সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
04-December,2022 - Sunday ✍️ By- ধীরাজ কুমার রায় 279

ঘন্টাটা বাধঁতে হবে/ধীরাজ কুমার রায়

ঘন্টাটা বাধঁতে হবে 
ধীরাজ কুমার রায় 
=============


         অতসী জানে - বেড়ালের গলায় ঘন্টাটা তাকেই বাধঁতে হবে। ষোলো বছর সংখ্যায় কম কিসে ? একযুগ তো কবেই পেরিয়ে গেছে , তাহলে! এতদিনে শ্রাদ্ধ-শান্তি করে ফেলা উচিৎ ছিল ছেলেটার। প্রমিলা বৌদিও সধবা সেজে কি প্রমাণ  করতে চাইছে সমাজে? পিন্ড দান, দশজনকে খাওয়ানো - শাস্ত্রীয় বিধানগুলো না মানতে চাইলেই হবে? অতসী কোমর বেঁধে এসেছে আজ। প্রমিলা বৌদিকে বোঝাতে হবে - মদনদা আর ফিরবে না। এখনো শাখা-পোলা পরে সধবা সাজা ঘোরতর অধর্ম যে! আড়ালে-আবডালে পাঁচজন পাঁচকথা বলে কূটকচালি করে। সামনাসামনি বলতেও ছাড়ে না সুযোগ পেলে ! অন্তত শাস্ত্রীয় বিধি মেনে পারলৌকিক কাজকর্ম করে নিলে - মুখরক্ষা হয় | অতসী কমদিন আগলে রাখেনি প্রমিলা বৌদিকে ! সব্বার সঙ্গে পায়ে-পা দিয়ে ঝগড়া করেছে, ওর কষ্টের স্বপক্ষে যুক্তি দিয়েছে | মদনদার চার চারটে সন্তানের মা হয়েছে কি এমনি এমনি? ভালোবাসা না থাকলে শুধু একসঙ্গে সংসার করলেই বুঝি বউ হওয়া যায়? সাতপাক আর পবিত্র অগ্নি সাক্ষী করে সাত জন্মের প্রতিজ্ঞা মিথ্যে হবে কিকরে ? একা কত্তো কিছু ভাবে প্রমিলা বৌদিকে নিয়ে | আজ না হয় ছেলেটা বড়ো হয়েছে , যাহোক করে সংসারের হাল ধরেছে | কিন্তু ষোলো বছর আগে মদনদা নিখোঁজ হওয়ার সময় বড়ো মেয়ে মনিকা বাদে বাকি তিন জনেই তো নাবালক তখনও! মাতব্বরদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বামীকে খুঁজে আনার তদবির করা, থানা-পুলিশের ঝক্কি সামলেছে একা হাতে। যেই না বারোটা বছর পার হল ; অমনি আত্মীয়-স্বজন পাড়া-পড়শি বলতে শুরু করে দিল এমন কথা ! তাও অতসীকেই বলতে হবে এমন নিদারুণ কথাগুলো? শ্রাদ্ধ-শান্তি হওয়ার পরে যদি মদনদা ফিরে আসে? বিধবা প্রমিলা বৌদি কি জবাব দেবে তখন? হায়রে সমাজ !
                    প্রমিলা বৌদি চাইলে নিজের মতো করে বাঁচতে পারবে না কেনো ? সমাজের তাবড় মাতব্বররা তো প্রমাণ করতে পারলি না - মানুষটা সত্যি মরেছে কিনা ! তাহলে তার সহধর্মিনী নিজের সোহাগটুকু বাঁচিয়ে রাখতে গেলেই যত দোষের ! আচ্ছা শাস্ত্র কি পারবে প্রমিলা বৌদির একা থাকার দিনগুলো ফিরে দিতে? পারবে না তো ! তবে আগ বাড়িয়ে কষ্ট দেওয়ার মানে কি? অতসী দেখেছে ,  সোহাগ উজাড় হয়ে যাওয়া এই মেয়ে-মানুষটার কান্না চেপে যাওয়ার মরিয়া চেষ্টা ! কথায়-কথায় কথার খেই হারিয়ে ফেলত প্রথম প্রথম। গল্প করতে করতে বলে উঠত , "অতসী যাই এবার। তোমার দাদা কাজ থেকে এসে আমাকে বাড়িতে না পেলে -খুব রাগ করবে!"
      - সোয়ামির চিন্তায় চিন্তায় মাথার ব্যামো হয়েছে বলে গালমন্দ করতে ছাড়েনি কেউ। এটা কি শুধুই ঘর করা আর লোক দেখানো? ভালোবাসা নয়? কই কেউ তো কোনোদিন খোঁজ নেয়নি বাবা ছাড়া কিভাবে মানুষ হচ্ছে ছেলেমেয়েগুলো ! ছাগলে জিরেত খেয়েছে কিনা - তাও সোয়ামি খোয়ানোর খোঁটা শুনতে হবে প্রমিলা বৌদিকে? এ কেমন ন্যায় বিচার গো তোমাদের ! একটুখানি লাল সিঁদুর আর হাতের নোয়া - শাখা পোলাতেই মানুষের ভালোবাসার বিচার করো তোমরা ? বাচ্চাগুলোর রোগ-বালাইয়ের রাতগুলো এই মেয়েমানুষটা একা একা কিভাবে পার করেছে খবর রেখেছে তোমাদের শাস্ত্র ! রাখেনি | ওষুধ-পথ্যি এলো কিনা , পুজো-মোচ্ছবে জামা-কাপড় পেলো কিনা - খবর নিয়েছো কেউ? মেয়ে দু'টো সোমত্ত হলে - ঘরবর দেখে পাত্রস্থ করার সময় সকলে মিলে পাত পেড়ে খেয়ে গেলে; খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে দাঁতের ফাঁকের মাংস বার করার সময় নিন্দামন্দ করলে। ওটা আর একটু এইরকম করলে ভালো হতো , মাংসটা সেদ্ধ কম হয়েছে ! পরিমাণে আরও বেশি দেওয়া উচিৎ ছিল - ইত্যাদি ইত্যাদি। আরে বাবা - তোমাদের মুখ এবং পেট ছাড়া মন বলতে কি  কিচ্ছু নেই? একটু হাসি-মস্করা করলে স্বভাব চরিত্তির নিয়ে আঙুল তুলতে একটুও বাঁধে না তোমাদের ! মেয়ে-মানুষের চরিত্র কি কাঁচের চুড়ির মতো, এতোই ঠুনকো ! সম্মান দিতে জানো না - আলাদা কথা, তাই বলে অপমান করার অধিকার কে দিলো তোমাদের? 
                      অতসী ভয় পায় ছেলে মেয়ে গুলোকে নিয়ে ! ওরা যদি জানতে চায় , "অতসী পিসি, এতদিন পর তুমি এনিয়ে নাক গলাচ্ছ কেন? " কি বলবে তখন ? মূর্খ ইঁদুরটাই তো সাত-পাঁচ না ভেবে ঘন্টা বাধঁতে যায় বেড়ালের গলায় ! বেড়াল তো নিজের গলা লম্বা করে এগোয় নাকো ! সে কি করে সিদ্ধ করবে, পাড়ার আর পাঁচটা বউয়ের মতো দেখে না প্রমিলা বৌদিকে ! চোখের সামনে সোয়ামি মরে যাওয়া আর ভেবে নিয়ে বিধবা হওয়া কি এক হল? সত্যি সত্যি শোক পেয়ে শাখা-নোয়া ভেঙে ফেলায় কারুর কোনো আপত্তি থাকে না। ইস্কুলের বার্ষিক খেলায় 'যেমন খুশি সাজো'র মতন তো প্রমিলা বৌদিকে হঠাৎ বিধবা সাজতে বলা যায় না ! আর কেউ পারলেও অতসী পারবে না। তার অতিবড়ো শত্তুরকেও যেন আর কোনোদিন  বলতে নাহয় এমন কষ্টের কথাটি ! দিল্লি তো এখানকার কতো ছেলে হামেশাই যায়, দু'দিন দুই রাত্তিরের নাকি পথ ! কেরালা, মুম্বাই নাকি একটু বেশি দূরে। তা সেখানেও তো কাজে যাচ্ছে ছেলেপেলে গুলো। মদনদা সেই যে গেল; ফিরল নাকো ! অতসী কত্ত ছেলেকে বলে রেখেছে , "বাবা, দেখিস নারে কোনো খ্যাপা পাগল যদি কোনোদিন প্রমিলা বৌদি বা বাচ্চাগুলোর নাম ধরে খ্যাপামি করে একটিবার খবর দিস বাপ্ ! " নিজের মোবাইল নম্বরটা জোর করে হাতে ধরিয়ে তবে ছেড়েছে। কিন্তু ওই সার। কেউ কোনো ফোন করেনি আজ পর্যন্ত। 
                   আজব কতকিছুই তো ঘটে রোজ। অতসী ঠাকুরের কাছে মানত করেছে কতদিন। "ঠাকুর ! তুমি তো অন্তর্যামী , প্রমিলা বৌদির কষ্ট তো দেখতে পাচ্ছ তুমিও। একা মেয়ে মানুষটার দিকে মুখ তুলে চাও ভগবান; মদনদাকে ফেরৎ দাও তুমি !" ভগবান শোনেননি। আর কিভাবে মানত করলে ঠাকুর অবধি কথাগুলো পৌঁছনো যায়, জানে না অতসী। ভগবানের উপর রাগ হয় খুব ! দেখা হলে দু'কথা শুনিয়ে দিতে পারত সে। গরিব - দুঃখীদের নালিশ কে শুনবে তবে? নিজেকে বড্ড অসহায় লাগে অতসীর। এরকমটা তো তার সঙ্গেও হতে পারত ! ভাবলে গা-টা রি রি করে ওঠে কেমনতর ! দরকার নেই বাবা বিদেশ-বিভুঁইয়ে গিয়ে টাকা কামানোর ! ঢের ভালো বিবেকের বাবার চাউমিনের দোকান। নিজেও দু'বেলা হাতে হাত লাগাতে পারছে মানুষটার সঙ্গে। পয়সা কম তো কিহয়েছে? রাগ করুক, মান করুক - চোখের সামনে তো আছে ! মাঝে বাই ধরেছিলো কেরালা যাবে বলে। বাগড়া দিয়েছে অতসী। দু'দিন কথা পর্যন্ত বলেনি ভালো করে ! শেষমেশ অবশ্যি ভুতটা নেমেছে মাথা থেকে। চাউমিন-দোকানে দিব্যি চলে যাচ্ছে সংসার। এমনি কি লোকে বলে, যার যত আছে - তার ততো কুলোয় না। চাওয়া না চাওয়া সবটাই নিজের কাছে। ইচ্ছে থাকলে উপায় একটা ঠিক হয়। প্রমিলা বৌদিও এমনি কোনো উপায়ে আটকাতে পারত মদনদাকে ! সব্বাই যে অতসীর মতন চিন্তা ভাবনা করে উপায় বার করবে তাও ষোলো-সতেরো বছর আগে; সেটাই বা সম্ভব কিভাবে ? বোঝে সে |
                 কিন্তু ধম্মো-কম্মো, নিয়ম-নীতি, আচার-বিচার তো সাতপুরুষের রেওয়াজ ! মুখে যাই বলি না কেন - শেষবেলা না মেনে উপায় নেই | বেড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধব বলেই তো চট করে বাঁধা যায়না ! আট-ঘাট বেঁধে নামতে হবে তাকে। প্রমিলা বৌদির উঠোনে দাঁড়িয়ে শাড়ির আঁচলটা কোমরে শক্ত করে গুঁজে নেয় অতসী | 

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri