সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
02-February,2025 - Sunday ✍️ By- চিত্রা পাল 88

চিত্রা পাল-এর আলোচনায় মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস-এর 'ভাঙা ছবির ইজেল'

চিত্রা পাল-এর আলোচনায় মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস-এর 'ভাঙা ছবির ইজেল'


 মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস আজকের উত্তরবঙ্গের একজন প্রথিতযশা লেখিকা। ও নিজেই একদিন এই বইটি আমাকে  দিয়েছিলো,বলেছিলো পড়বে কিন্তু। হ্যাঁ, আমিও পড়েছি,আজ সেই নিয়েই কথা বলা। 

   মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস একজন স্কুলশিক্ষিকা, শেষে প্রধানা শিক্ষিকা ছিলেন। স্কুল পরিচালনার যাবতীয় দায় দায়িত্ব সামলে তারপরে লেখালেখি। এর ভেতরে সঙ্গীতের অনুষঙ্গও আছে। ভাবতে অবাক লাগে, এত কাজ সামাল দিয়েও   কি করে এত লেখালেখি করেছেন। তার লেখা গ্রন্থের সংখ্যা কম নয়। তার মধ্যে থেকে আমি বেছে নিয়েছি এই গল্প সংকলনটি যার নাম 'ভাঙা ছবির ইজেল'। 

   ভাঙ্গা ছবির ইজেল এক গল্প সংকলন যেখানে আছে বত্রিশটি গল্প, যা একে অপরের থেকে আলাদা। এই গ্রন্থের প্রথম গল্পটির নাম ভাঙ্গা ছবির ইজেল। এই গল্পের নায়িকা রীনা যে তার খাবার টেবিলের ওপরের কাঁচের ভাঙ্গা আস্তরণ  থেকে নানা ধরণের ছবি দেখে। ছবির লোকজনদের সাথে নানারকম কথাও বলে।আবার ছবি দেখতে দেখতে মাঝে মাঝে নিজের শৈশব কৈশোরেও ফিরে যায়।নিজের মনের নানা কল্পনা নানা অনুভূতি যেন খেলা করে এই ভাঙ্গা কাঁচের সঙ্গে।তারপরে একদিন কাঁচের টুকরোগুলো সরাতেই ভেতরের জমা জলের পচা গন্ধ নাকে লাগে।জীবানুনাশক দিয়ে পরিষ্কারের পরে সে আবার প্রতিদিনের জগতে ফিরে আসে। 

সরীসৃপ গল্পে মিতা লেখিকা।সে টিকটিকি সহ্য করতে পারে না, আর তার কপালেই যেন টিকটিকি পেছনে লাগে। কোলকাতায় তার ফ্ল্যাটে এসেও টিকটিকিদের হাত থেকে রেহাই নেই।ঘটনাচক্রে তার গায়েই এবার টিকটিকি পড়ে। ও ঘেন্নায় শিউরে ওঠে। ওদিকে কাজের মাসি বলে, ও এমন করছে কেন,এ তো রাজরাণী হবার পূর্বাভাস। যাই হোক,লেখার জন্য পুরষ্কার পায়, বোধ হয় এরই ফলশ্রুতি,ওদিকে স্টেজ থেকে নামতে গিয়ে পড়ে পা মচকায়, তবে এই সমস্যার বিপাকে ওর স্বামীর সাথে সম্পর্কের সূর্য আবার নতুন আলোয় আলোকিত ওঠে, এটাই সরীসৃপ গল্পের শেষ বা অব্যর্থ চমক। 

এভাবে গল্পের  পরে গল্পে লেখিকা তুলে ধরেছেন নারী মনের নানান আবেগ অনুভূতি।একটু অন্যরকম আবার আমলকী বনের ছায়া।এখানে স্কুলের ছাত্রীরা, অল্প বয়সী মেয়েদের যে গাছকে ভালো লাগা, ভালোবাসা  এমন পর্যায়ে আসতে পারে, যেখানে স্কুলের উন্নতি কল্পে বিল্ডিং বানানোর জন্য গাছ কাটার দরকার,কিন্তু তা কাটতে বাধা দেওয়া।  এই হরতকী সবেদা, আমলকী ইত্যাদি অনেক গাছেদের সঙ্গে ওদের সখ্যতা এত নিবিড়,ওদের ছায়ায় ওরা বই পড়ে,খেলা করে,ওদের একেবারে আপন।সেই গাছথাকবে না? তাই শেষ কালে ওরা জোটবদ্ধ হয়ে এগুলো কাটার বিরুদ্ধে  প্রতিবাদ করে ও  তাতে সাফল্য পায়।উন্নতি যে গাছ কেটে বিল্ডিং বানিয়ে হয় না, এভাবেও হওয়ানো যায় এই বক্তব্য আজকের দিনে বড় স্বস্তিসূচক। 

  দুটি পাতার গন্ধ গল্পটিতে একেবারে অন্য জগতের ছবি।এই গল্পে পাওয়া যায় সেই চা বাগানের কথা। যেখানে সাদরী ভাষা তাদের অন্তরের ভাষা। এখানে সুলতা বাঘোয়াড়,্যে একদা চা বাগানে বড় হয়েও বুড়োদাদার কল্যাণে ইলেভেন ক্লাসে বাংলা ভাষা শিখতে শুরু করে। এরপরে অসম্ভব জেদে সে সব বাধা পেরিয়ে পাশ করেন উচ্চ মাধ্যমিক।কি ভয়ংকরপরিস্থিতিতে সুলতার বাবার মৃত্যু,সবই ঘটে যাওয়া ঘটনা। ক্রমশঃ তিনি  ঢুকে পড়েন এক সত্য কথনে। লেখিকার কথায়,ই বাগান তো লক্ষীমন্ত। তাও ক্রমে ক্রমে আন্ধার। অরণ্য গভীরতা হারাইলেক। শিকার হলাক ওরা। বন্যরাও মারল, মানুষগুলাও বন্য হকে রাজনীতির পেষ্টনে উদের মারলেক। 

বৃষ্টি এল যখন গল্পে কথাকলির কথাই গল্পের মূল উপজীব্য।তার মনের নানা রকমের আলো আঁধারির ছায়া ফুটে উঠেছে নানা ভাবে।এর মধ্যে অর্ণব যে ওর ছেলেবেলার বন্ধুতার সূত্র ধরে তিরিশ বছর পরে এলো, আগে অনেক কিছু ভাবা সত্ত্বেও বাস্তবে তা প্রকাশ করলো না। পাষাণের ভেতরের লুকোনো জলধারার মতো রয়ে গেলো কথার মনে। এই ট্র্যাজেডি দিয়েই গল্প শেষ হয়। লেখিকা এভাবেই পরিণতিতে এসেছেন।যেন যোগফলের সমাহার। এইই তো হবে গোছের। বাতাসে বারুদের গন্ধ যেন কি করে আশমানি টের পেয়েছিলো। অনেক সাধ্য সাধনার শেষে ফল ভালই হলো। চিঠি ছিঁড়ে তোর্সার জলে ভাসিয়ে দিয়ে যান অতীতকেই সরিয়ে দিলো নতুন জীবনের আগমনে। তবে পর্বান্তর গল্পে পাওয়া যায় অন্য স্বাদ। এখানে অগ্নি তার সংসার পরিবার ছেড়ে ছলে যায়, আর বাড়িটা ভরে যায় শূন্যতায়। এও এক ধরণের ট্রাজেডি। 

এইভাবে চলতে চলতে গল্প বলতে বলতে লেখিকা আমাদের মানে পাঠকদের নিয়ে সঞ্চরণ করেছেন,মনের আনাচে কানাচে,সেখানে আছে দুঃখ, আছে না পাবার হতাশা, আছে, পেয়ে অফুরাণ সুখের আনন্দ। সব মিলিয়ে বইটি সুখপাঠ্য, আনন্দ বিনোদনের উৎস এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।    

  

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri