সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
11-June,2023 - Sunday ✍️ By- মনামী সরকার 402

জয়ন্তী পাহাড়ে একটা রাত/মনামী সরকার

জয়ন্তী পাহাড়ে একটা রাত 
মনামী সরকার
------------------------------

সবুজে ঘেরা বক্সা বাঘ বোনের ভেতর দিয়ে একে বেঁকে গেছে পথ। সেই পথ এসে মিলেছে জয়ন্তী নদীর তীরে। বর্ষায় জয়ন্তী নদী ফুলেফে উঠে। আর অন্য সময় বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে শুধু বালুচর আর পাথর। জয়ন্তী নদীর গা ঘেঁষেই ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে ধ্যানমগ্ন ঋষির মত জয়ন্তী পাহাড়। এই পাহাড়ের পুরোটাই বক্সা বাঘবন দিয়ে ঘেরা। এখানে গড়ে উঠেছে ব্যাঘ্র প্রকল্প। হাতি, বাইসন, হরিন,বুনো শুয়োরের পাশাপাশি  রয়েছে বেশ কিছু চিতা ও ব্ল্যাক প্যান্থার।তাছাড়াও এখানে দেখা মেলে নানা প্রজাতির পাখি ও হরেক রকম প্রজাপতির।  খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এখানে নিয়ে আসা হবে রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
     জয়ন্তী পাহাড় বরাবরই নিজেকে আদিম করে রেখেছে। এই পাহাড়ে কোন জনবসতি নেই। পাহাড়ের নিচে রয়েছে আদিবাসী একটি গ্রাম যা ভুটিয়া বস্তি নামে পরিচিত। নদীর এপারে রয়েছে লোকালয়।স্কুল, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, বাজার সবই আছে এখানে। পর্যটন কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বেশকিছু লজ। এখানে ৫ থেকে ৬০০ পরিবার রয়েছে।রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়া হবে বলে এই সমস্ত কিছু এখান থেকে উঠিয়ে দেওয়া হবে। বন্ধ করে দেওয়া হবে স্কুল, স্বাস্থ্য কেন্দ্র বাজার। এই পরিবারগুলোকে অন্যত্র উঠে যাবার নোটিশ দেওয়া হয়েছে অনেকদিন আগেই। খালি করে দেওয়া হবে ওপারের ভুটিয়া বস্তিও। বেশ কিছু বছর বন্ধ থাকবে জঙ্গল সাফারি। 
             তবে এখনো সবটাই খোলা রয়েছে। এইতো সেদিন ভরা পূর্ণিমায় মুখোমুখি বসে ছিলাম জয়ন্তী পাহাড়ের সাথে। জয়ন্তী নদীর পার ঘেঁষে গড়ে উঠেছে পি.ডব্লিউ. ডির নতুন বাংলো।এখন নদীতে জল তেমন নেই ঝোড়ার মতো বয়ে গেছে জয়ন্তী নদী। পাথরের সাথে জলের ধাক্কায় কুলকুল শব্দ শোনা যাচ্ছে। আর বেশ খানিকটা দূরে চাঁদের আলো মেখে জয়ন্তী পাহাড় আরো মোহময়ী হয়ে উঠেছে। দূর দূরান্ত পর্যন্ত কোথাও কোন আলো নেই।চারিদিক জনশূন্য।  শুধু একটার পেছনে একটা পাহাড়ের মাথা দেখা যাচ্ছে। জোছনার আলোয় নদী চরের বালুগুলো চকচক করছে। আর নদীর থেকে ভেসে আসছে বুনো গন্ধ মাখা একটা শীতল হাওয়া। শুধু এই পাহাড়টার দিকে তাকিয়েই ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দেওয়া যায়। আমি শুধু মনে মনে ভাবছিলাম বর্ষায়  যখন নদী ভরে যায় এমন জোছনা রাতে ঝরঝর বৃষ্টিতে জয়ন্তী পাহাড় না জানি আরো কত সুন্দর হয়ে ওঠে। হঠাৎ মনে হল ওই ঝরাটার কাছে কিছু একটা ঘুরঘুর করছে, ভালো করে তাকিয়ে দেখি দুটো চোখ জ্বলজ্বল করছে। চার্জার লাইটটা ওদিকে ফেলতেই দেখি একটা ছোট চিতাবাঘ জল খেতে এসেছে। অনেক রাতে, বা ভোর বেলায় পশুরা প্রায় আসে এখানে জল খেতে। মানুষের শব্দ পেয়ে চিতাটা খুব বেশিক্ষণ আর থাকল না। মুহূর্তের মধ্যেই ছুটে অন্ধকারে হারিয়ে গেল।
            পরদিন ভোরবেলা উঠে আবার এসে বসলাম জয়ন্তী পাহাড়ের মুখোমুখি। এখন যেন তার অন্য শোভা। সূর্য তখনও ওঠেনি। কিন্তু লাল আভায় আকাশ ভরে আছে। নদীর চরের এপাশ-ওপাশ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। আর চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বেশ কিছু মরা গাছের গুড়ি। চোখের পলকেই কখন যেন সূর্য পাহাড়ের কোল থেকে লাফিয়ে বেরিয়ে এলো। সূর্যের প্রথম কিরণ ছড়িয়ে পড়ছিল পাহাড়ের গায়ে। অন্ধকারের ঘোমটা খুলে আবার বেরিয়ে এলো সবুজে মোড়া জয়ন্তী পাহাড়।
           তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে রোদের তাপও বাড়তে থাকে। দূরে পুরনো জয়েন্তি ব্রিজের ভাঙ্গা অংশটুকু দেখা যাচ্ছে, শূন্য নদীর চরের দিকে তাকালে বুকের ভেতরটা কেমন যেন খা খা করে ওঠে। হয়তোবা নিজেকে অস্পৃশ্য রাখার পাহাড়ের নিজস্ব এটা কোন কৌশল।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri