জেব্রা ক্রসিং/শ্যামলী সেনগুপ্ত
জেব্রা ক্রসিং
শ্যামলী সেনগুপ্ত
এস,অপেক্ষা করি।
এখন নৈঋত, ঈশান সবকটি কোণ জুড়ে
ব্যাধিগ্রস্ত মেঘ কালো রেখা টেনে দিয়েছে
যেন জেব্রা ক্রসিং...
তুমি হাঁটতেই পার, নিরাপদ ভেবে
যাবে কোথায়!
আকাশের ওই জেব্রাক্রসিং ধরে হাঁটতে হাঁটতে
পারবে তো সেখানে পৌঁছতে
যেখানে অনাবিল সূর্য ডিমের কুসুম রঙে
তোমাকে স্বাগত জানাতে তৈরি।
যদি অন্য কোনও প্রলোভনে সাদা-কালো
জেব্রাটি এবং জেব্রাগুলি দৌড়তে থাকে
অ-লক্ষ্যের দিকে,
যদি দৌড়তে দৌড়তে তাদের হাড় থেকে
মেদ-মাংস আলাদা হতে থাকে
আর ঘোড়া ও গাধার উপবৃত্ত
নব সংস্করণে ভিন্ন ভিন্ন হয়,
যদি জেব্রা ছানাটির পায়ে বসে থাকা মশার
পিনপিন শব্দে বিরক্ত হয়ে
পা ছুঁড়তে শুরু করে সে
আর গ্যালপিং সাউন্ডে আঁতকে ওঠে অভ্যন্তর..
তবে?
আসলে তো ইথিওপিয়ার খরা
অথবা বুকের পাঁজর দেখা যায় যে শিশুদের
তারা খবর থেকে একটু সাইড লাইনে
সরে গেছে এখন
গদাযুদ্ধ বাহু আস্ফালন আর দুন্দুভির
ব্যারিটোন সাউন্ড এ প্রতি দিন আর রাত
মুছে দিচ্ছে আগের দিনের ঝড়ঝাপটের বেদম
একটা খেয়াল খুশির ডানা মেলা
বাদুড় দিনকে রাত করে দিতে মরিয়া ...
রাত এখন অন্ধকার নয়,বরং দিনের আলোর
চেয়ে কয়েকশো গুণ বেশি আলোকবর্তিকা
চলাচল করে ব্লাইন্ড লেন থেকে হাইওয়ে
ঘেঁষাঘেঁষি রুগ্ন রাস্তা থেকে
সিক্স লেন। আর দিনের আলো সূর্য ক্ষয়ের
মৃদু আলো মেখে উৎফুল্ল তটিনীর মতো
বয়ে যায় জিরো গ্রাউন্ডে।
জিপারে যে পর্যটক ভেসে যাচ্ছে দাঁত বার করে
সেই ঊনপঞ্চাশ হাওয়ার গতিবেগের
বিপরীতে তখন যুদ্ধ খেলছে ওরা,মৃত্যুবাণ
দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে
জনগণ তার রোজনামচা দেখছে
রাতদিন সকাল সন্ধে
তুলনামূলক চালচিত্রে মাপা হয়
নিজেদের লাস্ট ইয়ার কাশ্মীর ট্যুর...
পিৎজা অথবা চপমুড়ির স্বাদ নিতে নিতে
যুদ্ধ যুদ্ধ গেম
আহা!কত যুদ্ধাস্ত্র, কত কূটনীতি
আমাদের আকাশ জল মাটি
কত খাঁটি!
তবু ,বোকা বোকা নাগরিক চিৎকার করে
নিরাপত্তা চাই, দাবী করে হারানো কাজ
ফিরে পেতে...রাস্তায় রাস্তায় চিৎকার
আর মোমের আলো
মোমবাতি ভালোই সেল হলো,বলো?
আমাদের বিবেক বাঁধা তাঁহাদের কাছে
সহকর্মী কেউ কেউ আড়-ঠোঁটে মুচকি মুচকি
বেশ হয়েছে।বোঝ এখন ঠ্যালা
দু'দিন আগে কি রেলা!কি রেলা!
হিন্দু রক্ত ফুটছে টগবগ
আর কবে,কবে আর ব্রহ্মাস্ত্র ক্ষেপণ
আহ্!!!তর সইছে না।
যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা দেখতে বেশ লাগে
ছোটবেলার রোবট আর ট্যাঙ্ক...মনে পড়ে যায়
মাছের ঝোলে মাখা ভাত গরাসে গরাসে
সুখী প্রাণ বলে ওঠে,কাল একটু মাটন আনি
কষা কষা হোক...
প্রান্ত জন,ওই যারা সীমান্তের ধারেকাছে থাকে
থাক।তাদের কথা থাক।
রক্ত ফুটছে গাছে গাছে
রঙিন টগর,লাল রং গন্ধরাজ,রজনীগন্ধার
লাল স্টিক
কিছুদিন এসব চলুক
তারপর হেঁটে যাব জেব্রা ক্রসিং ধরে ,ফের্
মাঝ পথে আলোর রং বদলালে
সাদা-কালো ডোরাকাটা পথ,
তবে নিরাপদ...
পোষ না মানা জেব্রার পাল
ধীরে ধীরে অগোচরে যায়
ঘটনার 'পরে যেমন প্রলেপের স্তর
আর, নতুন ইতিহাস।
অপেক্ষায় অপেক্ষায় কেটে যায়
কাল...কালবেলা।
***
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴