চরণধ্বনি শুনি তব/শ্রাবণী সেন
চরণধ্বনি শুনি তব
শ্রাবণী সেন
এবারের পুজোর সপ্তমীর সকাল তখন! ভোর না হতে হতে স্নান সেরে নতুন শাড়ি পরে দ্রুত হাতে সারাদিনের মত তৈরি হয়ে দৌড় পায়ে সিঁড়ি দিয়ে নেবে আসি, উঠোন পেরিয়ে আমাদের দুর্গা দালানে,যেখানে ভুবনমোহিনী মা দুর্গা আজ থেকে চারদিন আমাদের ঘরে পুজো নেবেন। দালানে প্রণাম করে পাশে ঠাকুর ঘরের দরজা খুলে ঢুকি! দ্রুত হাতে নৈবেদ্য সাজানোর পালা! আজ সপ্তমী আজ অনেক কাজ !
বিল্ববাসিনী দেবী পুজো হয় প্রথমেই। ঠাকুর মশাইরা এসে গেছেন, আমরা পুজোর উপাচার সহ বেলতলায় ছুটি, ঢাকি দাদা ঢাক বাজান, শাঁখের শব্দে বুকে কেমন যেন এক অনুরণন হয়।
এবার নবপত্রিকা স্নান করিয়ে, মঙ্গলঘট ভরার পালা, বাড়ির ছেলেরাও স্নান করে চলেছেন গ্রামের পথ ধরে আমাদের বাড়ির পাস দিয়ে পায়ে পায়ে বোসপুকুরের দিকে! আদিগন্ত সবুজে মোড়া ধানক্ষেত, ধানের শীষে পাক ধরা শুরু হয়েছে, মাঝের আল পথ ধরে আমরা চলেছি পুকুরের দিকে। ঢাক বাজছে, শঙ্খধ্বনিতে মিশছে উলুধ্বনি,কাঁসর বাজছে, আমাদের কারো হাতে বরণডালা, কারো হাতে মঙ্গলঘট। কলা গাছ, ঘট নিয়ে চলেছেন বাড়ির ছেলেরা।
মনের ভেতর যেন আনন্দধ্বনি বেজে উঠছে বাতাসে ভেসে আসা শিউলি গন্ধের মতো, তেমনি অস্ফুট কিন্তু প্রাণহরা!
আমরা জল টলটল বোসপুকুরের কাছে চলে এসেছি... অল্পদিন আগে বান এসেছিল তাই পুকুর কানায় কানায়!
পুকুরের দিকে তাকিয়ে চোখ সরেনা! এ কী দেখলাম.... পুকুরজুড়ে ফুটে আছে শালুকফুলের রাশি, মায়ের মুখের হাসিটির মত তার শ্বেতশুভ্র রূপ। যে আনন্দ মনে মনে অস্ফুট ছিল দূরাগত শিউলি গন্ধের মতো তা যেন উজ্জ্বল আর উদ্ভাসিত করল চরাচর। আনন্দে উদ্বেল হল আমার মন! মা এসেছেন, তাঁর আনন্দময়ী হাস্যমধুর রূপটি দেখালেন আমায় ওই পুকুরভরা শালুক ফুলের রূপাভায়!
"আমার নয়ন ভুলানো এলে.... আমি কি হেরিলাম নয়ন মেলে...."।
তপ্ত হৃদয়ে যেন সুশীতল চন্দনের প্রলেপ পড়ল। হৃদয় স্পন্দিত হয়ে বলছে - কল্যাণ কর মা.... ভালো রেখো সবাইকে.... তুমি শরণময়ী.... অসুরদলনী... বরদা.... অভয়া!
নবপত্রিকা স্নান হল, পূর্ণ কলস কাঁখে তুলে দিল ছোড়দা
পূর্ণ হৃদয়ে আমরা ঘরে ফেরার পথ ধরলাম। ফিরে গিয়েই তো ঠাকুরমশাইরা পুজোয় বসবেন।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴