চিদানন্দ প্রাণে/বেলা দে
চিদানন্দ প্রাণে
বেলা দে
যেদিন বিনা মেঘে মস্ত এক বাজ ভেঙে পড়েছিল মাথায়, ভেবেছি আমি আর বেঁচে নেই
অগ্নুৎপাত ঝলসে দিয়েছে আমার কলজেসহ শরীরটা। বাকস্তব্ধ হয়েছিলাম আমি, অসহ্য আমার চারপাশ অসহ্য পার্থিব জগৎ, বেঁচে থাকার অর্থ খুঁজে পাইনি, নিজেকে নি:শেষ করতে চেয়েও পারিনি এমন দমবন্ধ পরিবেশে ঝকঝকে একটা চারাগাছ অক্সিজেন জুগিয়ে অবলীলায় সর্বংসহা করে তুলেছে আমায়,আলগোছে টেনে নিয়ে গেছে সাদা খাতায় কলমের কাছাকাছি, সহমর্মিতায় আমাকেই প্রশান্তি জুগিয়ে দাঁতে দাঁত চিপে বড় হয়ে গেল অসময়ে।
আর চাপ নিয়ে পিছু তাকাইনি। চারাগাছটি মহাবৃক্ষ হয়ে আজ আমাকেই ছায়া দান করে চলেছে, অন্ধের যষ্টি হয়ে চালনা করে সর্বক্ষণ। চিরকালীন ভুলোমনা আমি তদুপরি বয়:ধর্ম, সে আশঙ্কায় হাত ছাড়ে না ভুলক্রমেও,ভোরের জানালায় ক্ষীয়মান সূর্যালোকের সাথে হৈমন্তিক বাতাস যখন মনপ্রাণ ভরিয়ে দেয় অচেনা এক মোহজাল চুম্বকের মতন টেনে নিয়ে যায় লেখার খাতায়,ধুয়ে যায় মলিনতা জমে থাকা সমস্ত বিষাদ ব্যাথা। মুহূর্তে স্বকীয় সৃজন
শীলতায় আসে চিদানন্দ, সব পেয়েছির মিশেলে আমার নাগালের সীমানায় শব্দব্রহ্ম। সে আমার বাঁচার উৎস আমার আবেগ, অপূর্ণ রাখেনি কোনো আশা,যা পেয়েছি এই যেন ঢের এর বেশি তো চাইবার নেই, কোনো ক্ষেদ অন্তরাত্মা আসতে দেয় না আসতে দেয় না গ্লানি মান-অপমান উসকানি।সেই সঙ্গে আছে আমার সাজানো ফুল বাগিচা আমার মন ভালো রাখার উপযোগী টনিক,ব্যস্ত থাকি সমস্তদিন ওদের চর্চায়, ফুল ফুটলে হেসে আমায় কাছে চায়, নেচে নেচে রঙিন ডানার প্রজাপতিরা আসে নৃত্যমুদ্রায়,গুনগুনিয়ে মধুকরবাহিনী হেমন্তের মালকোষ গায়। নিজের সৃজনে অন্তরাত্মা নির্মল পরিশুদ্ধ হয়।ছোট থেকেই অক্ষরের আঁকিবুঁকি কেটেছি নিজের মনে কাগজের টুকরো টাকরায়,ছোট্ট চারাগাছ যেদিন মহীরুহ হাত ধরে আমাকে আলোর জগতে নিয়ে যায়, বলে এটাই তোমার জায়গা, ধীরে ধীরে চিত্তদহন থেকে বেরিয়ে এসেছি বাঁধা বন্ধন মোহজাল ছিড়ে ঘনতমসা পার করে দীপাবলি আলোয়। পেয়েছি মুক্তির স্বাদ, আজ এই সময়ে এই প্রান্তবেলায় দাঁড়িয়ে অকপট স্বীকারোক্তি "আমার মুক্তি আলোয় আলোয়", ভালো আছি আমার কুঞ্জকাননে, কালি-কলমে চিদানন্দ প্রাণে। "
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴