জীবন দেবতার প্রতি/সুনীতা দত্ত
জীবন দেবতার প্রতি
সুনীতা দত্ত
--------------------------
কোনদিন ভাবিনি যে তোমার জন্য কিছু লেখার সুযোগ পাব, সেই লেখা যদি তোমার কাছে নাও পৌঁছায় তাতেও হৃদয়ের উদ্বেলতার এতটুকু খামতি হবে না। মনের আকুল উন্মাদনায় তোমার লেখনী অদ্ভুত এক বৃত্ত তৈরি করে জীবনকে গভীরভাবে ভাবার অবকাশ দেয়।
সেই ছাত্রাবস্হা থেকে বেঁচে থাকার মুহুর্তগুলো তোমার আকাশে নিমজ্জিত। যেদিন শান্তিনিকেতনের মাটিতে পা দিয়েছিলাম সত্যিই মনে হয়েছিল -প্রতিটা সৃষ্টি তোমার ছোঁয়ায় ভরা। নিজেকে পূর্ণ করেছিলাম সমস্ত আলয় পরিদর্শন করে। কয়েকদিন ঘোরের মধ্যে কেটেছিল -আমার মতো তুচ্ছ তৃণ তোমার আভায় রঙিন হতে পারব। তোমার কাব্যগ্রন্থ, নাটক, উপন্যাস, ছোটগল্প, প্রবন্ধ সর্বোপরি গান জীবনের সমস্ত সুখ দুঃখের সাথী না হলে এ দীর্ঘ জীবনের কয়েক কোটি সেকেন্ড পার করা সম্ভব হত না। দুঃখের ঝড় কষ্টের আগুন আমায় যখন পুড়িয়েছে তখন মনের মধ্যে উঁকি দিয়েছো -"জীবন পাত্র উচ্ছলিয়া"..... আবার একটু করে নিজেকে গড়ে নিয়েছি তুমি নিভৃতে বলেছ-"শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে, পড়ুক ঝরে।" কেউ আঘাতে জেরবার করলে তুমিই যেন বলেছ - যদি সুখ চাও রাতে জেগো না, যদি শান্তি চাও দিনে ঘুমিও না। যদি সন্মান চাও ফালতু কথা বলো না। যদি ভালোবাসা চাও তবে পরিবারকে ছেড়ো না।
তোমার রচনার বিচ্ছুরিত আলো আকাশের তারাদের নিস্প্রভ করে দেয়।
একজীবনে তোমাকে জানার দুঃসাহস হবে না তবে যখন যেটুকু পাব সেই স্বাদ নিয়ে আনন্দ জগৎ তৈরি করে জীবনকে গভীরভাবে জানব। মনের মাঝে উঁকি দিয়ে যায় হৃদয়ের উদ্বেলতার কথা "যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে, আমি বাইব না আর খেয়া তরী এই ঘাটে।" আমার জীবনে কোন অসীম শক্তির উপস্থিতি অনুভব করিনি শুধু তোমার উপস্থিতি হৃদয়ের মণিকোঠায় রয়ে গেছে রাতের তারা হয়ে দিনের আলোর গভীরে। মনের মাঝে লক্ষ লক্ষ শব্দরাশি বলে ওঠে "তুমি রবে নীরবে, হৃদয়ে মম"! জীবন সংগ্রামের পথে ধ্রবতারা হয়ে বিরাজমান তুমি। হৃদয়ের প্রাণপুরুষ হয়ে জীবনের সমস্ত অলিগলি পরিদর্শন করেছ, তাই এ চিঠির উত্তর না এলেও জানব "ও যে মানে না মানা, আঁখি ফিরাইলে বলে না না, না / ও যে মানে না মানা।"
ইতি
তোমার জীবনমুগ্ধ তুচ্ছ তৃণ
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴