সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon

জঙ্গলের জার্নাল/পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়

জঙ্গলের জার্নাল 
পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় 

"সেই অমাবস্যার রাতে একা কাঠামবাড়ির জঙ্গলে আমাকে ড্রাইভারের সিটে বসিয়ে দিয়ে সোনা দা যোগণেশচন্দ্র টি গার্ডেনের দিকে উধাও হয়ে গেল।  মনে মনে রাগে অভিমানে  আমার কান্না পেতে লাগলো...... " কথাগুলো বলে বাবু দা মানে আমাদের গাড়ির চালক  সবে ওদলাবাড়ির রাস্তা ধরেছে দূর থেকে প্রায় শ'খানেক গাড়ি।  জঙ্গলের রাস্তায় এত জ্যাম কখনো দেখিনি। অগত্যা গাড়ি থামিয়ে বাবু দা তার এক পরিচিত চালক বন্ধুকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলো কাঠাম বাড়ির জঙ্গল থেকে একটা লেপার্ড হাতির করিডর দিয়ে রাস্তা পার হয়েছে। মনে পড়ে গেল কিছু দিন আগে এক দৈনিক  সংবাদের সাংবাদিক শুভজিতের ক্যামেরায় একটা বাঘের বাচ্চার ছবি ধরা পড়েছিল। মনে মনে এক অজানা আশঙ্কা এবং রোমাঞ্চ অনুভব করতে লাগলাম। কিন্তু আর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না এবং এগোনো ঠিক হবে না, তাই  অগত্যা আমরা রাস্তা বদল করবার সিদ্ধান্ত নিলাম।মিলনমোড় টাকিমারীর থেকে গাড়ি ঘুরিয়ে আমরা চলে এলাম সরস্বতীপুর গেটবাজারের রাস্তায়।

 আমি বাবু দা'কে জিজ্ঞেস করলাম সেই রাতে আপনি কি এই কাঠামবাড়ীর জঙ্গলেই বসেছিলেন? 

....না, কিছু না ভেবেই ক্রান্তির রাস্তায় রওনা হলাম। নেওড়াভ্যালি  বাজারে একটা চায়ের দোকানে গিয়ে চা এর অর্ডার  দিলাম। 

.....আর সোনা দা?  তাঁর কি হল ? 

.... আরে দাদা, উনি ওভারশিউর (ওভারশিয়ার) মানুষ।  মদ্যপানের অভ্যাস ছিল। বাগানের কোয়ার্টারেই বন্ধু বান্ধবের সাথে  রাত কাটালেন। এই স্বভাবের জন্যই তো ওনার দু দুটো বউ ওনাকে ছেড়ে চলে গেল। গল্প আর আগে না বাড়ে তাই আমি অন্য প্রসঙ্গে গেলাম তাহলে কি গরুমারা নর্থ রেঞ্জে  যাব?   সেবার সেখানে ওয়াচ টাওয়ার থেকে বেশ কিছু গন্ডার দেখেছিলাম। তারা সন্ধ্যা নামলে একটা নিচু জমিতে দল বেঁধে লবণ খেতে আসে।

জঙ্গলে আসলে জলাপাইগুড়ির প্রাক্তন  মূখ্য বনপাল তাপস দাসের কথা খুব মনে পড়ে।  অরণ্য এবং বন্য প্রাণীদের তিনি খুব ভালোবাসতেন।তার ক্যামেরায় অনেক বন্য প্রাণীর ছবি আজও সরকারি বাংলোগুলোতে শোভা বর্ধন করে আছে।  মাদারিহাটের হলং টুরিস্ট বাংলোতেও বেশ কিছু ছবি ছিল।  সেগুলো নিশ্চিত ভাবে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। 

অরণ্য ভবনের দিলিপ দার মুখে  বনের নানা কাহিনি শুনেছি।  তার মধ্যে এইসব প্রাণীদের খাদ্যের বিষয়ে হিসাব নিকাশ সংক্রান্ত গল্প শুনতাম তার সেই গল্প গুলো জঙ্গলে আসলে স্মৃতিতে ভেসে ওঠে। 

ইতিমধ্যে আমরা অনেকটা সবুজ ঝিঁঝি ডাকা জঙ্গলের রাস্তা পার হয়ে এসেছি।  চায়ের গল্প শুনে মনে মনে ধূমায়িত এককাপ দুধ চায়ের নেশা চেপে গেল। সে কথা বলতেই বাবু দা বললেন, " সামনেই তো "ভোরের আলো।"

মাদারীহাট হলং বাংলোয় রাত্রীবাস।  রাতে তক্ষকের ডাক। সকালবেলায় চোখ জ্বালা অবস্থায় হাতির পিঠে জংগলের রাস্তায় ঘুরে বেড়ানোর স্মৃতি মনকে ব্যাথিত করে তুলল।

গুরুমারার জঙ্গল সাফারিতে সেবার গোটা কতক বানর দেখেছিলাম। তার আগে লাটাগুড়ির রাস্তায় বাইসন। কিন্তু দিনের বেলায় বাঘ বাবাজীর দর্শন কখনো কল্পনা ও করিনি। বাঘ দেখবার আনন্দ যে নিমেষে কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দেয় সেটা রমা'র মুখ-চোখ দেখে পরিস্কার বোঝা গেল। তিনি হয়তো এতক্ষণ মনে মনে  " সাপের লেখা আর বাঘের দেখা" বা বাঘে ছুঁলে ..... " ইত্যাদি আউড়ে চলেছেন। সৌহার্দ্য অবশ্য বেশ ফুরফুরে মেজাজে জানলার কাঁচ নামিয়ে দিয়ে কানে বাডস লাগিয়ে সদ্য বর্ষা ভেজা গাছগুলোর পাতা থেকে ঝরে পড়া বৃষ্টির ফোটা এবং মাতাল হাওয়ার মজা প্রাণভরে উপভোগ করছিল।

ভোরের আলোয় চা, আইসক্রিম খেয়ে আমরা প্রবেশ করলাম সরস্বতীপুরের জঙ্গলে। ভিতরে নিবিড় চায়ের বাগান দেখে চোখ জুড়িয়ে গেল। এই জঙ্গলে বাঘ,হাতি, গন্ডার, বাইসন সব বন্য প্রাণীর আবাসস্থল ছিল। মনে মনে প্রয়াত রাজেন কল্যাণীকে ( প্রয়াত চা শিল্পপতি কৃষ্ণ কুমার কল্যাণীর স্বর্গগত পিতা) শ্রদ্ধা জানালাম। তিনি প্রায় এক'শ বছর আগে তিস্তার ভয়াল জলরাশীর পাশে এই শাপদসংকুল সরস্বতীপুরে চা গাছের পত্তন করেছিলেন। এমন দূরদর্শিতা খুব কম মানুষেরই হয়। আমাদের চালক বাবুদা  জানালেন এই বাগানের মধ্যে দিয়েও শিলিগুড়ির ডন বস্কো স্কুলের রাস্তায় ওঠা যায়। এদিকে আমাদের গাড়ি জঙ্গল ভেদ করে এগিয়ে চলেছে। বাইরে মিষ্টি হাওয়া কিন্তু জানলা খোলার জো নেই। সেটা নিরাপত্তার খাতিরে।  ভেতরে এসি চলছে।   যতই এগিয়ে যাই জঙ্গল ঘন হয়। হঠাৎই কিছুই লোকজনের ইশারায় গাড়ির স্টার্ট বন্ধ হল। সেই মানুষগুলোর কেউ কেউ একটা হাতির বাচ্চাকে দেখেছেন। আমরাও সেই মুহূর্তের অপেক্ষায় প্রহর গুনতে থাকলাম। সাহিত্যিক বিমল দেবনাথের ( বনদপ্তরের আধিকারিক)  কাছে শুনেছি হাতি ঈশ্বরের জীবন্ত প্রকাশ। হিন্দু মাইথোলজিতে বলা হয়েছে  হাতির কপালে ব্রহ্মা অবস্থান করেন। হাতির চোখে আদিত্য অর্থাৎ সূর্যদেবতা বসে আছেন। হাতির পাকস্থলীতে অগ্নিদেব অবস্থান করেন। হাতির পিঠে যেখানে মাহুত বসে থাকে সেটা নাকি শ্রীকৃষ্ণের বসবার জায়গা। হাতির গলায় থাকেন দেবরাজ ইন্দ্র। হাতির শুঁড়ে থাকেন বালাজি আর পায়ে থাকে কালচারের দেবতা। হাতির অন্তরে থাকেন চাঁদ আর হৃদয়  নাকি প্রজন্ম। বিমলদার মতে মানুষের হাতি নিয়ে এত মাতামাতি হাতিকে বাধ্য করে এবন থেকে সে বনে এবং হাতিকে  বাধ্য করা হয়  বন ছেড়ে লোকালয়ে আসতে। 

 ইতিমধ্যে রমা ও সৌহার্দ্য গাড়ী ছেড়ে হাতি দেখতে ছুটেছে। ওরা সবাই  সেই হাতিটিকে দেখেছে। আমি গাড়ি থেকে নামতে নামতে গজরাজ করিডর দিয়ে বনে প্রবেশ করেছেন। সৌহার্দের ক্যামেরায় বন্দী হয়ে রইলেন গজরাজ। হাতি বাস্তুতন্ত্রের সূচক বিশেষ।  হাতির অবস্থান মানে প্রচুর সবুজের অবস্থান, হাতির অবস্থান মানে  জলের প্রাচুর্যতা। তাই হাতিকে কখনোই বিরক্ত করা উচিৎ নয়।   একটা সুন্দর সোনালী স্মৃতিকে ফ্রেম বন্দী করে আমরা বাড়ির পথে পা বাড়ালাম। দিনের শেষে আবিরে ঢাকা পশ্চিমাকাশের সূর্যদেবের রঙিন আলোর ছটায় অদৃশ্য কোনো চিত্রকরের তুলিতে ভরা তিস্তার ঘোলা জলে   এক অপরূপ  বর্ণময় নৈশর্গিক চিত্র রচনা করে চলেছে।

রুশ প্রাণী বিশেষজ্ঞ ইউরি দিমিত্রিয়েদের সুরে মনে মনে বললাম,  এ যাত্রায় বনে জঙ্গলে ঘুরে হয়তো তেমন কিছু দেখতে পেলাম না,  তবে অনেকগুলো চোখ আমাদের দেখে গেল, একথা নিশ্চিত ভাবে বলা যেতেই পারে।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri