চিরসখা হে : তোমার কৃষ্ণকলি/ব্রততী দাস
চিরসখা হে : তোমার কৃষ্ণকলি
ব্রততী দাস
---------------------------------------
প্রিয় সখা,
"কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি,
কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক।
মেঘলাদিনে দেখেছিলেম মাঠে
কালো মেয়ের কালো হরিণ-চোখ।"
কবি তোমায় কিছু নয়, বলার আছে অনেক কিছু। তুমি লিখেছ নিজের খেয়ালে, ভাবনা আর অনুভূতির মেলবন্ধনে সৃষ্টি করেছ একের পর এক মন ছুঁয়ে যাওয়া লেখনী। ছোটবেলায় বৃষ্টির শব্দ যে কিরকম তা যেমন প্রথম জেনেছি তোমার থেকে, তেমনি রোদও যে হাসতে পারে তাও চিনেছি তোমার কাছেই।
পড়ার শেষে ছুটির মজা কিংবা ঋতুরঙ্গের দৃশ্যপটের স্বাদ আস্বাদন করতে শিখিয়েছ তুমি। আবার তোমার গানেই শুনেছি সেই বিপ্লব আর বিপ্লবীদের গল্প।
তারপর শৈশব থেকে কৈশরে পা। জীবনের যাবতীয় অনুভূতির উৎস যখন তুমি, তখন সদ্য কিশোরী মনের চড়াই উৎরাই তোমায় ছাড়া কিকরে সম্পূর্ণ হত।
একে একে হাতে আসে তোমার অনন্ত প্রেম, প্রথম চুম্বন, শেষ বসন্ত, মিলন আরও অনেক অনেক কবিতাগুচ্ছ। কিন্তু তোমার কৃষ্ণকলি যেন সবার চাইতে আলাদা, খুব সাধারণ অথচ কি আকর্ষণীয়। যতবার পড়েছি মনে হয়েছে তুমি যেন লিখেছ আমাকেই। কালো রঙেরও এত সৌন্দর্য্য থাকতে পারে, তুমি না দেখালে হয়ত চিরকাল অন্ধকারেই থেকে যেতাম। তুমি হয়ত লিখেছ তোমার কৃষ্ণকলিকে নিয়ে। কিন্তু আমার কাছে তো এটা একান্তই আমার নিজের, আমাকে নিয়ে তোমার লেখা। নিজেকে নতুন করে ভালোবাসতে শিখিয়েছ তুমি। তাই তো তোমার লেখায় শুধু একটা কৃষ্ণকলি নয়, বেঁচে আছে হাজার হাজার কৃষ্ণকলি।
"কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।"
সেই চোখের মায়ায় আজ কতজন মোহিত, কিন্তু প্রথম দেখেছ তুমি। কালো মেয়ের চোখের মায়ায় নিজেকে বাঁধতে শিখিয়েছ একমাত্র তুমিই।
মনে মনে একটা ইচ্ছে জন্ম নিয়েছিল সেদিনই, তোমার পায়ে হাত দিয়ে একবার তোমায় প্রণাম করব কবি। সেই স্বপ্নটা আজও অধরা। কল্পনাতেই তোমার চরণে শতকোটি প্রনাম। সব কৃষ্ণকলিরা বেঁচে থাক তোমার রচনায়।
"এমনি করে শ্রাবণ-রজনীতে
হঠাত্ খুশি ঘনিয়ে আসে চিতে।"
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴