন না। হয়তো অতটা ঘুরপথে ধকল সয়ে ডুয়ার্সে  পৌঁছনোর ইচ্ছে আপনার হয়নি। উপরন্তু কালাজ্বর আর ম্যালেরিয়ার ভয় তো ছিলই। ডুয়ার্স ভূমি রয়ে গেল রবীন্দ্র বর্জিত হয়ে। ১৯৪১ এ করোনেশন ব্রীজ চালু হলো। ডুয়ার্সের সাথে যোগাযোগ সহজতর হলো। কিন্তু দূর্ভাগ্যক্রমে আপনি ততদিনে এই ধরাধাম ছেড়ে অমৃতলোকে পাড়ি দিয়েছেন।

ডুয়ার্স' শব্দটিও আপনার লেখায় স্থান পেয়েছিল কিনা জানা নেই। অবশ্য এখন ডুয়ার্সে এলে এখানকার চোখ জুড়ানো প্রকৃতির প্রেমে অবশ্যই পড়তেন। বারবার হয়তো ফিরে আসতেন বক্সা, জয়ন্তী, রাজাভাতখাওয়া, গরুমারা, মূর্তি, হলং, চিলাপাতা,কিংবা রায়মাটাংয়ে । চাঁদনী রাতে ডুয়ার্সের অরণ্যের স্বর্গীয় রূপ দেখে বনবাংলোর হাতায় বসে নির্ঘাত গাইতেন " আজ জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে..." কিংবা লিখে ফেলতেন আরো কতশত কবিতা। মিস করেছেন গুরুদেব। ব্যাপক মিস করেছেন। ভাবতে পারছেন রূপসী ডুয়ার্সের মুখ আপনি দেখে যেতে পারেননি! পারলে পাহাড়ি নদীতে হড়পা বানের মতো আপনার কলম দিয়ে হড় হড় করে আরো কত না কবিতা বেরিয়ে আসতো।  সৃষ্টি হতো কত না গান। বীর চিলারায়কে নিয়েই হয়তো লিখেই ফেলতেন একটি ঐতিহাসিক উপন্যাস। কে বলতে পারে ঝালং, বিন্দু,চিসাংয়ের পাহাড়ি পথের বাঁকে দেখা হয়ে যেত না আবার কোনও অমিত ও লাবণ্যের সাথে। কিংবা ডুয়ার্সের অরণ্য হয়তো আপনাকে প্রাণিত করতো আরো মহত্তর সৃষ্টির কাজে। 

গুরুদেব আমি সেই ডুয়ার্সের মানুষ। ডুয়ার্সের চা-বাগান আমার কর্মস্থল। যেখানে কেটেছে আমার শৈশব। শৈশবে চা বাগানের প্রাথমিক বিদ্যালয় আমার প্রথম শিক্ষাঙ্গন। বাবার কাছে সহজ পাঠের প্রথম থেকে চতুর্থ ভাগ। বাবা পড়াতেন আর আমি কল্পনায় ছবি আঁকতাম " নাম তার মোতিবিল বহুদূর জল"
"অঞ্জনা নদীতীরে চন্দনী গাঁয়ে," "আমি যে রোজ সকাল হলে যাই শহরের দিকে চলে তমিজ মিঞার গোরুর গাড়ি চড়ে" কিংবা " আমাদের ছোট নদী চলে আঁকে বাঁকে"। কিন্তু আপনার লেখায় কোথায়? কোথায় আমার জন্ম ইস্তক চোখের সামনে ভেসে থাকা ডুয়ার্সের ছবি? যেখানে চা বাগানের সবুজ ঢেউ, মায়াময়  ছায়াগাছের স্নিগ্ধ ছায়া, সবুজ নিবিড় বনানীর আদিগন্ত বসত, পিঠে শিশু নিয়ে পাতা তুলতে যাওয়া মায়েদের ছবি  কেন নেই গুরুদেব আপনার লেখায়? আপনার ছবিতে? বড় অভিমান হতো শিশুমনে। 

একটু বড় হলে জানতে পারি আপনি এখানে কখনও আসেননি। বাংলার  সবচাইতে অপরূপ রূপসীটি যে সবুজ ঘোমটা মুখে টেনে বসেছিল সেই অবগুণ্ঠন খুলে তার রূপমাধুর্য্য দেখতে পেলেন না। রূপসীর প্রাণের মাঝে যে সুধা আছে তার খবরও পেলেন না কোনোদিন। বড় মিস করেছেন গুরুদেব। আ গ্রেট মিস। পৃথিবীর মুখ আপনি দেখেছেন কিন্তু ডুয়ার্সের রূপ আপনি দেখতে পাননি। 
কিন্তু আপনি তো বিশ্বকবি। এই বিপুলা পৃথিবীর একটি তুচ্ছ খণ্ডাংশ আপনার অদেখা রয়ে গেল তাতে বিশ্বসাহিত্যের উল্লেখযোগ্য কোনও ক্ষতি হয়তো হলো না। কিন্তু প্রশ্ন জেগে রইলো শিশুমনে। আপনি সেই ভূখণ্ড বর্জন করলেও সেখানকার বহু মানুষ যে আপনাকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে ছিলো বা রইলো আপনার জীবদ্দশায় ও জীবনাবসানের পরে সে খবর আপনার জানার কথা নয়। 

সেরকমই দুজন ছিলেন আমার জন্মদাতা ও জন্মদাত্রী। ডুয়ার্স ভূমির প্রত্যন্ত এক প্রান্তে তাঁরা আপন করে নিয়েছিলেন আপনার গান। আপনার কবিতা। একটু বড় হলে বাবার মুখে শোনা " অভিসার"  " আফ্রিকা " "শাজাহান " কিংবা " ব্রাহ্মণ "। ইজিচিয়ারে আধশোয়া হয়ে সঞ্চয়িতার পাতা থেকে বাবা পাঠ করে চলেছেন, " এ কথা জানিতে তুমি ভারত ঈশ্বর শাজাহান, কালস্রোতে ভেসে যায় জীবন যৌবন ধনমান।"  আমি মেঝেয় বসে খেলছি আর শুনতে পাচ্ছি সেই উদাত্ত উচ্চারণ আর আমার চেতনায় তিল তিল করে গড়ে উঠছে আপনার অবয়ব। জ্ঞান হয়ে ড্রয়িংরুমের দেয়ালে টাঙানো যে পূর্ণাবয়ব ছবিতে আপনার সাথে আমার পরিচয় সেই অবয়বে আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে গড়ে তুলছি আপনার মূর্তি। আপনাকে বসিয়ে নিচ্ছি  ঈশ্বরের আসনে। কোনো এক জন্মদিনে আপনার ছবিটি চন্দনসাজে সাজিয়ে যখন সামনে ধুপকাঠি জ্বেলে দিচ্ছি বাবা মুচকি হেসে বলেছিলেন," উনি কোনও ঠাকুর বা ভগবান নন। রক্তমাংসের মানুষ। তাঁকে পুজো না করে অনুভব করতে শেখো। "

মনে পড়ে বৈশাখের সেই বিকেলটা। ভুটান পাহাড়ের দিক উড়ে আসা 'কালো মেঘে আঁধার হয়ে' আসা বিকেলে আমাদের কোয়াটার্সের সামনের মাঠে কচি বাতাবিলেবু দিয়ে ফুটবল খেলছি একদল শ্রমিক সন্তানদের সাথে। খেলতে খেলতে কানে আসছে বাসার ভেতর থেকে ভেসে আসা হারমোনিয়ামের শব্দে মিশে যাওয়া ঘুঙুরের ছমছম শব্দ। আর কদিন বাদেই আপনার জন্মদিন। আশপাশের কোয়ার্টার্সের দিদিদের মা তালিম দিচ্ছেন ঋতুরঙ্গের। একটু বাদেই অশ্বখুরের শব্দে চা  বনভূমি তোলপাড় করে ছুটে এলো বৃষ্টি। খেলা ফেলে ভিজতে ভিজতে দৌড়ে এসে উঠলাম বারান্দায়। কানে এলো ভেতরে মা গাইছে, " আজি ঝরোঝরো মুখর বাদল দিনে...। " টিনের চালে ঝরে পড়া বৃষ্টি ধারার জলতরঙ্গের সাথে মিশে যাচ্ছে  ঘুঙুরের মূর্ছনা। 

মনে পড়ে বড় হয়ে শহরের স্কুলে আপনার জন্মদিনের সকাল। স্কুলের বারান্দায় টেবিলে চন্দনের সাজে সজ্জিত আপনার সাদাকালো আবক্ষ ছবি। তাতে টগরের মালা পড়িয়ে দিয়েছে কেউ। ভোররাতের ঘুম ঘুম বৃষ্টির ফোঁটা লেগে আছে তার গায়ে। পাশের ফুলদানিতে রাখা একগোছা শ্বেত গন্ধরাজ বাতাসে ছড়িয়ে দিচ্ছে মনমাতাল সুগন্ধ। একজন হারমোনিয়মে গান ধরেছে " পুরানো সেই দিনের কথা। " একটু বাদে ডাক পড়লো আবৃত্তির। দুরুদুরু বুকে বারান্দায় উঠে একটানা আবৃত্তি করে গেলাম " প্রশ্ন "। শেষ করে যখন নেমে আসছি বারান্দা ছেড়ে পিঠে কারো হাত পড়লো। সৌমেন স্যারের স্নেহের উচ্চারণ, " বাঃ, ভালো বলেছিস।"

তারপর সময়ের স্রোতে ভেসে গেল অনেক গুলো বছর। শৈশব থেকে কৈশোর, কৈশোর থেকে যৌবন, বয়স বেড়ে চলার সাথে সাথে মনের ক্যানভাসে পডতে লাগলো নানা রঙের তুলির আঁচড়। ক্যালিডোস্কোপের মতো রঙবদল হতে থাকলো অভিরুচি, ভালবাসা, ভালোলাগার। যৌবনের উন্মাদনায় কতবার আপনাকে অস্বীকার করে এগিয়ে যেতে চেয়েছি। প্রতিবারই আপনার পায়ের কাছে এসে শান্তি খুঁজেছি। এই প্রৌঢ় বয়সে পৌঁছে আপনি আমার কাছে আজও অনেক অজানা রয়ে যাওয়া এক অপার বিস্ময়। আপনাকে যত খুঁজে চলি ততই যেন বিস্মিত হই। ততই যেন ঋদ্ধ হয় জীবন। ততই ঋদ্ধ হয় যাপন।

জানেন গুরুদেব, এখন মাঝে মাঝে এক অদ্ভুত কল্পনা কল্পলতা হয়ে স্বপ্নের ভেতর আমায় চেতনাকে জড়িয়ে ধরে। আমি দেখতে পাই কোনও এক গ্রীষ্মের জোৎস্নারাতে  আমার কোয়ার্টার্সের গেট থেকে বারান্দা পর্যন্ত বিছিয়ে রাখা নুড়ির ওপর দিয়ে আপনি পায়চারি করে চলেছেন। আর গেয়ে চলেছেন, " আমারে যে জাগতে হবে, কী জানি সে আসবে কবে/ যদি আমায় পড়ে তাহার মনে...।"  দুপাশে সবুজ লন। বাতাসে ভেসে আসছে সেই মনমাতাল গন্ধরাজের সুবাস। তাতে মিশে আছে চাঁপার গন্ধ। অদূরে পথের ওপর টুপটাপ ঝরে পড়ছে  জারুল। একসময় হঠাৎ আকাশ ঢেকে গেল কালো মেঘে। ঢাকা পড়লো জোৎস্না। গুরু গুরু শব্দে মেঘ ডেকে উঠল।  শুরু হলো ঝমঝম বৃষ্টি। আপনি তড়িঘড়ি বারান্দায় উঠে এসে বসে পড়লেন আমার পিতৃদেবের রেখে যাওয়া শিশু কাঠের চেয়ারটায়। শুনতে পাই আপনি গাইছেন  " আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার... " চায়ের কাপ হাতে আমি পাশে দাঁড়িয়ে। আপনি আপন মনে চোখ বুজে গেয়ে চলেছেন। বাতাসে আপনার চুল উড়ছে। গায়ে ছিটে আসছে বিন্দু বিন্দু জলকণা। কোনোদিকে  ভ্রুক্ষেপ নেই আপনার।

এই স্বপ্ন যেন আমার না ভাঙে গুরুদেব।  স্বপ্নের ভেতর আমি যে দেখতে চাই আপনি এসেছেন ডুয়ার্সের এই সবুজ গালিচায় মোড়া চায়ের বাগানে। ডুয়ার্সের প্রেমে পড়ে আপনি বারবার ফিরে আসছেন এখানে। রূপসী ডুয়ার্সের প্রেমে পড়েছেন আপনি। ডুয়ার্সের কোন এক নদীর ধারে, অরণ্যের সন্নিধানে, চা বাগানের সবুজ ঘেরাটোপে কোথাও আপনি গড়ে তুলেছেন আরেকটি শান্তিনিকেতন।সেখানে একে একে ফিরে এসেছেন শিল্পাচার্য নন্দলাল, ভাস্কর রামকিঙ্কর। তাঁরা ছবি আঁকছেন বনভূমির। অরণ্য, পাহাড় তাদের ক্যানভাসে বাঙ্ময় হয়ে উঠছে। হাঁড়িয়ার নেশায় মাতাল হয়ে চা বাগানের গুদরি- হাটে কিঙ্কর খুঁজে চলেছেন তাঁর সুজাতাকে।

জীবনের শেষদিন পর্যন্ত এই স্বপ্নই যে আমি দেখে যেতে চাই গুরুদেব। 

( নিবন্ধের নামকরণ মোহাম্মদ নাজিমুদ্দিনের
"রবীন্দ্রনাথ কখনো এখানে খেতে আসেননি" শীর্ষক উপন্যাসটি থেকে নেয়া)

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri