সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
25-February,2024 - Sunday ✍️ By- সুনীতা দত্ত 393

জন্মদিন/সুনীতা দত্ত

জন্মদিন 
সুনীতা দত্ত

পত্রিকার আজকে প্রকাশিত কবিতাটার দিকে চোখ বোলাচ্ছিল মৈনাক। দেখছিল কোথাও কাটছাট করা হয়েছে নাকি।নাহ আজ ঠিক আছে। মাতৃভাষা দিবস নিয়ে আজকের লেখা।মাসটা ফেব্রুয়ারি তাই সব পত্রিকা থেকে ঐ বিষয়ের উপর লেখা চেয়ে পাঠিয়েছে। চাহিদা মেটাতে পেরেছে, প্রায় সব লেখাই ঠিকমত সময়ের মধ্যে মেল করেছে।
মৈনাক একটা স্কুলে শিক্ষকতা করে সেই সাথে লেখালেখি। দুটোই চলছে বেশ দ্রুতগতিতে। লেখক হিসেবে একটু নামডাক ও হয়েছে। বাড়িতে স্ত্রী আর এক মেয়েকে নিয়ে থাকে।মা জীবিত কিন্তু সাথে থাকেন না। মেয়ে শরন্যার ডাকে মৈনাক ঘুরে তাকালো, মেয়ে বলছে, বাবা তুমি আমাকে স্কুল থেকে ফেরার পথে নিয়ে এস আজ স্কুলে অনুষ্ঠান আছে। মৈনাক সন্মতি জানাল। হাজার ব্যস্ততা থাকলেও বছর দশেকের মেয়েকে সময় দিতেই হবে। এটা মেয়ের মায়ের জোরালো দাবি। এ দাবিকে মৈনাক নির্দ্বিধায় মেনে নিয়েছে।
স্কুল থেকে তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে পড়েছে। মেয়েকে নিয়ে ফিরবে। রাস্তায় স্কুলের বন্ধু অমলের সাথে দেখা।অমল মাকে সাথে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছে।টোটো থামিয়ে কিছুক্ষণ কথা বলল। মায়ের রোগের চিকিৎসায় আর কোনো আশা দেখা যাচ্ছে না।এসব জানালো,ওর চোখে মুখে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে দুশ্চিন্তা মায়ের জন্যে। কাকিমা যাতে কিছু না শোনেন তাই টোটো থেকে অনেকটাই দূরে সরে এসে কথা বলছিল অমল।যাবার সময় মনে করে মায়ের কথাও জিজ্ঞেস করল আর বলল মনু মা কার ও চিরকাল থাকে না,যেকটা দিন আছেন তুই আগলে রাখ না!যাবার সময় কর্কট রোগে আক্রান্ত কাকিমা আমার দিকে হাসি মুখে বললেন মনু বাড়িতে আসিস বাবা সবাই কে দেখতে মন চায়। হঠাৎ নিজের অজান্তেই চোখের কোন ভিজে উঠলো।
আধা গ্ৰাম আধা শহর পলাশপুর। মৈনাক এই পরিবেশে এখানকার উচ্চতর বিদ্যালয় থেকে পাশ করে শহরের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে আজ শিক্ষকতা করে শহরের কলেজে। পলাশপুর গ্ৰাম ওর লেখা লিখির প্রথম ও প্রধান বিষয়বস্তু।আর ওর লেখার  সবচেয়ে প্রথম পাঠক মা।কি নিয়ে কখন কেমন লেখা ভালো লাগবে সেটা মা সবসময় বলতেন। ছোটবেলায় গরু ছাগল পালন করতেন মা সেটা নিয়ে গল্প কবিতা লিখে ফেলেছে।
টোটো তে চলতে চলতে মৈনাক স্মৃতির অতলে হারিয়ে যাচ্ছে কিন্তু সম্বিত ফিরল চালকের ডাকে। শরন্যার স্কুল এসে গেছে। মৈনাক ঢুকতে ঢুকতেই কমল স্যার আবদার করলেন কিছু বলার জন্যে। ছোটবেলার কিছু স্মৃতি আর মাতৃভাষা নিয়ে লেখা একটি কবিতা পড়ল। মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফিরতেই লিনা বলে উঠলো মেয়ের অনুষ্ঠান দেখেছ? মৈনাক কিছু বলার আগেই মেয়ে বলে উঠল আরে বাবা কত হাততালি দিল আমার নাচের শেষে,আর বাবার জন্যে আমিও তো অনেক হাততালি দিয়েছি; শেষের কথাগুলো শোনার আগেই লীনা নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেল। মৈনাক চুপিচুপি মেয়েকে বলল ,কি রে আমি তো দেরিতে পৌঁছলাম আর তুই! মেয়ে গলা জরিয়ে ধরে বললো, ঠাকুমা আমাকে বলেছে বাবা "আমার ছেলেটাকে একটু দেখিস আমি তো সাথে থাকতে পারলাম না,তুই ওর মা রে দিদিভাই"!
মেয়েকে জড়িয়ে ধরে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল আর পরিস্থিতির সাথে আপস করে নয় লড়াই করে টিকে থাকতে হবে। মেয়ে শরন্যার জন্য তাকে পারতেই হবে। রাতে খাবার পর মা কে ফোন করে মৈনাক।মা অনেক পরে ফোন ধরে। ওপার থেকে আওয়াজ এতরাতে কিছু হল নাকি রে বাবা?না মা আমি আর কিছু হতে দিব না,আজ তোমার জন্মদিন মা আমি ভুলিনি। কাল সকালে তোমাকে নিতে আসব আর না বলতে পারবে না। তুমি তোমার অনুপস্থিতিতে তাকে মা হতে বলেছ সে আমাকে বুঝিয়েছে তুমি যদি একা থাক আমিও একদিন একা হয়ে যাব। আমি তোমার মতো না মা আমি একা থাকতে পারব না। চোখের তারায় আনন্দ না জল বোঝার আগেই ফোনটা হাত থেকে পড়ে গেল। ঘুরে ফোনটা নিতে গিয়ে দেখে লীনা দাড়িয়ে। মৈনাক  বলল, কাল মাকে নিয়ে আসব ঘরটা পরিস্কার করে রেখ।
সকালে ঘুম থেকে উঠে শরন্যা দেখল বাবা তৈরি হয়ে গেছে।সে জানতে চাইলো বাবা কোথায় যাবে। মৈনাক জানাল ঠাকুমাকে আনতে।দশ বছরের মেয়েটা বুঝতে পারে কালকে মাতৃভাষা দিবস মাকে ছাড়া কি সম্ভব? কাল তো ঠাকুমার জন্মদিন ছিল!

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri