জীবন নদীর ঘূর্নিপাকে/মধুমিতা দে রায়
জীবন নদীর ঘূর্নিপাকে
মধুমিতা দে রায়
সকালে ঘুম ভাঙল দূর থেকে ভেসে আসা কীর্তনের সুরে, এক অদ্ভুত শান্তিতে মন ভরে গেল। কোথায়, বছর কয়েক আগেও তো রাত-দিন চলা অষ্টপ্রহরের শব্দে বিরক্তবোধ করেছি। আশৈশব ফাগুনের এই দিনে পাড়ায় বাৎসরিক অষ্টপ্রহর হয়ে আসছে। আর তা হতও আমাদের বাৎসরিক পরীক্ষার সময়েই। সারা দিন-রাত লাউডস্পিকার বাজিয়ে কীর্তনের আওয়াজ অসহ্য মনে হত। তবে আজ কী হল? তবে এই কী বয়সের রীতি? তাই এই ভালোলাগা? হয়তোবা তাই।
সময়ের ও বয়সের সাথে বদলে যায় রুচি-পছন্দ চাহিদা, ভালোলাগা এমনকী ভালোবাসাও। হ্যাঁ, কথায় বলে ভালোবাসাও নদীর মতোই, নিম্নখাতেই বয়। এমনকী মানুষের জীবনের প্রতিটি পর্যায়ের সাথেই বুঝি তুলনীয় উৎস হতে মোহনা পর্যন্ত একটি নদীর গতিপথের। একটি নদী যেমন শৈশবে তার উচ্চগতিতে শিশুর মতোই উছ্বলা চঞ্চলা, স্বচ্ছ, নিষ্পাপ, ভয়হীন, বাধা-হীন সকল প্রতিবন্ধকতাকে জয় করবার অদমনীয় ইচ্ছাশক্তিকে ভর করে ঢেউ তুলে এগিয়ে চলে। নেমে আসে তরুণী তটিনী সমতলে, নানা বিভঙ্গে এঁকেবেঁকে চলে তার মধ্যগতিতে, তখন সে অনেকটাই শান্ত সমাহিত। নতুন কোন উপনদীর সাথে মিলিত হয়ে শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে এগিয়ে চলে। শৈশবের সেই নির্মলতা আর তার থাকে না, ধীরে ধীরে যাত্রাপথে নানা কলুষতায় ভরে ওঠে তার বুক। ঠিক তেমনি একটি মানুষের জীবনেও যৌবনে নতুন মানুষের আগমনে গড়ে ওঠে নতুন সংসার। সংসার জীবনের ঝড় ঝাপটা জটিলতা সামলে, অনেক যন্ত্রনা বুকে নিয়েও জীবন পথ পাড়ি দিতে হয়। বার্ধক্যে পৌঁছে সেই সেই ভার বইতে বইতে মন হয়ে পড়ে নিস্তরঙ্গ, দুঃখে-আনন্দে নিশ্চল, উপরন্তু শরীর হয়ে পড়ে নুব্জ, রোগ ক্লিষ্ট। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, দুঃখ-সুখের হিসেব কষতে কষতে কখন যেন জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে যায় মানুষ। ঠিক যেমনটি নিম্নগতিতে নদী, নিস্তরংগ, তার শরীরে বহন করে চলা বর্জের ভারে ক্লান্ত, সমঝোতা করে এড়িয়ে চলে পথে আসা যে কোন প্রতিবন্ধকতা, মহাসমুদ্রে বিলীন হতে এগিয়ে চলে। আর মানুষ, সে অপেক্ষা করে থাকে পরম শক্তিমান সর্বময়ের সাথে মহামিলনের আশায়।
জীবন বয়ে চলে এমনি করেই।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴