সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon

জলকামান/পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়

জলকামান
পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় 

দার্জিলিং  মেল  ছাড়তে  আর  মিনিট  পাঁচেক  বাকি,  তিন  জন  যাত্রী  বড়  বড়  তিনটা  বিশ লিটারের জলের জার নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে ট্রেনে উঠছেন।  তাদের  কাছে  লাগেজ  খুব  একটা নেই, কিন্তু তিনজনের ৬০ লিটার জলের  জার ?  সবাই  সেই   বিষয়টা  নিয়ে  বেশ   উপভোগ করছে। আমিও হয়তো বা বিষয়টা ঠিক  কি তা জানবার  জন্য চেষ্টা করতাম, কিন্তু বাধ সাধলো আমার মোবাইলের একটা ফোন।  সেই সময়ই ফোনটা আসতেই  হল,  আর তা সেলস রেকর্ড, স্টক রেকর্ড,  আই, টি, ইনফরমেশন  আর গুষ্টির সাতকাহন,   সব।  ফোনে কথা বলতে বলতে যতটুকু  বুঝলাম, বেজায় চটেছেন তাদের কো- প্যাসেঞ্জার এক বৃদ্ধ দম্পতি।  তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে  একটা ড্রামের জল সারা বগি ময় ছড়িয়ে গিয়ে  একেবারে  ভাসাভাসি।  এক  যুবক তো পারলে জল ফেলার জন্য তাদের  ধরে  মারে আর কি। তা  কে শোনে কার কথা,  জলটা পড়ে যাওয়ায় অত্যন্ত দুশিন্তায়, জার  পার্টির বয়স্ক ব্যক্তিটির  কপালে ভাঁজ লক্ষ করলাম।  যার জন্য এত জলের  আয়োজন দূর থেকে তাকে দেখে অনেকটা পেট্রোল  পাম্প-এর মালিক সুবিনয়বাবুর মতো লাগছে। 

ট্রেন  গতি নিয়ে  চলতে শুরু করলে, জার পার্টির এক জন  ভদ্রলোক  ট্রেন  থেকে  হুড়মুড়িয়ে প্ল্যাটফর্মে  নেমে গেলেন। তার মানে তিনি যাত্রী নন, কেবলমাত্র  জলের জার ট্রেনে তুলে দেবার জন্যই  তিনি  এসেছিলেন।  তবে  কি দুই জনের জন্য  ষাট  লিটার  জল? এত  জল হবে টা কি? সবার কথাবার্তায় যা বোঝা গেল ওদের একজন ট্রেনের জল বা বাইরের জল ব্যবহার করেন না।

মনে পড়ে গেল সেবার নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে এক ভদ্রলোক বিসলেরির সিল বোতল থেকে জল ফেলে দিয়ে স্টেশনের কলের জলে সেই খালি বিসলেরির বোতল ভরছেন।  জিজ্ঞেস করাতে তিনি বলেছিলেন,  "পতা নেহি ইয়ে বোতল কা পানি কব কা হ্যায়, পুরানা পানি সে আচ্ছা হ্যায় চালু পানি পিনা"

 কাছে আসবার পর দেখলাম আমার অনুমান একদম ঠিক।  সুবিনয় বাবুকে আমি চিনতাম।  শুচিবাইগ্রস্ত এবং খিটখিটে মেজাজের মানুষ হিসেবে তার সুনাম আছে। ইতিমধ্যে ট্রেন বহুদূরে চলে এসেছে।  সুবিনয়বাবু ইতিমধ্যে বার দুয়েক একটা ছোট বালতি ভরে জল নিয়ে বাথরুম এর কাজ সেরেছেন।

সুবিনয়বাবুকে আমি প্রথম দেখি তার আসামমোড়ের বাড়িতে।  সন্ধ্যায় একটা খাম পৌছে দেবার জন্য তার বসার ঘরে গিয়ে দেখি লোডশেডিং এর মধ্যে মোমবাতি জ্বালিয়ে একটা কাগজে ৫০০ টাকার নোটের নম্বর লিখে চলেছেন। ব্যাংক থেকে তার জমা পড়ায় একটা নোট নাকি জাল বেরিয়ে ছিল।  তার পর থেকে তিনি তার জমা দেওয়া নোটের নম্বর লিখে ব্যাংকের ক্যাসিয়ার কে এককপি জমা দিতেন, যাতে তাকে  অন্যের জাল নোট না ধরাতে পারেন।

তিনি আমাকে চিনতে পেরেও না চেনার ভান করলেন। কিন্তু আমিই তাকে জিজ্ঞেস করলাম  "আপনার ব্যাবসা কেমন চলছে, সুবিনয়দা?  এখনো কি নোটের নম্বর লিখে ব্যাংকে জমা দেন? "

একটু অপ্রস্তুত এবং লজ্জিত হয়ে সুবিনয়বাবু বললেন,

.. কেমন আছেন ? 

... ভালোই,  চলে যাচ্ছে।

.. আরে না দাদা, ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক থাকাতে স্টাফরা আমার সাথে এমন ব্যবহার করতো, কিন্তু  এখন পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক হবার পর  আর কোন ঝামেলা করে না। 

একথায় সেকথায় জলের প্রসঙ্গ তুললাম।জানতে চাইলাম তিনি কেন বাইরের জল ব্যবহার করেন না।

সুবিনয় বাবু বললেন এক বার ধর্মতলায় একদল আন্দোলনকারী দের ওপর পুলিশ জলকামান চালিয়েছিল।  আমি পথচারী ছিলাম। হৈ চৈ শুনে সেখানে যেতেই সেই জলকামানের  জল আমার চোখে নাকে মুখে ঢুকে যায়।  কিছুটা জল আমার পেটেও চলে যায়। তারপর থেকে ব্যাঙ্গালোর, হায়দ্রাবাদ,  দিল্লি,  কত জায়গায় চিকিৎসা করালাম আমার পেট আর ভালো হ'ল না।

খুব আক্ষেপের সাথে বললেন, " এভাবে এ রাজ্য চলতে পারে না। এবার ভোটকামান দাগাবার  সময় এসেছে। "

আমি কিছু বলবার আগেই তিনি বললেন... 

... তারপর থেকে আমি একোয়াগার্ডের জলই ব্যবহার করি, তাছাড়া... 

...তাছাড়া কি? 

...না মানে আমার বন্ধু একবার কাটিহার ডিভিশনের বিউটিফিকেশন এর টেন্ডার পেয়েছিল।  তার মুখে শোনা একটা জলের ট্যাংক পরিস্কার করতে গিয়ে সেখানে একটি মরা বানরের কঙ্কাল পাওয়া গিয়েছিল।  তাছাড়া সাপ ব্যাং কত কিছুই জলের ট্যাংকে থাকে। ট্রেনের জল দেখলেই আমার ঠিকাদার বন্ধুটির কথা মনে পড়ে। আপনার জল লাগলে আমার থেকে জল নেবেন।  ট্রেনের চা তো ওই বাথরুমের জল দিয়েই বানায়। একথা বলে আমার হাতের চা এর কাপের দিকে তাকালেন।

আমি অর্ধেক কাপ চা সহ চায়ের কাপটি জানলা দিয়ে বাইরে ফেলে দিলাম। 

মাঝরাতে ঘটলো এক অন্য ঘটনা,  এক যাত্রী একটা জলের জার নিয়ে নেমে যাওয়ার সময় ঘুম ভেঙে গেল সুবিনয়বাবুর। তিনি উদ্বেগের সাথে এবগি সেবগি জলচোর কে খুজতে লাগলেন।  কিন্তু কোথাও কাউকে পাওয়া গেল না।  ইতিমধ্যে বোলপুরে ট্রেন এসে থামল। ট্রেনের কর্তব্যরত পুলিশ কামরায় হৈচৈ শুনে এক যুবককে বিশ লিটারের জলের জারসহ  জাপটে ধরবার চেষ্টায় ব্যর্থ হলেও খালি জলের জারটি উদ্ধার করতে পারলেন। 

বাকি রাতটা কারোরই ঘুম হল না, খুব বিরক্ত হলেও কেউই সুবিনয় বাবুকে কিছু বলতে পারলেন না। একটি কমবয়সী মেয়ে তার বন্ধুদের বলল, "আজ সারাদিনই সবাই ঝিমাইবে। কাজ কাম কিছুই হইব না।"

একথায় সেকথায় রাত কাটল, ভোরের আলো ফুটলো, আমরা সবাই ট্রেন থেকে নামলাম। সবাই  যেন কোনো আন্দোলনে পুলিশের  জলকামানে ভীষণরকম  কাহিল। সুবিনয় বাবু একটা কুলি কে ডেকে, তাকে  তার লাগেজ দিয়ে,  দু'হাতে দুটো খালি বিশ লিটারের  জলের জার নিয়ে বিনিদ্র রজনীর ক্লান্তি সাথে নিয়ে  দশ নম্বর প্ল্যাটফর্ম দিয়ে  টলমল পায়ে গেটের দিকে  এগিয়ে চললেন।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri