ছবির কথারা/অনিন্দ্য সেনগুপ্ত
ছবির কথারা
অনিন্দ্য সেনগুপ্ত
(১) কিসস্যা এক পল কা
গল্পটা কেবল শিকার আর শিকারীর নয়, নয় শুধুই খাদ্য, খাদকের। জলের শরীরে জাল ফেলা আর গুটিয়ে নেওয়ার মাঝে অনিবার্য যা ঘটমান তা হোল দাপাদাপি করে বেঁচে থাকার আপ্রাণ এক ইতিউতি প্রয়াস। নান্দনিকতার পরত এড়িয়ে লেন্সের ফোকাসে অধরা রয়ে যায় বাঁচার তাগিদে দুই অসম জীবের নিরলস কাটাকুটি খেলা। এক পক্ষ ফাঁদ এড়াতে বাঁক পাল্টাতে চায় স্রোতের আড়ালে, অন্যপক্ষ জালের আটোসাটো বিনুনি বিস্তার করে নেয় ক্ষমতার বৃত্তায়নে। পরিশ্রম, ধৈর্য্য, আকাঙ্ক্ষার সম্মিলনে একজীবনের চূড়ান্ত মুখীনতা এটুকুই- বাড়িতে আঁখাটা আজও যাতে জ্বলতে পারে। অন্যপ্রাণে সেইমুহূর্তের তাড়না- জাল কেটে বেরিয়ে শ্বাসবায়ুর নাছোড়বান্দা উজ্জীবন। প্রক্ষেপন বিন্দুর অহরহ পরিবর্তনে দিনশেষের অর্জন বলতে দু-চারটে অকিঞ্চিত নদিয়ালি প্রাণ আর সঙ্গে একফালি সান্ত্বনা, ঘরে অপেক্ষারত ছোট ছেলের অনাবিল হাসিমুখ। অন্যদিনের মতো শুধুই ভাত-পান্তা খেয়ে ঘুমোতে হবে না ছাওয়াটাকে আজ আর!
সময়ের দরিয়ায় খাত পাল্টায় নদী, কিন্তু জীবন?সে কি কেবলই মরা-বাঁচার বেদম একগুঁয়ে এক আখ্যান?
(২) শাম্ তানহাই কি
সায়াহ্নের সন্ধিক্ষণে আস্ত একটা রৌদ্রোজ্জ্বল দিন নিয়মমাফিক মুখ লুকোতে চায় সন্ধের কোটরে। আলোছায়ার ফিকে অবকাশে গোধুলি রাঙিয়ে নিশিগমনে যান একর্ষিও। হেমন্তের সাঁঝে ঝলমলে নিওন আলো হঠাৎই অবশ্যম্ভাবী আড়াল খুঁজে নেয় ছোট্ট এক আলোকবর্তিকায়। নিঝুমরাত চরাচর জুড়ে যখন আঁধার বিছিয়ে দিতে চাইবে ঠিক সেইসময় চুপিচুপি মাথা তোলে এক আলোকশিখা, স্বচ্ছ অবয়বে। ঔজ্জ্বল্যের প্রাবল্যে নয়, স্নিগ্ধতার পরশে জেহাদি হতে চায় সে আসন্ন রাত্রির নিকষ কালো আগ্রাসন ছাপিয়ে। ব্যাপ্তিতে সীমিত হলেও চিলেকোঠার ছোট্ট বারান্দায় আলোর দিশারি সে তখন। অন্ধকারের সীমানা পেরিয়ে দূর আকাশ থেকে এক পশলা সোহাগ পাঠাতে চেয়ে রাত জেগে থাকে শশধর আর বন্ধুতার বার্তা নিয়ে গুটিগুটি এগিয়ে আসে সন্ধেতারা। দায়পালনের তাগিদ যে তাদেরও। তল্লাটজুড়ে তখন যথার্থই স্নিগ্ধতার রাজপাট বিছোনোর পালা। সেই আবহে ভোরের পথ চেয়ে আকাশপ্রদীপ হয়ে ভাসতে থাকে রাতজাগা কিছু অপার্থিব আলোককণা। অন্ধকারের ঘোর কাটানো সেই প্রত্যয়ের মুখাপেক্ষী হয় জীবনও, আশার আলো দেখতে চেয়ে।
ফটো সৌজন্য :- (১) শ্রী শেখর সরকার (২) শ্রীমতি আদৃতা দে রায়
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴