সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
28-January,2024 - Sunday ✍️ By- কাঞ্চন রায় 396

চিঠি/কাঞ্চন রায়

চিঠি 
কাঞ্চন রায়

দুপুরবেলা কে যেন এসে খবর দিল,দাদু জরুরি তলব করেছে। দাদু মানে সামনের বাড়ির দাদু। ছোট থেকেই ওই বাড়ির বুড়ো বুড়ি আমার আপন দাদু দিদা। ডাক পড়তেই রাস্তা টপকে এক দৌড়ে দাদুর ঘরে। ঘরে ঢুকে আমি তো থ। দিদা হাপুস নয়নে কাঁদছে। দাদু কেমন যেন বাক্যহারা অসহায়ভাবে বিছানার কোণে বসে। আমি সভয়ে বললাম, কি হয়েছে দাদু? দাদু দিদার দিকে একবার তাকাতে দিদাই কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠল, এই দ্যাখ সান্তার চিঠি, এখনই পিওন দিয়ে গেল। পড়ে দ্যাখ। তুই এ কি সর্বনাশ করলি রে।

এই বলে চিঠিটা আমার হাতে ধরিয়ে দিদা বিছানায় পাশ ফিয়ে শুয়ে পড়ল। কান্নাটা নেই। তবে একটা দীর্ঘনিঃস্বাস ছাড়ল।

আমি ততক্ষণে পুরোপুরি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছি। কিসের চিঠি আর আমি কিসেরই বা সর্বনাশ করলাম! 
আমি তখন সবে ইলেভেন। আমার দ্বারা তেমন সর্বনাশ হওয়ার কথাও নয়। যেগুলো পায়জামি করি তা সর্বনাশের আওতায় পড়ে না। ভীষণ মুষড়ে পড়লাম আমি।
দাদু বলল, চিঠিটা পড়। কি লিখেছিলি তুই সান্তাকে?

এখানে একটু বলা দরকার, সান্তা হচ্ছে দাদুদের একমাত্র মেয়ে। আমার সান্তাপিসি। কলকাতায় বিয়ে হয়েছে । আগে ছমাসে নমাসে একবার  আংরাভাসা বাপের বাড়ি এসে ঘুরে যেত। এখন সেটা দু তিন বছরে ঠেকেছে। তখন তো মোবাইল ছিল না। টেলিফোন ছিল। কিন্তু আংরাভাসায় তখনও টেলিফোন আসেনি। কারো খুব প্রয়োজন হলে পাশের গয়েরকাটা যেতে হত ফোন করতে। ওখানে তখন তিন চারজন অবস্থাপন্ন বাড়ি টেলিফোন ছিল। কাজেই সে সময় খবরাখবরের একমাত্র মাধ্যম ছিল চিঠি। পনের পয়সার পোস্টকার্ড বা পঁচিশ পয়সার ইনল্যাণ্ড লেটার। খামে ভরে চিঠি খুব কম লোকই পাঠাত। তা দাদু পোস্টকার্ডেই ভরসা রাখত।
এভাবেই দিন চলছিল।

বয়েসের সাথে সাথে দাদুর দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হতে শুরু করল। সাথে যোগ হল নতুন উপসর্গ হাতকাঁপা। লিখতে গেলে হাত কাঁপে তায় আবার ভালো করে চোখে দেখে না। ঠিক এমন সময় থেকে দাদুর গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ আমাকেই সারতে হত। কোনো কিছু পড়ে দেবার জন্য বা চিঠি লেখার জন্য। এ জন্য দাদু তার চার শিক্ষিত ছেলেদের মোটেও ভরসা করতেন না দেখে আমার খুব গর্ববোধ হতো। আমার তখন স্কুল ম্যাগজিনে ছড়া বেরিয়েছে। দু চারটে পদ্য লিখে দাদুকে শুনিয়েছি। কাজেই চিঠি লেখার জন্য আমার থেকে ভালো আর কেইই বা আছে দাদুর?

সেবার বিজয়ার সময়ই তো। দাদুর ডাক এলো। আমার সে সময় টুইশান যাবার কথা। তবুও গেলাম। দাদুর হাতে তিনটে পোস্টকার্ড। আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, নে  বিজয়ার চিঠিগুলো লিখে বাক্সে ফেলে আয়। একটা সান্তাকে, একটা আমার শালাবাবু, একটা আমার ভাই।

আমি বললাম, দাদু, এখন তো আমি পড়তে যাব। তুমি ঠিকানাগুলো বলো আমি লিখেনি। পরে আমি লিখে পোস্ট করে দেব। দাদুর বলা ঠিকানাগুলো পোস্টকার্ডে ঠিকঠাক লিখে চলে এলাম।

যাই হোক, আমি চিঠিটা পড়া শুরু করলাম। সান্তাপিসির চিঠি।  লিখেছে,
পূজনীয় বাবা ও মা , তোমাদের সাথে সম্পর্ক আমার এখানেই শেষ। ভুলে যেও তোমাদের এক মেয়ে ছিল। ছি ছি বাবা। ছি। আমার শ্বশুরমশাই আর আমার নাম দিয়ে বিজয়ার আশীর্বাদপত্র পাঠিয়ছ? শেষ পর্যন্ত তোমরা তোমাদের জামাইয়ের নামটাও ভুলে গেলে! শ্বশুরবাড়িতে লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছে। আমি মুখ তুলে তোমার জামাইয়ের দিকে তাকাতেও পারছি না। কোনোদিন আমার সাথে আর যোগাযোগ করার কোনো রকম চেষ্টা করবে না। মরে গেছে তোমাদের মেয়ে। মরে গেছে আমার বাবা মা।

এই পর্যন্ত পড়ে আমার অবস্থা তখন কি তা সহজেই অনুমেয়।কি ভয়ঙ্কর চিঠি! আমি তো রীতিমতো ভয় পেয়ে গেছি। এ আবার কি! এরকম লেখার মানেই বা কি? আরও কত কি লিখেছে সান্তাপিসি তার বিস্তার আর নাইবা করলাম। তবে কিছুক্ষনের মধ্যেই আমি বুঝে গেলাম ব্যাপারটা ঠিক কি ঘটেছে। এবং যা ঘটেছে তার দায় যে সম্পূর্ণ আমার ওপর বর্তায় তাতে সন্দেহ নেই। সর্বনাশের মূল কারণ আমিই।

আগেই বলেছি, সেদিন তাড়া থাকায় আমি সেদিন পোস্টকার্ডে ঠিকানাগুলো লিখে নিয়ে পরে বাড়িতে চিঠিগুলো লিখেছিলাম। সান্তাপিসির পোস্টকার্ডের ঠিকানায় জামাইয়ের নামের পর প্রযত্নে শ্বশুরের নাম ছিল।
তা সান্তাপিসির চিঠি লিখতে বসে জামাই শ্বশুরের নাম গুলিয়ে ফেলেছি। শুরু করেছি এইভাবে।

স্নেহের সান্তা ও নিবারণ, তোমরা প্রথমে আমার বিজয়ার আশীর্বাদ গ্রহণ করিবে। আমার বৈবাহিক মহাশয়কে আমার নমস্কার জানাইবে....ইত্যাদি ইত্যাদি 

এখানে নিবারণ হচ্ছে শান্তার শ্বশুর। একদম কেলোর কীর্তি অবস্থা। নিজের গালে নিজের চড় মারতে ইচ্ছে করছে। আমার হাতে এত বড় ভুল!
দাদু দেখি আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে।

যাই হোক, সে যাত্রায় অনেক কাঠখর পুড়িয়ে দাদু দিদাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে সান্তাপিসিকে সমস্ত বিষয় খোলসা করে ক্ষমা চেয়ে এক বিস্তারিত পত্র লিখে সামাল দিয়েছিলাম। সেবার খামেই চিঠি লিখতে হয়েছিল।                     

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri